মেহেদী হাসান ,জামালপুর প্রতিনিধিঃ
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধূরী বলেছেন,ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর প্রবাহ নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে, এর মধ্যে যমুনা ও তিস্তা নিতয়ে কথা চলছে।
আলোচনা ফলপ্রসু হলে নদীর নাব্যতা ফিরে
আসবে।নাব্যতা ফিরে আসলেই নৌ চলাচলে কোন বাধা থাকবে না।
শনিবার দুপুরে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বাহাদুরাবাদ লঞ্চ টার্মিনাল ও বাহাদুরাবাদ বালাসী রুটে পরীক্ষামূলক লঞ্চ সার্ভিসের উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
মন্ত্রী আরও বলেন, ইতিমধ্যে সাত হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করে ফেলেছি, আমাদের লক্ষ্য দশহাজার কিলোমিটার নৌপথ।সরকার দেড়শ কোটি টাকা ব্যায়ে যে টার্মিনাল তৈরি করেছে তা ধরে রাখার জন্যই নির্মান করা হয়েছে।
উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিওটিআইয়ের চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেক, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার শেফা, উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন প্রমুখ। উল্লেখ্য, ২০০০ সালে বাহাদুরাবাদ-বালাসী রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২২ বছর পর আবারও বন্ধ হওয়ার শঙ্কা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হল নৌ রুটটি।
প্রতিমন্ত্রী বেলা ১১টায় প্রথমে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করেন।পরে বাহাদুরাবাদ লঞ্চঘাটে উদ্বোধন করেন বাহাদুরাবাদ-বালাসী রুটে লঞ্চ সার্ভিস।
উদ্বোধন শেষে নৌপথে গাইবান্ধার বালাসীঘাট যান। সেখানেও বালাসী- বাহাদুরাবাদ রুটে লঞ্চ সার্ভিস ও বালাসী নৌ টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি বালাসীতে সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট চালু করে। এ পারে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট ওপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট।তখন থেকে এই রুটের মাধ্যমে ঢাকা-দিনাজপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল।উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার মানুষ ট্রেনে করে তিস্তামুখ ঘাটে যেতেন।এরপর তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি পারাপার হতেন।ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন।সে সময় কম খরচে নিরাপদে ঢাকা যাতায়াত করা যেত।
১৯৯০ সালে নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে তিস্তামুখ ঘাটটি একই উপজেলার বালাসীতে স্থানান্তর করা হয়। এ জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ত্রিমোহিনী থেকে বালাসী পর্যন্ত নতুন প্রায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়।
তখন বালাসী- বাহাদুরাবাদ রুটের মাধ্যমে একইভাবে রেল যোগাযোগব্যবস্থা চালু ছিল।তৎকালীন বালাসীঘাটে রেলওয়ের অন্তত নানা ধরনের ৩০টি নৌযান ছিল।২০১৫ সালের পর থেকে এসব নৌযান বিক্রি শুরু হয়।বর্তমানে এখানে রেলের প্রায় ১১টি নৌযান আছে।অবশিষ্ট নৌযানগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে।বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে এসব বিক্রি করা হচ্ছে।
১৯৯৬ সাল থেকে যমুনা নদীতে নাব্য হ্রাসের কারণে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়।১৯৯৮ সালের জুন মাসে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয়।ফলে ২০০০ সাল থেকে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।অকার্যকর হয়ে পড়ে বালাসীঘাট।তখন থেকে প্রায় ২২ বছর বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে।অবশ্য শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার অব্যাহত ছিল।
বালাসী- বাহাদুরাবাদ নৌরুটে লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবিতে নানা আন্দোলন কর্মসূচি চলতে থাকে।রুটটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরের আট জেলা ভ্রমণে দুই-তিন ঘণ্টা সময় কম লাগবে।ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক ও যমুনা সেতুর ওপরচাপ কমবে।স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ উভয় পাশে ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌ টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করে শেষ পর্যন্ত।
Discussion about this post