যশোর জেলা প্রতিনিধি:
ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, পদোন্নাতি, স্কেল আপগ্রেডেশন ও আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডরের ন্যায্য দাবিসমূহ আদায়ে বিসিএস শিক্ষা সমিতির সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় যশোর প্রেস ক্লাবে এ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠান হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন, যশোর জেলা শাখার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যশোর সরকারি সিটি কলেজ’র সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল হালিম।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সময়ে শিক্ষা ক্যাডার বেশ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষা ক্যাডার তৈরি করা হয়েছে।কিন্তু দীর্ঘ দিনেও শিক্ষা ক্যাডারকে বিশেষায়িত পেশা হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। বাস্তবায়ন করতে হলে জাতির পিতার দর্শন প্রয়োজন। এদিকে জরুরি ভাবে প্রয়োজন একটি দক্ষ যুগোপযোগী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাপনা তৈরি করা। এ জন্য জেলা, উপজেলা, অঞ্চলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তর ও প্রকল্পসমূহ পরিচালনায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ সময়ের দাবি। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষান্তর সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের নবম গ্রেডের উপরে সকল পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল ভুক্ত। এসব পদে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বাদে অন্য কারও পদায়নের সুযোগ নেই।
এদিকে শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল ভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের অপসারণের দাবী জানিয়েছি কিন্তু সেটি করা হয়নি। আপত্তি করার পরেও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল ভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল বহির্ভুত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটা সুস্পষ্টতই শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্বের উপর আঘাত। আমরা এ সকল কর্মকাণ্ডকে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার শামীল মনে করি। শিক্ষা ক্যাডার বিরোধী এ সকল কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ বিধি বাতিলের দাবী করছি।
শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের ভিশন-২০৪১ তথা সার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু প্রাপ্য অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কারণ ছাড়াই পদোন্নতি বন্ধ ২ বছর। বর্তমানে পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা ৭ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে অধ্যাপক ১ হগাজার ২’শ জন। সহযোগী অধ্যাপক ৩ হাজার জন। সহকারি অধ্যাপক ৩ হাজার জন। এ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সরকারের অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন নেই। সবাই পদোন্নতিযোগ্য পদের বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছেন। শূন্য পদ না থাকলে পদোন্নতি হয় না এমন কোন বিধান নেই। শিক্ষা ক্যাডারকে শূন্য পদের অজুহাতে পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বেতন স্কেল অনুযায়ী ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ গ্রেডপ্রাপ্য কর্মকর্তাগণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে ১ বছর আগে। কিন্তু এ বিষয়েও কোনো অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষকও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে জনবলের ঘাটতি রয়েছে।শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে, সিলেবাস এবং কোর্স বেড়েছে কয়েকগুন। কিন্তু সে তুলনায়পদ সৃজন হয়নি। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের পদ সৃজন অপরিহার্য। বর্তমান সরকারি কলেজসহ শিক্ষা প্রশাসনে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সংখ্যা ১৬ হাজার। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে ১২ হাজার ৪’শ ৪৪ টি পদ সৃজনের প্রস্তাব আটকে রয়েছে দীর্ঘ ৯ বছর। অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেড পদোন্নতি পাই। কিন্তু শিক্ষা কাডারে সর্বোচ্চ পদ অধ্যাপক পদটি চতুর্থ গ্রেড হওয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেড পদোন্নতির সুযোগ নেই। চতুর্থ গ্রেডেই থাকতে হয়। অধ্যাপক পদটি তৃতীয় প্রেডে উন্নীত করা এবং আনুপাতিক হারে প্রথম ও ২য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
২০১৫ সালে নতুন পে স্কেলে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাডার হচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ তে অধ্যাপকদের ৩য় গ্রেডে (সিলেকশন গ্রেড) উন্নীত হওয়ার সুযোগ রহিত হয়ে ৪র্থ গ্রেডে অবনমন হয়। বিষয়টি সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি ও মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি গঠন করে। আর নতুন পে-স্কেলের মাধ্যমে সমস্যা সমূহ সমাধানের নির্দেশ দেন। এ কমিটিসমূহের সুপারিশে শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদ মর্যাদা সম্পন্ন পদ সমূহের মধ্যে ৪২৯টি পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে মাত্র ৯৮ টি পদ ৩য় গ্রেডে উন্নীত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রাণালয় সম্মতি দেয়। এক্ষেত্রেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকর করা হয়নি। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পূর্ণ গড় বেতনে অর্জিত ছুটির বিষয়ে ২০০৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি প্রদান করলেও প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে এটা হয়নি। তাই অবিলম্বে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকালকে নন ডেকেশন সার্ভিস, ঘোষণা করে পূর্ণ গড় বেতনে অর্জিত ছুটি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমিতি জোর দাবি জানায়। আমরা দীর্ঘদিন এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের দাবিগুলো পূরণ হচ্ছে না। এ কারণে দাবী আদায়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আগামী (২অক্টোবর) সারা দেশে ১ দিনের কর্ম বিরতি পালন করা হবে। শিক্ষা ক্যাডারের ন্যায্য দাবি পূরণে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ দিন কর্ম বিরতি পালন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা শাখা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি সহ-সভপতি ও যশোর সরকারি মহিলা কলেজ’র অধ্যক্ষ অমল কুমার বিশ্বাস, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির এমএম কলেজ’র শিক্ষক পরিষদ’র সম্পাদক প্রফেসার মদন কুমার সাহা, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির এম এম কলেজ ইউনিট সম্পাদক নীতিশ চন্দ্র কর্মকার, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহিলা কলেজ ইউনিট সম্পাদক প্রফেসর শাহ মো. ইকবাল হোসেন, যশোর এম এম কলেজ’র উপাধ্যক্ষ ড. আবু বকর সিদ্দিকী, যশোর সরকারি মহিলা কলেজ’র অধ্যাপক ইকবাল আনোয়ার এবং অধ্যাপক শামীম আখতার প্রমুখ।
Discussion about this post