কাউসার আহমেদঃ
মানুষ ভ্রমণ প্রিয়। তাই বিনোদন আর আমোদ-প্রমোদের স্বাদ নিতে কার না মন চায়। আবার সেই বিনোদন যদি হয় প্রকৃতির সাথে আর সাথে যদি প্রিয় বন্ধুরা থাকে তাহলে আনন্দের মাত্রাটা বেড়ে যায়। দিনটি ছিলো রবিবার। হঠাৎ কয়েকজন বন্ধু ঠিক করলাম। মনের সকল ক্লান্তিকে দুর করতে ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতির সাথে মিশে যায় আর বুক ভরে সবুজ বিশুদ্ধ অক্সিজেন নেই। প্রকৃতির কথা শুনতেই সাতজন প্রকৃতি প্রেমিক রাজি হয়ে গেল এবং সিদ্ধান্ত হলো কুমিল্লা আদিনা মুড়ায় যাবো।
আদিনা মুড়া কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১৫কি.মি. দক্ষিন -পশ্চিমে অবস্থিত। এটি মূলত একটি পাহাড়ের নাম।কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষায় অপেক্ষাকৃত ছোট পাহাড়কে মুড়া বলা হয়। এর উচ্চতা আনুমানিক ১০০ফুট। এর নামকরণ করা হয়েছে চন্দ্রবংশীয় রাজা মানিকচন্দ্রের পূত্রবধূ অদুনার নামানুসারে।
এই আদিনা মুড়ায় বর্তমানে একজন বুজুর্গ হযরত ওয়ায়েজ কুরণী(রহঃ)আস্তানা ও হযরত শাহকামাল ইয়্যামিনি (রহঃ)দরবার শরীফ এর মাজার রয়েছে। ১৯৫৫-৫৬ সালে তৎকালিন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জরিপ চালিয়ে ময়নামতির প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ বহনকারী যে ৫৪টি স্থান সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট করেছে তার মধ্যে আদিনা মুড়া ১৭ তম।
হাটতে শুরু করলাম, সামনে পিছনে তাকালাম কোন গাড়ি পাচ্ছি না। ভাবলাম হেঁটেই চলে যাই৷ কিন্তু সাথে ছিলো চারজন মহিয়সী নারী। হাটার পা যেন তাদের কামড়িয়ে ধরেছে। গাড়ি নেওয়ার অজুহাত জুড়ে বসলো। আর কি করার। একটু অপেক্ষা করলাম দেখলাম পিছন থেকে তিন চাকার মটর চালিত অটোরিকশা আসলো। নিয়ম যদিও প্রতি রিকশায় চারজন তার বিপরীতে বাড়তি পয়সা পাওয়ার আশায় চালকরা দ্বিগুণ যাত্রী বহন করে। যাইহোক, গাড়ির ভাড়া ঠিক করে আদিনা মুড়ার দিকে রওনা হলাম। বন্ধুদের মুখ থেকে এর বিশেষত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে বলে, এই জায়গার বড় বিশেষত্ব হলো পাহাড়ের উপর সমতল যা থেকে নিচের ও চারপাশের প্রকৃতি দেখতে খুব সুন্দর। একদিন স্যার ক্লাসে এই স্থান সম্পর্কে বললো তাই জায়গাটা দেখার খুব আকাঙ্খা ছিলো। আজ তা বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে বলে খুব আনন্দ হতে লাগলো।
প্রায় ২০ মিনিট অটোরিকশায় ভ্রমণ করার পর আমাদের লক্ষ্য স্থানে পৌঁছে গেলাম। রিকশা থেকে নামতেই চোখে পড়লো ইটের খুদাই করা আদিনা মুড়া নামের বিশাল ফটক। ফটক থেকে উপরে যাওয়ার ছোট-বড় ৪৮টি সিড়ি। আমরা উপরে উঠতে লাগলাম। ক্লান্তি লগ্নে মনে হচ্ছে বিশাল চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠছি। প্রায় ৫-১০ মিনিট উপরে উঠার পর দেখলাম ডানে বামে অনেকগুলো কবর কারোটা ইট দিয়ে বাধানো আবার কারোটা কাচা মাটিতেই সৌভাবর্ধক এবং সামনে মসজিদ সম্মিলিত মাজার।
মাজারের ডানপাশের সরু রাস্তা দিয়ে বিপরীত দিকে গেলে চোখে পড়ে অনেকগুলো ছোট ছোট টিনের ঘর, দোকান, বাস বাগান, সাঁরি সাঁরি কড়াই, গজার ও শাল গাছ এবং সমতল জায়গায় বাহারি রকমের সবজির চাষ।
প্রকৃতি প্রেমিক অনন্যা রব রিপা বলেন, আদিনা মুড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানের একটি। সেখানে আছে পাহাড়ের উপর সমতল ভূমি, মানুষের বসতি দেখতে ছোট্ট গ্রামের মতো আর চারপাশে ঘিরে আছে জানা অজানা হাজার প্রজাতির গাছপালা ও সবজির চাষাবাদ। এখানে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্যের দেখা পেলাম।
পাহাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে তাকালে মনে হয় একটি গাছ আরেকটি গাছের সাথে ভালোবাসার আলিঙ্গনে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছে। সমাজ থেকে যদি হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, মারামারি, কাটাকাটি ইত্যাদি দুর করে ভালোবাসার আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকতে পারতো তাহলে সমাজটাও প্রকৃতির মতো বিশুদ্ধ অক্সিজেন হয়ে যেত।
Discussion about this post