ক্লাস শেষ করে আলেক বিটন বাড়ি ফিরছে সাথে তার বন্ধু মনোরঞ্জন কিটংও আছে । হ্যাভি মানুষ বটে মনোরঞ্জন । ভদ্র নম্র । পথে দেখা হলে সবাইকে সালাম কিংবা আদাব জানায়, এর বেশি কেউ কখনো তার মুখ থেকে অন্য কিছু শোনে নাই, যেমন ধরুন ভালো আছেন কী না কিংবা কোথায় যাচ্ছেন ইত্যাদি । শুধু মাত্র তার মুখ থেকে বুলবুলি পাখির মুখস্ত বুলির মত দুইটি শব্দ বের হয় আসসালামু অলাইকুম কিংবা নমস্কার । হয়তো অন্য কোন শব্দ নতুন করে বের হতো যদি এই বাংলায় হিন্দু মুসলিম ছাড়া অন্য কোন জাতের মানুষের বসবাস থাকতো ।
হয়তো অন্য কোন জাত আছে এই বাংলার ভূমিতে, যে জাতের হদিস তার সম্মুখে পড়ে না । তাই সালাম কিংবা আদাব ছাড়া অন্য কোন সম্ভাষণ তার মুখ থেকে বের হয় না।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে মনোরঞ্জন । ক্লাস শেষে আলেক বিটনের সাথে বাড়ি ফিরছে । বন্ধু মহলে আলেক বিটন এক নৈরাজ্য সৃষ্টি কারি উচ্ছৃঙ্খল দানব নামে পরিচিত কিন্তু মনোরঞ্জন তার বিপরীত । সবাই লিটল বুদ্ধিজীবী নামে ডাকে মনোরঞ্জনকে, কারণ মনোরঞ্জন টিউশনি করে টাকা ইনকাম করে নিজ খরচে চলে । বুদ্ধিজীবী তো তাঁরা; যাঁরা বুদ্ধি খরচ করে ইনকাম করে, আর টিউশনি করতে তো বুদ্ধি লাগে তাই হয়তো ছোট কিংবা বড়দের মহলে বুদ্ধিজীবি মনোরঞ্জন নামে পরিচিত সে এখন।
ক্লাস শেষ করে একসাথে বাড়ি ফিরছে মনোরঞ্জন এবং আলেক । আলেকে মনের মধ্যে হঠাৎ অনেক রাগ । গোখরো সাপের মত ফণি তুলে আছে । মনে হচ্ছে এখন যদি তার কাঙ্খিত বস্তুকে পেতো তাহলে গোখরোর মত ছোবল দিয়ে বিষ ছড়িয়ে দিত ঐ আস্ত শরীরে । রাগের কারণ তার বাবা তাকে নতুন বছর উপলক্ষে নতুন কিছু কিনে দিতে পারে নাই ।
এই তো সামীর সিকদার, তার পিতার কাছে থেকে নতুন বছরের জন্য একটি নতুন ড্রেস এবং ল্যাপ্টপ পেয়েছে । হালিম বচক পেয়েছে নতুন সাইকেল । হেবকিবলিক পেয়েছে নতুন নতুন অনেক কিছু ।
জানিস মনোরঞ্জন আমার খুব খারাপ লাগে, ওরা কত কিছুই পেলো, আর আমার বাবা আমাকে কিছুই দিলো না; আবার রেজাল্টের খবর নেয়, নতুন নতুন জিনিস না পেলে কি রেজাল্ট ভালো হয় বল মনোরঞ্জন, ইচ্ছে করে বাবাকে না ……………
এইবার মনোরঞ্জনের বুঝতে বাকি নাই আলেক বিটন তার বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করবে, তাই সে ধমকের সাথে বাঘের মত গর্জে উঠে বললো, “থাম আলেক বিটন । তুইও একদিন বাবা হবি। বাবাকে হুদাই গালাগালি কেন করছিস? তোর বাবাকে ধন্যবাদ দে, সে বৈধ পথে ইনকাম করে তোদের খাওয়াচ্ছে, যাদের বাবার কথা বললি, ওদের বাবা অবৈধ ইনকাম করে, সবাই কিন্তু খারাপ চোখে দেখে ওদের । এ কথা মনে রাখিস, আলেক ।”
-“তবুও বন্ধু সখ আল্লাদ …………”এবার মনোরঞ্জন কঠিন গলায় বললো,” রাখ তোর সখ আল্লাদ। ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই সুখ । এ কথা ভুলে গেলে চলবে না । সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দে, আমরা তাদের চেয়ে সুখে আছি, যারা এখনো না খেয়ে মারা যাচ্ছে । আফ্রিকার মানুষগুলোকে দেখ, কত কষ্টে থাকে তারা ।”
-“আচ্ছা বুদ্ধিজীবী মনোরঞ্জন সব ঠিক আছে, তবে আমি বাবা মাকে গালাগালি করি যাতে তারা আমাকে ভয় পায়……….”
-“What nonsense! তুই কী বলছিস তোর মাথা ঠিক আছে আলেক বিটন? বাবা-মা আমাদের গুরুজন । গুরুজনদের গালাগালি করলে সৃষ্টিকর্তা অসন্তুষ্ট হয়, প্রকৃতি তার থাকে সাক্ষী । দেখিস নাই, মিরাজ হামিদ তার বাবা-মাকে খুব গালাগালি করতো বলে, মিরাজ হামিদের ছেলেরাও তাকে গালাগালি করে । পৃথিবীতে বাবা-মাকে গালাগালি করার অপরাধ পৃথিবী থেকেই ভোগ করে যেতে হয় । তুই আলেক বিটন একটু খেয়াল করে দেখ, যারা বাবা-মাকে গালাগালি করে, তাদের সন্তানেরাও তাকে গালাগালি করে । বাবা-মাকে গালাগালি কিংবা কষ্ট দিলে তার জীবনে কখনো সুখ আসে না । তারা কখনো সুখি কিংবা সফলতার মুখ দেখতে পায় না ।”
-“সত্যি বলছিস মনোরঞ্জন?”
-“সত্যি বলছি আলেক, শত পার্সেন্ট সত্যি কথা । দেখ আলেক তুইও কিন্তু বাবা হবি একদিন । এখন সময় ভুল সংশোধন করে নে”
কথা গুলো আলেক বিটনের চিন্তার আলোক রেখায় কিঞ্চিত বাধা সৃষ্টি করলো । হয়তো মনে মনে সে শপথ পাঠ করছে আর কখনো বাবাকে অহেতুক গালাগালি করবো না। আমিও একদিন বাবা হবো, তখন কী হবে ইত্যাদি ইত্যাদি?
লেখকঃ শাবলু শাহাবউদ্দিন
শিক্ষার্থী
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চতুর্থ বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ)
Discussion about this post