সোহেল কবির,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ ) প্রতিনিধিঃ
বাণিজ্য মেলায় শীতের আমেজেও সন্তানদের নিয়ে ছুটে এসেছি। ঘরে বসে থাকতে পারিনি। এসে ভালোও লাগছে। খোলা মেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে জমে উঠেছে এবারের বাণিজ্য মেলা। গেইটে আমাদের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে প্রবেশ করানো হয়েছে। কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে মেলায় আসা গৃহবধূ তাসলিমা বেগম। তার স্বামী স্কুল শিক্ষক শাহেল মাহমুদ তার দুই মেয়ে তানিয়া ও জিনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মেলায় এসেছেন। তাসলিমার মতো আরও অনেকেই শীতের পোশাক পড়ে মেলায় এসেছে। কেউ শীতবস্ত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছে। কেউবা মেলার স্টল থেকে শীতবস্ত্র ক্রয় করে গায়ে জড়িয়ে কেনাকাটা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলার প্রবেশ গেইটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করানো হচ্ছে। মাস্ক পড়া মেলায় বাধ্যতামূলক । মাস্ক ছাড়া কাউকেই মেলায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। মেলার সীমানা প্রাচীরের বাইরে কয়েকজন যুবক মাস্ক বিক্রি করছেন। দর্শনার্থীরা মাস্ক পড়ে মেলায় প্রবেশ করেন। তাদের কেউ কেউ গেইটের ভেতরে গিয়ে তা খুলে ফেলছেন। কেউবা থুতনি কিংবা গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন। করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে মেলা কর্তৃপক্ষ কঠোর ভূমিকা পালন করছেন।
স্টলগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। কেউ পণ্যের প্যাকেটের গায়ের চেয়ে দাম কম রাখছেন। কেউ দামে বিশেষ ছাড় দিচ্ছেন। কেউবা রঙ বেরঙের পণ্য স্টলে তুলেছেন। কোন কোন স্টলে নিত্যের তালে তালে পণ্য বিক্রি করছেন। দর্শনার্থী ও ক্রেতারাও সে সকল স্টলে পণ্য ক্রয় করতে ঝুঁকছেন।
মেলার স্টলগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দোকানিরা। কোন কোন দোকানে বিক্রয় প্রতিনিধি ও কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মেলা বসার পনেরো দিনের মাথায় গত ১৪ জানুয়ারি শুক্রবার ও গতকাল ১৫ জানুয়ারি শনিবার স্টলের পণ্য কেনাবেচা হয়েছে প্রচুর। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্রি কিছুটা কম হলেও বিকেল থেকে জমে উঠে কেনা বেচা। এতদিন অধিকাংশ দর্শনার্থী মেলায় ঘুরেছেন। নিজেদের ছবি তুলেছেন। চটপটি আর ফুসকা খেয়েছেন। কিন্তু কেনা কাটা তেমন করেননি। তারা শুক্রবার থেকে পণ্য কেনা কাটায় নেমেছেন। তাতে স্টলগুলোতে কেনাবেচা এখন তুঙ্গে।
খাবার স্টলগুলোতে সন্ধ্যা হতেই তাদের সংরক্ষিত মিনারেল ওয়াটার ও কোমল পানীয়সহ রান্না করা খাবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। সুযোগ পেয়ে আবারও আশপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করে স্টলে নিয়ে আসেন। স্টল মালিকদের এ অবস্থার অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৫দিন। শুক্র ও শনিবারের পণ্য বিক্রিতে স্টল মালিকরা খুশি। তাদের মুখে এখন হাসি ফুঁটে উঠেছে।
টিকিট বিক্রির ইজারাদার ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, গত ১৪ জানুয়ারি শুক্রবার প্রায় ৮০ হাজার মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করে। শনিবারও বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করেছেন। এতদিনেই মনে হয়েছে বাণিজ্য মেলার আয়োজন সার্থক। স্টল মালিকরা খুশি। মেলায় সম্পৃক্ত সকলের মুখে এখন হাসি ফুঁটে উঠেছে।
জাপানের ডিএইচই প্যাভিলিয়নের মালিক জান্নাতুল ফেরদৌস শান্তা বলেন, জাপানিজ কসমেটিক্স ও হারবাল পণ্যের চাহিদা এখানে বেশি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণরা জাপানিজ কসমেটিক্সের ক্রেতা। দাম ক্রয় সীমার মধ্যে। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
তুর্কী কার্পেটের দোকান সুলতানস হোমের কান্ট্রি ম্যানেজার হালিফ ওযকুরত বলেন, বাণিজ্য মেলার প্রাণ ফিরে এসেছে। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গন। সকল পণ্যই এখানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।
খাদ্য তৈরির মেশিনারিজ নিয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশের ডবিøউএ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মালিক মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, মেলায় এখন ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়। তার স্টলে খাদ্যমেকার বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
গাজী গ্রুপের কর্মকর্তা আব্দুল খালেক বলেন, মেলায় গ্যাসের চুলা, হটপট, রাইস কুকার, কড়াই বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। তবে দামি পণ্যগুলো দর্শনার্থীরা দেখে শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে তারা দামি পণ্য ক্রয় করবেন। বাচ্চাদের খেলনার চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আসা গৃহবধূ মিনারা আক্তার বলেন, গৃহস্থালী ও পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত পাতিল, চামচ, গ্লাস, প্লেট, ডাল গুটনি, বাটিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা প্রচুর। বিক্রিও হয়েছে বেশ। দাম কম হওয়ায় বিক্রিতে ধুম পড়েছে।
বাণিজ্য মেলার আয়োজক ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলায় শুক্র ও শনিবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমে উঠে বাণিজ্য মেলা। পণ্য বিক্রিতে ধুম পড়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন তুঙ্গে। মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে দর্শনার্থীদের মেলায় প্রবেশ করানো হয়েছে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে সকলের প্রতি তিনি আহবান জানান।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাণিজ্য মেলায় প্রবেশের আহবান জানিয়েছেন। আইনশৃঙ্গলা নিরাপত্তা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
Discussion about this post