সোহেল কবির,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের মিঠাবো আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়মতান্ত্রীক ভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পায়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ নিয়োগ বোর্ডকে ম্যানেজ করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মনি আক্তার মিলিকে প্রধান শিক্ষকের পদে এ নিয়োগ দেয়ার জন্য অনিয়ম করা হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর দেয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে হাটাবো মিঠাবো এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বর্তমানে দুই সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী এখানে লেখাপড়া করছে। পারটেক্স গ্রুপ বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন নির্মাণ সহ আর্থিক সহযোগিতা করে আসছে। সে কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি লোভনীয় হয়ে উঠেছে। ২০০১ সালে ১ নভেম্বর কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে মনি আক্তার মিলি বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমানের প্রভাবে তার স্ত্রী মনি আক্তার মিলিকে অনিয়মতান্ত্রীক ভাবে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রæয়ারি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন সুকৌশলে গোপনে নামমাত্র একটি দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাতে বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষকসহ বিপুল সংখ্যক যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক শিক্ষিকা আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তখন কমিটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে। পরে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ কমিটি গঠন করে বিদ্যালয়ের যাবতীয আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। রেজিস্ট্রার ছাড়াই অর্থব্যয়, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, সরকারি ও বেসরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।
প্রধান শিক্ষকের পদটি গত ৩ বছর ধরে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ি শিক্ষক অপর কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে তাকে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির সই করা অনাপত্তিপত্র দাখিল করতে হবে। কিন্তু মনি আক্তার মিলি আবেদনপত্রের সঙ্গে অনাপত্তিপত্র দাখিল করেননি। ওই সময় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ও ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগের এক নেতার পেশীশক্তির ভয়ে নিয়মবহির্ভুত ভাবে তাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখনও সন্ত্রাসীদের ভয়ে এ পদে অনেকেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আসেনি। পাতানো নিয়োগ বোর্ড গঠন করে ফলাফল শীটে অন্যদের নামে কম নম্বর দেখিয়ে যোগ্যপ্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে মনি আক্তার মিলিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক পদে মনি আক্তার মিলিকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে একই অনিয়ম করা হচ্ছে।
সরকারিবিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষকের পদে আবেদন করতে হলে সহকারী প্রধানশিক্ষক হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে মনি আক্তার মিলির সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা পূর্ণ হয়নি। তাই এতদিন এ পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মনি আক্তার মিলির সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতার তিন বছর পূর্ণ হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অধিকাংশ সদস্যের আপত্তি থাকা সত্তেও মার্চ মাসে নামমাত্র একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের প্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে তাদের পছন্দমত লোকজন নিয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মনি আক্তার মিলিকে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রাথমিক সকল কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের পদে আবেদন করতে কুমিল্লা থেকে আসা ২/৩জন শিক্ষক ইতিমধ্যে লাঞ্চিত হয়েছেন। তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগবোর্ড গঠন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিরাপত্তার সঙ্গে নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য আবেদনকারী শিক্ষকরা দাবি জানিয়েছে।
মিঠাবো আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগে কোন অনিয়ম করা হবে না।
রূপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকউদ্দিন আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারি বিধির বাইরে নিয়োগ বোর্ড গঠনের কোন সুযোগ নেই। শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্যেই প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
Discussion about this post