যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনে নববধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যেও মৃত্যুর ঘটনা তেমনি একটি নেক্কারজনক মৃত্যু কান্ড হয়েছে নারায়ণগন্জ জেলার, বন্দর থানার আমিরাবাদ বটতলা গ্রামে।
থানায় দায়ের কৃত অভিযোগ হতে জানা যায় যে, ভিকটিমের ভাই মোঃ বিনিয়ামিন (৩৩), পিতা-মোঃ শহীদুল্লাহ, সাং-পানাম গাবতলী, পোঃ ও থানা- সোনারগাঁ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ থানায় হাজির হইয়া এই মর্মে অভিযোগ দায়র করিতেছি যে, আমার ছোট বোন মৃত মোসাঃ ছনিয়া আক্তার তামান্না (২০), বিগত ০৮ মাস পূর্বে প্রেমের সম্পর্কের টানে জনৈক মোঃ ফয়সাল (২৪), পিতা-মোঃ আবুল হোসেন, সাং-আমিরাবাদ বটতলা, পোঃ-নবীগঞ্জ বাজার, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ এর সাথে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ হয়। বিবাহের পর হইতে আমার মৃত বোন তার স্বামী উক্ত মোঃ ফয়সাল এর সাথে তাহার নিজ বাড়ীতে বসবাস করিয়া আসিতেছিল।
ইং ১২/০৬/২০২০ইং তারিখ, বেলা ১২.০০ ঘটিকার সময় স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী মনিরা বেগম তাহার মোবাইল ফোন হইতে আমার মায়ের মোবাইলে ফোন করিয়া জানায় যে, আমার বোন মোসাঃ ছনিয়া আক্তার তামান্নাবন্দর থানাধীন আমিরাবাদ বটতলা সাকিনস্থ তাহার স্বামীর পূর্বমুখী দু-চালা টীনের ঘরের উত্তর বাশের কক্ষে বাঁশের আড়ার সাথে তাহার নিজের ওড়না গলায় প্যাঁচাইয়া ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করিয়াছে।
উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে আমি আমার নিকটতাত্নীয় স্বজনের নিয়া ইং ১২/০৬/২০২০ তারিখ বেলা-১৩.০০ ঘটকিার সময় ঘটনাস্থলে আসিয়া আমার বোনের স্বামীর পূর্বমুখী দু-চালা ঘরের উত্তর পাশের কখ্ষে খাটের মধ্যে আমার বোনের মৃতদেহ শুয়ানো অবস্থায় দেখিতে পাই। তখন আমার বোনের মৃতদেহের গলায় ফাঁসির দাগ, জিব্বা বের হওয়া ও কানের উপর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় দেখিতে পাই।
স্থানীয় লোকজন জানায় যে, ইং ১২/০৬/২০২০ তারিখ ০৭.০০ ঘটিকা হইতে সকাল ০৮.০০ ঘটকিার মধ্যে যে কোন সময় আমার বোনকে তাহার স্বামীর পূর্বমুখী দু-চালা টীনের ঘরের উত্তর পাশের কক্ষে বাঁশের আড়ার সাথে গলায় ওড়না প্যাঁচাইয়া ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করিয়াছে মর্মে প্রাথমিক ভাবে জানিতে পারি। অতঃপর বিষয়টি পুলিশে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া আমার বোনের মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করিয়া লাশ ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেন।
পরবর্তীতে আমি আমার সঙ্গীয় লোকজন আশপাশের লোকজনের নিকট জানিতে পারি যে, আমার বোনের স্বামী বিবাদী- ১। মোঃ ফয়সাল (২৪), পিতা- মোঃ আবুল হোসেন, সাং-আমিরাবাদ বটতলা, পোঃ-নবীগঞ্জ বাজার, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, তাহার বোন বিবাদী ২। মোসাঃ দীনা (৩৫), ৩। শিউলি (২৮), উভয় পিতা-মোঃ আবুল হোসেন, ৪। মোঃ আবুল হোসেন (৫৫), পিতা-অজ্ঞাত, ৫। মোসাঃ সুফিয়া বেগম (৫০), স্বামী-মোঃ আবুল হোসেন, সর্ব সাং-আমিরাবাদ বটতলা, পোঃ-নবীগঞ্জ বাজার, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ আসামীগণ আমার বোনের বিবাহের পর হইতে আমার বোন কে নানা অজুহাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করিত। আমার বোন বিষয়টি আমাদেরকে জানাইলে আমরা তাকে ধর্য্য ধারন করার করার কথা বলি।
সে মোতাবেক আমার বোন আসামীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শয্য করিয়া তাহার সাথে ঘর সংসার করিতে থাকে। উক্ত আসামীরা বিভিন্ন সময় আমার বোনকে আত্নহত্যা করয়িা মরিয়া যাইতে বলে বলিয়া আমাদেরকে বেশ কয়েক বার জানাইয়াছে। আমাদের ধারনা যে, আমার বোন উক্ত আসামীদের জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারিয়া ইং ১২/০৬/২০২০ তারিখ সকাল ০৭.০০ ঘটিকা হইতে সকাল ০৮.০০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় উক্ত আসামীদের প্ররোচনায় আমার বোন গলায় ওঢ়না প্যাঁচাইয়া ঘরের আঢ়ার সাথে ফাঁসিতে ঝুলে আত্নহত্যা করিয়াছে।
আমার বোনের মৃত্যুর জন্য উক্ত আসামীরাই দায়ী। আমার বোনের অন্য কোন কারনে মৃত্যু হইয়াছে কিনা, তাহা ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তী সাপেক্ষে নিরুপন করা যাইবে। বিষয়টি আমি আমার আত্নীয় স্বজনের সাথে আলাপ আলোচনা করিয়া থানায় আসিয়া অভিযোগ দায়ের করিতে বিলম্ব হইল।
উল্লেখ্য যে, উক্ত বিষয়ে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বন্দর থানার এসআই হানিফ, তিনি জানান সোনিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে খাটের ওপর তার লাশ দেখতে পাই এবং মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করি। তবে বাদী পক্ষের লেকজন বলেন যে, বন্দর থানার এসআই হানিফ আসামী পক্ষের লোকজন হইতে মোটা অংকের ঘুস গ্রহন করে সুরতহাল রিপোর্টে মৃত মোসা: সনিয়া আক্তার তামান্নার কানের উপর রক্তাক্ত জখম ছিল তাহা তিনি উল্লেখ করেন নাই। পরবর্তীতে মৃত মোসা: সোনিয়া আক্তার তামান্না স্বামী মো: ফয়সাল কে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় নিয়ে আসে।
উক্ত এসআই হানিফ, বিবাদী মো: ফয়সালের পরিবারের কাছ থেকে আবারও মোটা অংকের ঘুস গ্রহন করে মো: ফয়সাল কে থানা থেকে ছেড়ে দেন। পরে বাদী পক্ষের এবং থানায় উপস্থিত সাংবাদিক তীব্র প্রতিবাদে বন্দর থানার অভিসার ইনচাজ (ওসি) মো: রফিকুল ইসলাম উপস্থিত সবাইকে শান্ত হওয়ার জন্য বলেন এবং তিনি বলেন আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত মোসা: সনিয়া আক্তার তামান্না স্বামী মো: ফয়সাল কে গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বন্দর থানার অভিসার ইনচাজ (ওসি) মো: রফিকুল ইসলামের যেই কথা সেই কাজ। তিনি মৃত মোসা: সনিয়া আক্তার তামান্না স্বামী মো: ফয়সাল কে ৬ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে দন্ডবিধি-১৮৬০ এর অধীনে ৩০৬, ৩৪ ধারায় একটি মামলা রুজু করেন। যাহার নং ০৬, তারিখ-১২/০৬/২০২০ এবং মামলাটি তদন্ত করার জন্য পরিদর্শক (তদন্ত) মো: আজহারুল ইসলাম কে মামলার তদন্তের জন্য নিয়োগ করেন।
পরবর্তীতে গত ১৩/০৬/২০২০ ইং তারিখে মৃত মোসা: সনিয়া আক্তার তামান্না স্বামী মো: ফয়সাল কে নারায়ণগন্জ কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে আটক রাখিয়া বিচার কার্য সম্পাদন করতে আবেদন করেন।
এ বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রফিকুল ইসলাম আরোও বলেন, নিহত গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পোষ্টমোর্টেমের জন্য জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত গৃহবধূর পরিবারের সাথে এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেছি। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা হয়েছে এবং সোনিয়ার স্বামী মো: ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে এবং মৃত দেহের পোষ্ট মোর্টেমের রিপোর্ট দেখে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে নিহত মৃত সোনিয়ার স্বজনরা জোর দাবী জানায় যে সোনিয়াকে তার স্বামী সহ অন্য সহ আসামীরা নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
Discussion about this post