মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকন্ঞ্জি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
৮ মাসে উদ্ধার ৪ কোটি টাকার মাদক
দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানা এলাকায় গত আট মাসে মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। ভারত সীমান্ত ঘেষা হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য কসবা থানা এলাকা একটি অন্যতম জোন। এ এলাকা দিয়ে মাদক পাচার করতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি অন্যান্য বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্য-নতুন কায়দা আবিস্কারসহ প্রায় প্রতিবারই তারা নতুন রুট ব্যবহার করে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই মাদক ব্যবসায়ীদের নিত্যনতুন কৌশলকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এমন সফলতা পেয়েছে কসবা থানা পুলিশ। যার নেপথ্যে রয়েছেন কসবা থানার অফিসার ইনজচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পিপিএম। একই সঙ্গে থানাকে দালাল-হয়রানিমুক্ত করতে নানা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। ফলে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে হয়রানিমুক্ত সেবা বাড়ছে। এতে কসবা থানা সম্পর্কেও জনগণের মাঝে এসেছে ইতিবাচক মনোভাব। পাশাপাশি আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়নসহ সীমান্তবর্তী থানায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় সম্প্রতি জেলা পুলিশ থেকেও অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ০১.০৭.২০২২ তারিখে কসবা থানায় অফিসার ইনচার্জ পদে যোগদান করে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মাদকের বিস্তারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা, মাদক ব্যবসায়ী-সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ নানাভাবে তথ্য সংগ্রহের পর পর্যালোচনা শেষে একের পর এক সাড়াশি অভিযান পরিচালতি হয়েছে। গেল আট মাসে গাঁজা, ইয়াবা, বিদেশী মদ, ফেন্সিডিলসহ ৪ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ২শ’ টাকার বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার ও মাদক পাচারে জড়িত ২২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন ও সহকারি পুলিশ সুপার (কসবা সার্কেল) মোঃ দেলোয়ার হোসেন মাদক উদ্ধারে সঠিক ও সময়োপযোগী দিক-নির্দেশনা, তদারকিসহ জটিল বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। অভিজ্ঞদের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় বাংলাদেশ সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে কসবা থানা পুলিশ।
জানা গেছে, ভারত সীমান্তবর্তী এই এলাকায় কসবা থানা পুলিশের বিশেষ তৎপরতায় নিয়ন্ত্রণ রয়েছে প্রায় সকল প্রকার অপরাধ কর্মকাণ্ড। মাদক পাচাররোধে আভিযানিক তৎপরতায় মাদক ব্যবসায়ীরা প্রায়ই নতুন নতুন রুটে মাদক পাচারের চেষ্টা করছেন। এসব ঠেকাতে তিনি থানার অফিসারগণসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দিনের পর দিন আলোচনা-পর্যালোচনা করেছেন। নিত্য-নতুন রুটে মাদক পাচার রোধে তিনি ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকরা মাত্রই মাদক জব্দ হয়ে যাচ্ছে পুলিশের হাতে।
থানা পুলিশ জানায়, ২০২২ সনের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি- এই আট মাসে পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে ৪০ মণ গাঁজা, ১৫ হাজার ২শ’ ৭৬ পিছ ইয়াবা, ফেনসিডিল ১শ’ ৩৭ বোতল, স্কফ ৭শ’ ১২ বোতল, হুইস্কি ১৭ বোতল, ১শ’ ৫৩ বোতল বিয়ার, ৩শ’ ২৫ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ২শ’ টাকা। এসব অভিযানকালে ২২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকামূল্যের মাদক উদ্ধার করে তিনি এ অঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ীদের আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন।
এদিকে কসবা থানার আওতাধীন প্রতিটি গ্রামেই মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা দুর্গ গড়ে তুলতে কাজ করছেন কসবা পুলিশের এ কর্মকর্তা। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ১০টি ইউনিয়নেই সচেতনতামূলক আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অংশ নিচ্ছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। সর্বগ্রাসী মাদক রুখতে সর্বাত্মক সামাজিক আন্দোলন-সচেতনতা গড়ে তুলতে যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, তার প্রশংসাও করছে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাঁরা পাশে থাকে জনগণকে সচেতন মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (পিপিএম) বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই সীমান্তবর্তী থানা হওয়ায় এখানে মাদককে অঙ্কুরেই বিনাশ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন- ছড়িয়ে পড়ার আগেই যদি এগুলো (মাদক) উদ্ধার করা যায় এবং এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা যায়, তাহলে খুব বেশি দিন লাগবে না ‘মাদক’ নামক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে।
তিনি বলেন- দেশে সংঘটিত বেশির ভাগ অপরাধের পেছনে রয়েছে মাদক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তর মাদক রোধ-উদ্ধারে কাজ করছে। তিনি মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশ জনতা ভাই ভাই হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রতিটি পরিবারে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
Discussion about this post