দিল্লির আকাশে বাতাসে মানুষের আহাজারি। কান্নায় প্রকৃতিও যেন দিশেহারা। নিস্তব্ধ শ্মশান যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণ। জ্বলছে চিতা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মত। দিল্লি বাতাস চিতার আগুনের ধোঁয়ায় ছড়িয়েছে মানুষের অজানা শ্বাস প্রশ্বাসের রহস্য। মরা দেহ রাখা জায়গা নেই কবরস্থানে । শ্মশান এবং কবরস্থান যেন চলমান সক্রিয় কারখানা। এ কি করুন দৃশ্য । একুশ শতকের মানুষ এমন কিছু দেখবে ভাবতেও পারে নাই। তবুও দেখতে হল । একটুখানি অসতর্কতা কত বড় সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে তার প্রমাণ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। সারা বিশ্ব যখন করোনায় জর্জরিত, তখনও নয়াদিল্লি ছিল অনেক অনেক ভালো । ধর্মীয় কারণে করোনাকে অনেক ছোট চোখে দেখতে শুরু করলো নয়াদিল্লি । অর্থনৈতিক চাকা চাঙ্গা রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব কিছু খুলে রাখাল নয়াদিল্লি।
করোনা ভালো করে বুঝিয়ে দিল দিল্লিকে,ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাকে বলে ! অবহেলা এবং অজ্ঞাতার ফল স্বরূপ দিল্লির আকাশে বাতাসে মানুষের আহাজারি। দেখার কেউ রইলো না। দিল্লি এখন ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের নরকখানা।
আমাদের কী অবস্থা? একটু যাচাই করে দেখা যাক । ঈদ উপলক্ষে মানুষের চলাচল কতটুকু বিধি নিষেধ শুনছে ! করোনায় দিল্লির যে ঢিলেঢালা অবস্থান ছিল, আমাদেরও কিন্তু একই অবস্থা । দিল্লি মত আমরাও ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসে ডুবে আছি । ধর্মীয় কারণে মানছি না কোন বিধি নিষেধ । ফলে করোনা ভাইরাস দেশ ব্যাপী বিস্তার করছে দিল্লির মত করে গোপনে রহস্য জনক ভাবে । দিল্লিতে যেমন নামে মাত্রা লক ডাউন ছিল, আমাদের দেশেও কিন্তু তাই । শুধু লক ডাউন ঘোষণা করে চুপ থাকলে চলবে না । সেটা সরকার এবং প্রশাসনকে কার্যকর করতে হবে । কার্যকর করতে হলে সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিতকরণ সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ । লক ডাউনের সময় বাংলাদেশ সরকার কী সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে পেরে ছিল? সেটা কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে জনসাধারণের মধ্যে ।
নয়াদিল্লি তাদের অর্থনৈতিক চাকা চাঙ্গা রাখতে কলকারখানায় সহ সকল হাট বাজার ঘাট উন্মুক্ত রেখেছিল । ফল স্বরূপ কী হয়ে তা আর ব্যাখ্যা করে বলার কিছু নেই । দিল্লির মত আমরাও কিন্তু কলকারখানায়, হাট বাজার উন্মুক্ত করে রেখেছি । এহার ফল স্বরূপ আমাদের অবস্থা কী হতে পারে একবার ভেবে দেখুন । আমরা কী দিল্লি পথে অনুগামী হচ্ছি না?
এখন বাংলাদেশের সচেতন হওয়া সময় । দিল্লিকে দেখে শিক্ষা নেওয়ার সময় । যদি দিল্লিকে দেখে শিক্ষা না নেই তাহলে আমরা আবার নতুন রুপে দিল্লিতে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছি এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।
বাংলাদেশ যদি দিল্লি না হতে চায় তাহলে কঠোর ভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে । লক ডাউন লক ডাউনের মত করে পালন করতে হবে । সরকারি সাহায্য সহযোগিতা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছায়ে দিতে হবে (বিশেষ করে গরিবের ঘরে ঘরে) । দিল্লির অসাবধানতা পরিণাম সবার মধ্যে প্রচার করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে । রাজনৈতিক নেতাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । যাতে তাদের দেখে জন সাধারণের মধ্যে কোন নেতিবাচক মনোভাব চলে না আসে । অনেক রাজনৈতিক নেতা সামাজিক বিধিনিষেধ না মেনে মিছিল মিটিং সমাবেশ করছে । এই সকল মিছিল মিটিং সমাবেশ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করতে হবে ।
দিল্লিতে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মিছিলে মিটিং সমাবেশ করোনা ছড়ানোর জন্য সবচেয়ে বড় দায়ী বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাই এগুলো সম্পূর্ণ রূপে পরিহার করা এখন যেন সময়ের দাবি । আমাদের মনে রাখতে হবে, বেঁচে থাকলে রাজনীতি, ধর্মীয়, কর্ম, অর্থনীতি সব করতে পারবো। যদি বেঁচে না থাকি তাহলে এগুলো দিয়ে কী হবে । সবার আগে নিজেদের জীবন বাঁচাতে সচেতন থাকতে হবে ।
বাংলাদেশ সরকারের উচিত কঠোর লক ডাউন ঘোষণা করে তার কার্যকর ভাবে বাস্তবায়িত করা। যদি এখন বাংলাদেশ সরকার সচেতন না হয় তাহলে আমরা বাংলাদেশকে নতুন রুপে দিল্লি দেখতে যাচ্ছি ।
শাবলু শাহাবউদ্দিন
শিক্ষার্থী
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ।
Discussion about this post