সোহেল কবির, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার প্রাণের নদী শীতলক্ষ্যা আজ মৃত্যুর পথে। এক সময় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ী জাহাজে খাবারের পানি নেয়া হতো এই নদী থেকে। আশপাশের শত গ্রামের মানুষের কাছেও এই নদীর পানি ছিল পান করার উপযোগী। সেই রূপগঞ্জের প্রাণ শীতলক্ষ্যা নদী এখন মরতে বসেছে দূষণ আর দখলের কবলে। এক সময়ের সুপেয় পানি যেন এখন অনেকটাই বিষ। এখনও এই নদীর উপর নির্ভর করে আছে লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু সেই স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী নদীর পানি এখন ভরা বর্ষায় কিছুটা পরিষ্কার থাকলেও বছরের বাকি সময়ে কালচে আর পুঁতিগন্ধময়। মাছ ধরা তো দূরে থাক, দূষণের কারণে সুস্বাদু মাছ এখন শুধুই অতীত রোমন্থন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা কারখানার বর্জ্য নদী দূষণের প্রধান কারণ। নদীর পানি এখন এতটাই দূষিত যে, সেখানে জলজ প্রাণের অস্তিত্ব এখন মারাত্মক সংকটে এবং এই পানি দূষণের কারণে মারাত্মক বিপাকে পড়ছে গ্রামের কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, রূপগঞ্জে মুড়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত এসিআই সল্ট মিল, রংপুল মেটাল ইন্ড্রাসটিজ, আফজাল ফুড, নিশু কুকি টিস্যু পেপার, মীর সিমেন্ট, গ্লোব ফিসারিজ লিমিেিটড (টাইগার মিল), ক্রিয়েটিভ পেপার মিলস, হাটাবো এলাকার পূর্বাচল পেপার মিল,পারটেক্স, অনন্ত পেপার মিল সহ আরও ছোট বড় প্রায় অর্ধশতাধিক বোর্ড মিলের তরলবর্জ্য নদীর পানিতে ফেলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যার কারণে শীতলক্ষ্যার পানি দূষিত হয়ে অনেকটা আলকাতরার রূপ নিয়েছে। তার সঙ্গে বেড়েছে
উৎকট গন্ধ আর সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক ফেনিল ঢেউ। দিনরাত মোটা পাইপ ও ড্রেনের মাধ্যমে বিভিন্নডাইংয়ের দূষিত পানি নদীতে গিয়ে পড়ে। কারণ ডাইং কারখানাগুলো বর্জ্য ও দূষিত পানি ছেড়ে দেয়। এছাড়া অনেক ডাইং কারখানা বর্জ্য ফেলার পাইপগুলো পানির নিচ দিয়ে নিয়েছে যাতে সেগুলো দৃশ্যমান না হয়। যার ফলে ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি।একদিকে দূষণ ও অন্যদিকে দখলের কবলে প্রতিনিয়ত তার জৌলুস হারাচ্ছে রূপগঞ্জের প্রাণ শীতলক্ষ্যা। নদীর দুইপাশ ডকইয়ার্ড, গোডাউন, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনার দখলে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে।
এলাকার প্রবীণরা বলেন, এক সময় রোগ হলে শীতলক্ষ্যায় গোসল করাতো। আর এখন এই পানিতে আজ গোসল করলে কালই বিভিন্ন রোগে ভুগতে হবে।
তারা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আগে এ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে। কিন্তু ১৫-২০ বছর ধরে কেউই নদীতে মাছ ধরে না। নদীর যে অবস্থা তাতে মাছ ধরা অসম্ভব।
এদিকে প্রতিদিন নৌকায় করে নদী পাড়ি দিতে হয় শত শত মানুষকে। তারা বলছেন, কী আর করার। জীবিকার তাগিদেই আমাদের নদী পার হতে হয়। দুর্গন্ধের কারণে দম বন্ধ হয়ে আসে। নাকে কাপড় কিংবা রুমাল ধরে দুইবেলা পার হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ এখনও পাইনি। তবে যদি কোন অভিযোগ আমরা পাই তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post