যশোর জেলা প্রতিনিধি, মনিরুজ্জামান মনির :
গ্রীষ্মের আগেই পানি সংকটে পড়েছে যশোর। বিশেষ করে খাবার পানি সংগ্রহ করতে তাদের ছুটতে হচ্ছে দূর দূরত্মে । পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ টিউবওয়েল অকেজোঁ। সেচ যন্ত্রগুলোও রয়েছে বিপদ সীমায়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্তর ২০ ফুট নিচে নামলেই সাধারণ টিউবওয়েলে পানি উঠতে সমস্যা হয়। বর্তমানে যশোর সদর উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চলে পানির স্তর ৩৫ ফুট নিচে রয়েছে। বর্ষায় তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত, শীতও বৃষ্টিহীন হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।
যশোর সদর ছাড়াও মনিরামপুর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে পানির অভাব দেখা দিয়েছে। খাবার পানি সংগ্রহ করতে দূরে দূরে যেতে দেখা যাচ্ছে। সচল নলকূপগুলোতে পানি সরবরাহে পড়ছে দীর্ঘ লাইন। কলস, বালতি ভর্তি করে ভ্যানে পানি নিচ্ছে যশোর সদরের বীর নরায়নপুর গ্রামের বাসিন্দারা। কৃষকেরা বলছেন এ বছর বোরো ধানে সেচ সংকট তৈরি হতে পারে। যেসব সেচযন্ত্রে পানি কম উঠছে সেসব মাঠের সেচ খবর দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
যশোর বিএডিসি সেচ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পানি ¯ত্মর ২৬ ফুট নিচে থাকা মানেই সেচযন্ত্রের জন্য বিপদ সংকেত। গভীর নূলকূপেও পানি উত্তোলনের হার কমে যায়। চাঁচড়াস্থ পানি¯ত্মর পরিমাপক যন্ত্রে পানির ¯ত্মর দেখাচ্ছে (৭.৮ মিটার) ২৫.৬৫ ফুট নিচে। সেচের ড়্গেেত্র পানির ¯ত্মর বর্ডার লাইনে রয়েছে।
বিএডিসি কর্মকর্তারা জানান, বিএডিসি সেচ প্রকল্প আওতায় যশোরে গভীর নলকূপ রয়েছে ১১৮টি এবং এলএলপি’র মাধ্যমে ১১৮টি সেচযন্ত্র দিয়ে যশোরের বিভিন্ন নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষি ক্ষেতে সেচ দেওয়া হয়। কিন্তু এবছর নদীতেই নেই পানি। স্বাভাবিকভাবেই এলএলপির মাধ্যমে সেচ ব্যহত হচ্ছে।
যশোর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে যশোরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিলো ৮৫৫ মিলিমিটার। অথচ ২০২১ সালে বৃষ্টিপাত ছিল ১৩৩৩ মিলিমিটার। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ৪৭৮ মিলিমিটার কম বৃষ্টি হয়েছে। গত বছর
বীর নারায়নপুর গ্রামের মামুন হোসেন জানান, টিউবওয়েলে চেপে চেপে কোন প্রকার পানি উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি দিন কাজ কর্ম ফেলে আগে খাওয়ার পানি জোগাড় করতে হয়। রান্না এবং গরম্ন-ছাগলের জন্য প্রতিদিন ভ্যানে করে দুর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আমাদের গ্রামে অধিকাংশের বাড়িতে বর্তমানে পানি নেই। শুধু মানুষ বেঁচে আছে সেচ যন্ত্রের ফলে।
মানিকদিহি গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, ‘এ বছর ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কিন্তু এখনই পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সাবমারসিবলে একটু পানি উঠছে। বাকিগুলো আচল। আমাদের এলাকার অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠা বন্ধ হয়ে গেছে। যাও উঠে তা অনেক চাপ প্রয়োগ করতে হচ্ছে।
তালবাড়িয়া গ্রামের উজ্জল জানান, আমার ২টা স্যালো আছে। এবছর শুরম্নতেই পানি একটু কম। যার কারণে ৪-৫ ফুট মাটির নিচে স্যালো বসিয়েছি। তার পরেও পানি কম। গত বছর বৃষ্টির পরিমাণ কম ছিলো। এ বছরও যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে পানি উঠবে না। ধানের শেষ পর্যন্ত কি হবে বুঝতে পারছি না।
যশোর সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নুর ইসলাম বলেন, যশোরের অনেক জায়গায় ভূগর্ভের পানির লেয়ার ৩০-৩৫ ফুট নিচেই রয়েছে। যশোর পৌরসভায় সমস্যাটা একটু বেশি দেখা দিয়েছে । আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। যেখানে বেশি সংকট সেখানে নতুন করে টিউবওয়েল স্থান ছাড়া কোন উপায় নেই।
কৃষি অধিদপ্তারের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আবু তালহা বলেন, ‘পানি সংকটের বিষয় কৃষকরা এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে পানি তুলনামূলক কম উঠছে। কারণ পানি লেয়ার এখন ২৬ থেকে ৩৫ ফুট নিচেই চলে গেছে। গতবছর বৃষ্টির পরিমাণ একদমই কম ছিল না। এ বছর খাল-বিলে তো পানিই নেই। আমরা যে খাল বিল থেকে দেশি মাছ পাই সেটা তো এখন পানি না থাকার কারণে বিলিন হয়ে গেছে।’
বিএডিসি সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাযহারম্নল ইসলাম বলেন, পানি যে ¯ত্মরে আছে তাতে সমস্যা দেখা দেয়নি। আমাদের নিকট পানি সংকটের কোন অভিযোগ আসেনি। তবে এই পানির ¯ত্মর যদি ৩০ ফুট নিচেই চলে যায় তাহলে অধিকাংশ সেচ যন্ত্রে পানি উঠবে না। গত বছরে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম ছিল। যার কারণে এ বছর পানির লেয়ার আরো নেমে যেতে পারে। এ সময় যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে তাহলে সমস্যা আরো প্রকোট হতে পারে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি এ সময়ে স্যালো এবং টিউবওয়েল মাটি খুড়ে ৩-৫ ফুট নিচেই দিতে হবে। তখন হয়তো বেশি সমস্যা হবে না।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, পৌরসভার বাইরে সদর উপজেলায় ৩০-৩৫ ফুট নিচেই পানির লেয়ার নেমে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে বসানো বেশিরভাগ টিউবওয়েল অকেজোঁ হয়ে পড়েছে। তবে আমাদের পরামর্শে বসানো টিউবওয়েলে পানি নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না। সাধারণ টিউবওয়েলে ২০ ফুটের নিচে লেয়ার নামলেই পানি উঠতে সমস্যা হয় এবং যাও উঠে তা অধিক পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করতে হয়।
তবে আমাদের যে সাবমারসিল এবং তারা পাম্প করা আছে সে গুলোতে কোন সমস্যা নেই। তারা পাম্প গুলো পানির স্থর নির্ণয় করে বসানো হয়। যার কারণে এ পাস্প গুলো লেয়ারের কোন সমস্যা হবে না। তবে বৃষ্টি না হলে লেয়ার আরো নেমে যাবে। বর্তমানে সদর এবং মনিরামপুর উপজেলায় লেয়ার ৩৫ ফুটের নিচে রয়েছে।
Discussion about this post