যশোর জেলা প্রতিনিধি, মনিরুজ্জামান মনির :
মাঠে মাঠে আশার ফসল ঘরে তুলতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটা, আঁটি বাঁধা, গাড়ি বহরে ধান বাড়িতে আনা এবং মাড়াই ও ধান উড়ায়ে গোলায় ভরার কাজে ব্যস্ত যশোরের কৃষাণ-কৃষাণীরা।
তিব্র তাপপ্রবাহ কাটতে না কাটতেই ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকছেই। গত বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে একদিনেই ১০জন মারা গেছেন। এদিকে কৃষি অধিদপ্তার কর্মকর্তারা কৃষকদের দুরুত্ব ধান কাটার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আগামি (৭ মে) থেকে এলাকা ভিত্তিক ঝড়-বৃষ্টির আশষ্কার কথাও বলছেন তারা।
এদিকে মাঠে মাঠে বাতাসে দুলছে বোরো ধানের সোনালি শীষ। পরিবারের সকলে ধান উঠাতে ঠিক মত খাওয়া- ঘুমের সময়ও পাচ্ছে না কৃষক কৃষাণীরা। ধানের কাজে পরিবারের বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে এবং নাতি-নাতনিসহ সকলে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এ বছর বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে এমনি কথা জানিয়েছে কৃষকেরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবার যশোর জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭’শ ৮৫ হেক্টর জমিতে। ধানের ফলনও আশা অনুরুপ খুব ভালো হয়েছে।
কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আশিকুর রহমান জানান, আবহাওয়ার কথা চারদিক থেকে শুনা যাচ্ছে দু’একের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি আসতে পারে। বৃষ্টির ভয়ে ধান আগে রাস্তায় উঠানো শুরু করছি। যেভাবে রোদের তাপ ছিল তা আজ দু’দিন একটু কমছে। আবহাওয়া ৫-১০ দিন ঠান্ডা থাকলে হয়। বৃষ্টি না হলে কৃষকের জন্য অনেক ভালো হবে। আল্লাহ এ বছর যে ধান দিয়েছে বিঘায় ২৫ মণ পার হতে পারে।
হাঁপানিয়া গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, বৃষ্টির ভয়ে আগে ধান বাড়ী আনতেছি। আজ আনতে পারলে শেষ হয়ে যায়। রাত ১০টা পর্যন্ত ধান গাড়িতে মাঠ থেকে আনা হচ্ছে। কারণ কয়েক বছর আগে এ সময় বৃষ্টি হয়ে ধান মাঠে নষ্ট হয়। ৬ বিঘা ধান আজ বাড়ীতে আনা হয়ে যাবে।
ফুলবাড়ী গ্রামের আক্তার হোসেন জানান, ধান আগে বাড়ী আনতে পারলেই মনে একটু শান্তি লাগবে। ধান যখন বাড়ী আসা শুরু করে তখন রাত দিন ২৪ ঘন্টা পরিশ্রম করা লাগে। আর একদিন হলে ধান সব বাড়ী চলে আসবে। ভয় একটায় এ বছর যে পরিমাণ গরম পড়ছে তাতে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভবনা বেশি। বৃষ্টি হলে তো সমস্যা হয় না তবে বৃষ্টির সাথে যদি শিলা বৃষ্টি হয় তাহলে ধান বাড়ী আসার সুযোগ থাকে না। ঝরে সব মাঠে থেকে যায়।
শর্শুনাদাহ গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, ধানে কাজ প্রায় শেষ । আর দু’একদিন হলে সব ঘরে উঠে যাবে। পরিবারে সবাইকে বলছি আগে ধান ঘরে উঠাতে হবে তারপর অন্য কাজ। ঝড়-বৃষ্টি হলে অনেক ধান মাঠে থেকে যায়। চিন্তায় খাওয়া ঘুম থাকে না। আল্লাহর রহমতে এ বছর ভালো ভাবে ধান ঘরে উঠতে পারছি।
বীর নারায়নপুর গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, ধান কাটবে আর শুকনো মত হলেই আঁটি করার কথা বলছি। যারা কাটছে তারা আজ দু’দিন কাজ করতে পারছে। তার আগে মাঠে দাঁড়াতে পারছিলো না। আল্লার নিকট বলছি আর ৫ থেকে ৭ দিন বৃষ্টি না হলেই ভালো।
যশোর কৃষি অধিদপ্তারের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ৮০ ভাগ ধান পাকলেই আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি ধান কেটে ঘরে তলার জন্য। ইতি মধ্যে আমরা উপজেলা ভিত্তিক মাইকিং করছি, ধান কাটার কথা বলছি কৃষকদের। যত দুরুত্ব সম্ভব ধান কেটে ঘরে তলা এখন কৃষকদের প্রধান কাজ। আমরাও কম্মাইন হারবেস্টার দিয়ে খুব দুরুত্ব ধান কাটা হচ্ছে। আশা করি দু’দিনের মধ্যে ৮০ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠে যাবে। ইতি মধ্যে ৬০ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে এবং ২০ শতাংশ দু’দিনের মধ্যে উঠে যাবে। আগামী (৭ মে) হতে এলাকা ভিত্তিক ঝড়-বৃষ্টির আশষ্কা রয়েছে। এজন্য আমরা কৃষকের দুরুত্ব ধান কাটার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি এবং মাইকিংও করছি।
Discussion about this post