নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামিকেই ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ফেনী আদালতে এই মামলার রায় দেন আদালত। রায়কে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আদালতসহ ফেনীতে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে।
নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ৫০ দিনের মাথায় দেয়া হয় মামলার চার্জশিট। আর ছয় মাসের মাথায় আজ ঘোষণা করা হয়েছে মামলার রায়।সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মারা যায় সে। ঘটনার পর ৮ এপ্রিল আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন নুসরাতের ভাই নোমান। শুরুতে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও পরে মামলা পিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় নুসরাতের শরীরে। মুমূর্ষু অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল ঘুরে নুসরাতকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে।
আগুনে পোড়ার আগে নুসরাত থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তার বক্তব্য ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে প্রত্যাহার হয় সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনকে। পরে তাকে বদলি করা হয় রংপুর রেঞ্জে। এই অভিযোগে এক আইনজীবীর করা আইসিটি অ্যাক্টের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে পালিয়ে যান তিনি।পরে ১৬ জুন গ্রেফতার হন ঢাকা থেকে। এর আগে প্রত্যাহার হন ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার।
এদিকে থানা পুলিশের হাত থেকে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআইয়ের হাতে। একে একে গ্রেফতার হয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, শিক্ষার্থী নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, কামরুন্নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনসহ ১৬ আসামি। এদের মধ্যে ১২ জন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
২৯ মে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন মামলাটি আমলে নেন আদালত। ২০ জুন ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২৭ জুন মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানকে জেরার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার কাজ। ৬১ কার্যদিবস শুনানিতে মামলার ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। এরপর দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয় মামলার বিচারকাজ। ওইদিন ২৪ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
এছাড়া নুসরাতকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে নুসরাতের মায়ের করা মামলা এবং ঢাকায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টের মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
Discussion about this post