বাধন রায়, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি সদর উপজেলার বেশাইন খান গ্রামের কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম খাজনা পরিশোধের জন্য রবিবার বেলা ৩ টার দিকে যান কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। প্রবেশ পথের গেট তালাবদ্ধ দেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। একঘণ্টা পরেও ওই অফিসের কাউকে না পেয়ে ক্ষুব্দ হন তিনি। পাশের এক দোকানীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন দুপুরের পরে ভূমি অফিস বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়ি চলে যান।
কোন কাজ থাকলে ওই দোকানী তাকে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর একটার মধ্যে আসতে পরামর্শ দেন। এই অফিসে একজন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, একজন উপ সহকারী কর্মকর্তা ও দুইজন অফিস সহকারী রয়েছেন।
সারাদিন মাঠে কাজ করা ক্লান্ত এ কৃষক বলেন, আমি সকালে জমিতে বোরোর চারা রোপন করেছি। চিন্তা করলাম দুপুরে ভূমি অফিসে গিয়ে জমির খজিনা দিয়ে আসবো। কিন্তু অফিসে কাউকে পেলাম না। সবাই দুপুরের মধ্যেই বাড়ি চলে যায়। এমনকি তাঁর মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ করে রেখেছেন।
শুধু কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিসই নয় ঝালকাঠি জেলার ৩২টি ইউনিয়নের ভূমি অফিসগুলো দুপুরের পরে বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার), উপ সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সকালে অফিসে আসেনও দেরি করে আবার কর্মস্থল ত্যাগ করেন দুপুরে। অথচ সরকারি বিধান অনুযায়ী তাদের সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে এসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকার কথা রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনা আদায়, নামজারি কার্যক্রম, খাস জমি উদ্ধার, হাট-বাজারের চান্দিনা ভিটির লিজমানি আদায়, অর্পিত সম্পত্তির লিজমানি আদায়, দেওয়ানী মামলার প্রতিবেদন ও ১৪৪ ধারার রিপোর্টসহ নানা কাজ রয়েছে। এসব কাজ করার জন্য একজন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার), উপ সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল পঁাচটা পর্যন্ত তাদের নিয়মিত অফিসে থাকার বিধান থাকলেও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই আসেন ১০টার পরে। অল্প সময় কাজ সেরেই দুপুরে অফিস তালাবদ্ধ করে চলে যান বাড়িতে। এতে দুর্ভোগে পড়েন সেবাপ্রার্থীরা। দুপুরের পরে অফিসে এসে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামের শ্রমজীবী মানুষ।
সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুপুরের পরেই বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় কর্মকর্তাদের কোন সুবিধার কাজ থাকলে খোলা থাকে। খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, জেলার বেশিরভাগ ভূমি অফিসই দুপুরের পর বন্ধ থাকে। বিকেল পঁাচটা পর্যন্ত অফিস করেন এমন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
এ ব্যাপারে জানতে কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) বাবুল হাওলাদারের মুঠোফোন কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা মনিকা বিশ্বাস বলেন, আমার সন্তানের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এ কারণে আমি একটু আগে অফিস থেকে বের হয়েছি। আমাদের আরেকজন কর্মকর্তা তঁারও সন্তানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। শুধু রবিবারই তারাতারি গিয়েছি, এছাড়া প্রতিদিন সঠিক সময় অফিস করা হয়।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মো. বশির গাজী বলেন, এ ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে। এর সতত্যা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, কোন ভূমি অফিস নির্ধারিত সময়ের আগে বন্ধ করার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post