ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা উদীচীর ডাকা অস্বচ্ছল শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সরকারি সহায়তার অনুদান তালিকা সংশোধন ও সংগঠন অন্তর্ভভুক্তকরণের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ প্রত্যাক্ষাণ করেছে জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রকৃত সাংস্কৃতিক কর্মী এবং কলাকুশলীরা।
শনিবার দুপুরে সংগঠনটির সভাপতি সেকারা বেগমের নেতৃত্বে শহরের চৌরাস্তায় কিছু অশিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা উদীচির মানববন্ধন। যেখানে জেলার প্রকৃত সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিলোনা।
এরপূর্বে একই ইস্যুতে শুক্রবার শহরের সুনামধন্য কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীদের এই মানববন্ধনে অংশ গ্রহণের আহবান ও অনুরোধ জানানো হলেও সকলেই তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে শনিবার অপরিচি দুই একটি সংগঠনের কয়েক জনকে নিয়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান শহরের অপর পক্ষ্যের শিল্পী ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
মানববন্ধন প্রত্যাখ্যান করা জেলার খ্যাতিমান সংগঠন ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সদস্য শাপলা নাট্যগোষ্ঠির সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেন জানান, উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করার জন্য জেলা উদীচী তাকে ও তার সংগঠনকে মানববন্ধনে অংশ নিতে আহবান জানালে তিনি তা প্রত্যাক্ষাণ করেন। তিনি আরো বলেন, এই মানববন্ধনে কোন পেশাদার ও সৌখিন শিল্পী অংশ গ্রহণ করে নাই। উদীচী কমিউনিস্ট পার্টির কিছু লোকজনদের সাথে এই মানববন্ধন করেছে।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সদস্য নিশ্চিন্তপুর থিয়েটারের সভাপতি রাশেদুল আলম লিটন জানান, ঠাকুরগাঁও উদীচী বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের বাৎসরিক অনুদান পেয়ে থাকলেও দেখা যায় তারা সরকারের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের ভাবমূর্তী নষ্টকরে যা খুবই দু:খজনক। উদীচী যেহুতু একটি রাজনৈতিক সংগঠনের হয়ে কাজ করে তাই তাদের এই মানববন্ধনে নিশ্চিন্তপুর থিয়েটারের কোন শিল্পী অংশগ্রহন করে নাই।
গণসংগীত মঞ্চের সভাপতি ও শহরের প্রবীণ সংগীত শিল্পী মোজাম্মেল হক বাবলু জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে উদীচীর নিজস্ব কোন শিল্পী নেই, ভাড়া করা শিল্পীনিয়ে তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে থাকে। তারা যে এজেন্ডা নিয়ে এই মানববন্ধন করেছে তা ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। প্রকৃত শিল্পীদের অশিল্পী বানিয়ে তারা কি প্রমাণ করতে চেয়েছে তা তার জানা নেই। ঠাকুরগাঁওয়ের ৯৫ ভাগ শিল্পী তাদের এই কর্মসুচি প্রত্যাক্ষান করেছে।
সপ্তধ্বনী সংগীত বিদ্যালয়ের সভাপতি আবুল হোসেন জানান, ঢাল নেই , তলোয়ার নেই নিধি রাম সর্দার। ঠাকুরগাঁওয়ের উদীচী নিজেদের এমনটাই মনে করে। যে সংগঠনে নিজেদের তৈরী কোন শিল্পী নেই তারা অসৎ উদ্দেশ্যে শহরের অন্য সংগঠন ও শিল্পীদের নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলছে, যা নিন্দনিয়।
সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি অনুপম মনি জানান, তিনি উদীচীর এই কর্মসুচির পক্ষে ছিলেন না এবং অংশগ্রহণও করেন নাই। সমস্যা থাকলে সমাধানের অনেক উপায়ও আছে। উদীচীর যে দাবী ছিলো তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব ছিলো, যা রাস্তায় দাড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর মতো বিষয় নয়।
জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ জাকির হোেেসন জানান, জেলা শিল্পকালা একাডেমি বা জেলা প্রশাসন থেকে প্রকৃত শিল্পীদের তালিকা প্রেরণ করা হয়েছিল। একটি চক্র বর্তমান সরকারের এমন মহৎ উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে, যা দুঃখজনক। উদীচীর কর্মসুচিতে ঠাকুরগাঁওয়ের শিল্পীদের অনুপস্থিতিই বলে দেয় তা উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠন ও অস্বচ্ছল শিল্পীর যে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে সেখানে কোন অশিল্পীর নাম ছিলোনা। প্রেরিত তালিকার বাইরে যে দুএকজন অশিল্পীদের নাম তালিকায় এসেছে তা মন্ত্রনালয় থেকেই দেয়া হয়েছে, যা জেলা প্রশাসন অবগত নয়। এছাড়া যে দুজন মৃত ব্যাক্তির ভাতা এসেছিলো তা সরকারি চালানের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাই মৃত ব্যাক্তির টাকা অন্য কেউ উত্তোলনের প্রশ্নই অযৌক্তিক। তবে ভবিষ্যতে আরো যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকা প্রেরণ করা হবে।
Discussion about this post