মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকন্ঞ্জি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন রাসেল খান। ২০১২ সালে তিনি সরকারি এই চাকরি পেয়ে যোগদান করেন। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক পদে থাকাকালীন তিনি এই উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে সরকারিতে যোগদান করেন। এর দুই বছর পর তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি সরকারি চাকরি বিধিমালা অমান্য করে সরকারি চাকুরির পাশাপাশি উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
এদিকে, সরকারি বিধিমালা অমান্য করে যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় আদালতে সাইদুজ্জামান নামের এক যুবলীগ কর্মী বাদি হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিবাদী রাসেল খান সরকারি চাকরিজীবি হয়ে রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী না হওয়ার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী জাকারিয়া আহমেদ-(২) জানান, এই বিষয়ে আদালত খোলার পর বিস্তারিত বলা যাবে।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ অংশে বলা আছে, সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না।
অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২০১২ সাল থেকে চাকরিরত আছেন। তৎকালীন সময়ে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক পদে থেকে এই চাকরীতে তিনি যোগদান করেন। সরকারি চাকরি পাওয়ার দুই বছর পর ২০১৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে রাসেল খান উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর থেকে সরকারি চাকরির পাশাপাশি গত ৯ বছর যাবত উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দখল করে আছেন। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। আগামী ২৮ এপ্রিল উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে জেলা যুবলীগ। সেই সম্মেলনে প্রকাশ্যে পোষ্টার ব্যানার করে নিজেকে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করেছেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও বর্তমান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস বলেন, সে (রাসেল খান) যুবলীগ করে। সরকারি চাকরি করে যুবলীগ করা যাবে না, আমাদের গঠনতন্ত্রে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। সরকারের নিয়মের বিষয়টি সরকার দেখবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাকের কাছে এই বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারি পদে থেকে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। আমাদের যে সরকারি চাকরি বিধিমালা আছে তাতে স্পষ্ট আছে আমরা কোন রাজনীতি করতে পারি না। তবে তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রাসেলের বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া অনুরোধ করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রাসেল খানের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি জানান, মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তিনি সরকারি চাকরিতে আছেন কিনা, এ প্রশ্ন করা হলে নেটওয়ার্ক সমস্যা বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
Discussion about this post