যশোর জেলা প্রতিনিধি, মনিরুজ্জামান মনির :
যশোরে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোথাও তরলীকৃত গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। তবে যশোর সাড়ে ১৬ শত থেকে ১৮ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও অনেক ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। চরম অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এলপিজি সিলিন্ডারের বাজার। এদিকে, সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি নিশ্চিতে মাঠে নামতে যাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
জানাযায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বোতলজাত তরল গ্যাসের (এলপিজি) সরকারি দাম ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। যদিও এর ৫/৬ দিন আগে থেকে গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছিল না এবং শেষ ৩ দিন লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতি সিলিন্ডারের দাম শতাধিক টাকা বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকার নতুন দাম নির্ধারণ করে ১ হাজার ৪ শ ৯৮ টাকা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নতুন দামের ঘোষণা দেয় এবং তখন থেকেই নতুন মূল্য কার্যকর হয়েছে এবং পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন। দাম বাড়ার আগে জানুয়ারি মাসে এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৫ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ২৩২ টাকা নির্ধারণ করেছিল বিইআরসি। তখন বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বলেছিলেন, প্রতি কিলোমিটারের মূল্য বিবেচনা করে কমিশন এলপিজির অন্যান্য আকারের সিলিন্ডারের দামও সমন্বয় করবে।
গতকাল শুক্রবার যশোরের বিভিন্ন দোকানে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কোথাও এলপিজি সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। এলপিজি সিলিন্ডার বাজারে চরম অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের অনেক বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। যশোরের অধিকাংশ দোকানে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ১৮৫০ টাকাও বিক্রি করছে ব্যবসায়িরা। যশোর জেলার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বলছে এলপিজি সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত মূল্যেয় বিক্রি করতে হবে খুচরা ব্যবসায়ীদের। অবিলম্বেই অভিযান করা হবে।
বর্তমানে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে ক্রেতাদের নিকট বেশি দামে বিক্রি করছে সিলিন্ডার গ্যাস। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের মতো গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। বসুন্ধরার গ্যাস তো পাওয়াই যাচ্ছে না। তবে, বেশ কয়েকজন ক্রেতা দাবি করেছেন, দাম বাড়ার আগে তারা দোকানে সিলিন্ডার ভর্তি গ্যাস দেখেছেন, এখন সে সব দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার দেখা যাচ্ছে না। অনেকের দাবি, দাম আরও বেশি নেওয়ার জন্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা।
যশোর বকুলতলা মোড়ের এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ী শিমু এন্টারপ্রাইজের শরিফুল ইসলাম জানান, আমরা ব্যবসা করতে আসছি, উল্টোপাল্টা কিছু করার সুযোগ নেই। আমাদের ক্যারিং খরচ ৫০ টাকা এবং লাভ করতে হবে ৫০ টাকা। অতএব ১’শ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতেই হবে। তিনি স্বীকার করেন, ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস ১৬’শ ৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন। তার মতে, গ্যাসের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্যাস বাজারে অনেক সংকট রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাবলাতলা কাঁচা বাজারে খুচরা এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রেতা জিলস্নুর রহমান জানান, বসুন্ধরা গ্যাস মার্কেটেই নেই। বসুন্ধরা কোম্পানির পড়্গ থেকে এই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে রাখছিলো। দাম বাড়ার বিষয় বড় বড় কোম্পানিরা আগে থেকেই জানত। দামের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত দাম হচ্ছে ডিপোর রেট। এর পরে ক্যারিং খরচ আছে এবং আমাদের ডিলারদের নিকট থেকে আনা খরচ আছে। দুই-তিন হাত বদল হলে এমনিতেই এক-দেড়’শ বেড়ে যায়। তারপর আমাদের লাভ করতে হয়। আমি এলপিজি সিলিন্ডার ১৬’শ ৫০ থেকে ১৭’শ টাকা বিক্রি করছি।
বকুলতলা মোড়ের এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ী কাদের এন্টারপ্রাইজের সুমন হোসেন জানান, ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছেন ১৬’শ ৫০ টাকা দরে। সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৪’শ ৯৮ টাকা। কিন্তু এর থেকে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেশি দামে আমাদেরই কিনতেই হয়। ৫০ টাকা লাভ করা অনেক কঠিন।
জেলার ভোক্তা অধিকার সংরড়্গণের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে গ্যাস বেশি দামে বিক্রি করছে। এ বিষয়ে দ্রম্নতই তারা মাঠে নামবেন। ব্যবসায়ীদের ক্যারিং খরচের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানি তাদের নিজের খরচেই খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট পৌঁছে দেয়। কোম্পানি কোনো ক্যারিং খরচ নেয় না।
Discussion about this post