মেহেদী হাসান ,জামালপুর প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সারকারখানায় (জেএফসিএল) বিধিবহির্ভূত নিয়োগের মাধ্যমে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক ৬১জন শ্রমিক মাসের পর মাস বেতন উত্তোলন করছেন। এছাড়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৮৬ জন শ্রমিকের অধিকাংশই নীতিমালা অমান্যসহ দায়িত্বে অবহেলা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে বিধিবহির্ভূত ৬১জন শ্রমিককে কর্তৃপক্ষ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ায় মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিক্ষোভ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
জেএফসিএল সূত্র জানায়, যমুনা সারকারখানায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দৈনিক ৩৭৫ টাকা হাজিরা (কাজ নাই তো মজুরি নাই) ভিত্তিক ৪২৫জন শ্রমিককে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক সরবরাহের কার্যাদেশ পায় সরিষাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের মেসার্স জান্নাত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত জনবলের বাইরে অতিরিক্ত আরো ৬১জন শ্রমিককে নিয়োগ পাইয়ে দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা মাসের পর মাস বেতন উত্তোলন করেন। অভিযোগ রয়েছে, বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ৪২৫জন শ্রমিক পরিচয়পত্র ব্যতিত কারখানায় প্রবেশের আদেশ ও ড্রেসকোড অমান্যসহ দিনের পর দিন দায়িত্বে অবহেলা করে আসলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নির্বিকার।
এদিকে কারখানায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) অডিটে বিধিবহির্ভূত ৬১ জন শ্রমিকের বিষয়টি নজরে এলে তাঁদের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মঈনুল হক গত ২৯ আগস্ট ৬১ জন শ্রমিককে বাতিল করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে পত্র দেন।
পত্র পাওয়ার পর ঠিকাদারের লোকজন ও বাতিলকৃত শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা কারখানার প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় বক্তব্য রাখেন ঠিকাদার মো. সাখাওয়াত আলম মুকুল, জেএফসিএল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, শ্রমিক নেতা রইছ উদ্দিন প্রমুখ।
ঠিকাদার মো. সাখাওয়াত আলম মুকুল বলেন, “আমি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ঠিকাদারি করছি, খণ্ডকালিন ৬১জন শ্রমিককে আমার আগের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছিল। কর্তৃপক্ষ আমার সাথে কথা না বলেই ওদের বাদ দিয়েছে, এতে এলাকার কিছু লোক কর্মহীন হয়ে পড়লো।”
কর্তৃপক্ষের পত্রের ব্যাপারে তিনি জানান, “আমি সব নীতিমালা মানতে প্রস্তুত। শ্রমিকদের ড্রেস ও পরিচয়পত্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।” কোনো শ্রমিক দায়িত্বে অবহেলা করে না বলেও তিনি দাবি করেন।
এব্যাপারে যমুনা সারকারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মঈনুল হক বলেন, “বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুপারিশ ও মৃত্যুজনিত শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ অতিরিক্ত ৬১জনকে খণ্ডকালীন নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কারখানার নিয়মে অনুমোদন রয়েছে ৪২৫ জনের, তাই বাকিদের বাদ দেয়া হয়েছে।”
ইতোপূর্বে তাঁদের প্রদেয় বেতনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কী সিদ্ধান্ত- সে বিষয়ে তিনি জানান, “বিষয়টি বিসিআইসির সিদ্ধান্ত।”
Discussion about this post