রানা মুহম্মদ সোহেল,বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়া শাহ সুলতান কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভর্তি নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে তিন অফিস সহকারীকে আটক করেছে র্যাব ও পুলিশ। শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে কলেজ থেকে তাদের আটক করা হয়। এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা তদন্ত করতে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড থেকে শিক্ষাবোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের টিম কলেজে আসে। তাদের উপস্থিতিতে অভিযুক্তদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন কলেজে মাস্টার রোলে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত হারুনুর রশিদ, অফিস সহায়ক আমিনুর রহমান এবং আব্দুল হান্নান। তাদের মধ্যে হারুনুর রশিদ এবং আমিনুর রহমানকে র্যাব এবং আব্দুল হান্নানকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে।
গত ১৭ আগস্ট শাহ সুলতান কলেজের অফিস সহকারীর প্রতারণার কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠে। ওই দিন প্রতারিত শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তারা কলেজে ভর্তির যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কয়েক দিন আগে থেকে তারা প্রবেশপত্রের জন্য অফিস সহকারী হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। হারুন তাদের আজ দেব, কাল দেব করছিলেন। সর্বশেষ আজ পরীক্ষার্থীর দিন সকালে তাদের আসতে বললে ওই শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে জানতে পারেন তারা কলেজের শিক্ষার্থী না। তাদের ভর্তি ভুয়া।
শিক্ষাবোর্ড থেকে তদন্ত কমিটি এসে সকাল থেকে কলেজে উপস্থিত ভুক্তভোগী চার শিক্ষার্থী রাশেদুল হক, মিলন হাসান, উম্মে হাবীবা ও শারমিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। এই সময় তাদের থেকে আলাদা আলাদা লিখিত জবানবন্দি নেওয়া হয়। পরে কলেজের অভিযুক্ত কর্মচারী হারুন ও হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই সময় জড়িত হিসেবে আমিনুরের নামও উঠে আসে।
আটক হওয়ার আগে অভিযুক্ত হারুনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করি। বোর্ডের কিছু লোক আছে যারা এই কাজগুলো করে দেন। অ্যাডমিন শাখাসহ ভর্তি সংশ্লিষ্ট শাখার লোকজন এই কাজগুলো করে দেন। আমাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, আমরা যদি দোষী হই কলেজ প্রশাসন থেকে যে ব্যবস্থা নেবে, সেটাই আমরা মেনে নেব।
কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রেজাউন নবী বলেন, ‘ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি এসেছে। আমরাও তদন্ত কমিটি করেছি। যেটার কার্যক্রম আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ঘটনার সঙ্গে যারা তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তির আওতায় আনব।
ভর্তি জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে আসা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের ব্রিফ কালে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলছে। আশা করছি ২১ তারিখের মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারব।
ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় বোর্ডের বিভিন্ন শাখার স্টাফদের সম্পৃক্ততার কথা শোনা যাচ্ছে অভিযুক্তদের কাছ থেকে, তদন্ত কি বোর্ড পর্যন্ত গড়াবে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে যারা যারা জড়িত, সেটা বোর্ডের কর্মকর্তা হোক বা কলেজ প্রশাসনের কর্মকর্তা হোক; আমরা অবশ্যই তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।’
যেসব শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়েছে, তাদের নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে তাদের বিষয়টি সমাধানের জন্য সুপারিশ করব। শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন।
শিক্ষাবোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের ব্রিফ করার পরপরই অভিযুক্ত তিন অফিস সহকারীকে আটক করে র্যাব এবং পুলিশ। অভিযুক্ত দুইজনকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব-১২ এর স্কোয়াড কমান্ডার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ঘটনার সঙ্গে তিনজন জড়িত ছিল। একজনকে বনানী ফাঁড়ির পুলিশ নিয়ে গেছে। আমরা দুই জনকে নিয়ে যাচ্ছি। আর্থিক সুবিধা নেয়ার জন্য এরা দুই জন সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। আমরা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি-না, থাকলে তাদেরও আমরা ধরে ফেলব।
Discussion about this post