বাধন রায়, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন কৃষককে উদ্ভুদ্ধ করে বর্ষা মৌসুমে কৃষি গবেষণায় উদ্ভাবিত বারি-০২ জাতের তরমুজের চাষ হয়েছে। এই তরমুজের ভিতরের অংশটি হলুদ রঙের হয়। এর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৪ মে.টন। এই মৌসুমে এই জতের তরমুজের চাষ করে কৃষকরা ভালো দাম পাবে বলে আশা করছে। তবে এই চাষাবাদে কৃষকদেরকে নিবিরভাবে তদারকি করতে হয়। প্রতিটি গাছ থেকে ৩ থেকে ৪টি করে তরমুজের উৎপাদন হয় এবং বর্ষা মৌসুমে এই চাষ হওয়ায় তরমুজ ঝাকা বানিয়ে ঝুলিয়ে চাষ করতে হয়। স্বাভাবিক তরমুজ চাষে কৃষকরা চরাঞ্চলের ক্ষেতে বীজ রোপণ করে এবং মাটির উপরেই গাছ থেকে ফলন বের হয়। এই অসময়ে চাষ হওয়া প্রতিটি তরমুজের গড় ওজন ৪ কেজি। ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায় থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে ব্যাপারীরা কেনার জন্য কৃষকের কাছে যোগাযোগ করে চলেছে।
নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলি জানিয়েছেন, এই চাষ করে কৃষকরা উচ্চ মূল্যের ফসল হিসেবে এর আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মানপাশা গ্রামের উচ্চশিক্ষিত যুবক মোঃ বদরুল আলম জানান, সে তার বাড়ির কাছে রাস্তার পাশে ১২০ ফিট জুড়ে ৭২টি বারি-০২ জাতের তরমুজের বীজ রোপন করেন। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে রোপণ করা এই বীজ থেকে জুলাই মাসের শেষে এসে ফল উত্তোলনের পর্যায়ে এসেছে। মোঃ বদরুল আলম বরিশাল বিএম কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করে ৩ বছর ধরে চাকরির ধান্দায় না ঘুরে কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করে। ইতিমধ্যেই সে তার এলাকার লিডিং ফামার্র হিসেবে কৃষি বিভাগের তালিকায় রয়েছে।
সে আরও জানান, তার এই চাষাবাদ থেকে ২ শতাধিক তরমুজের উৎপাদন হয়েছে এবং এদের গড় ওজন ৪ কেজি। ইতিমধ্যেই তার ক্ষেত থেকে তরমুজ কেনার জন্য কেজি প্রতি ৪৫ টাকা দরে তরমুজ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ফল ব্যাবসায়ীরা। তার এই চাষাবাদে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং সে আশা করছে কমপক্ষে মাঠ পর্যায় থেকে এই তরমুজ বিক্রি করে ৩৫ হাজার টাকা পাবেন। তিনি এই চাষাবাদ করে নিজেকে সফল চাষি বলে মনে করছেন। বদরুল আলমের তরমুজের পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় ড্রাগন ও রাম্বুটান ফলের চাষ শুরু করেছে এবং নিজেই কেচোঁ দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করেন।
এই এলাকার কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহ্ জালাল জানান, মোঃ বদরুল আলম এই এলাকার লিডিং কৃষক এবং কৃষি গবেষনায় উদ্ভাবিত বারি-০২ জাতের তরমুজ চাষ করেছে। এই চাষের জন্য কৃষককে নিবিড়ভাবে এর পরিচর্যা করতে হয়েছে এবং এই জাতীয় নতুন উদ্ভাবিত তরমুজের চাষ প্রথম হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মতো তিনিও আনন্দিত।
একই এলাকার যুবক মেহেদী হাসান জানান, সে সহ এলাকার তার বয়সি যুবকরা প্রতিদিনই বদরুল আলমের তরমুজের চাষ দেখতে আসেন এবং তার সফলতা দেখে আগামীতে তারাও এই ফসলের চাষ করবেন। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলি জানান, তার এই উপজেলায় প্রথমবারের মতো এই নতুন জাতের তরমুজের চাষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ৫ হেক্টরে আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে এবং কৃষকরা এই আবাদ থেকে ভালো দাম পাবেন ও আগামীতেও কৃষকরা আরও বেশি পরিমান জমিতে এর আবাদ সম্প্রসারণ করবেন। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ সকল ধরনের সহযোগীতা দিচ্ছে।
Discussion about this post