শাবলু শাহাবউদ্দিন:
ডেল কার্নেগির একটি বই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম। বইটিতে তিনি দুশ্চিন্তা নিয়ে বিস্তার আলোকপাত করেছে। দুশ্চিন্তা মানুষকে কীভাবে তিলে তিলে শেষ করে তার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তার এই বইটিতে। এছাড়া দুশ্চিন্তা থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, সে কলাকৌশলও তুলে ধরেছেন তিনি।
বইটির নাম How To Stop Worrying & Start living। বিভিন্ন নামে বইটির বাংলা অনুবাদ আছে বাজারে।
বইটির বাংলা অনুবাদ পড়া সবার জন্য আবশ্যক এজন্য যে, আমরা এখন সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। দুশ্চিন্তা এখন আমাদের মনের রোগ থেকে দেহের রোগে রূপান্তরিত হয়েছে।
এটা মেনে নিতে হবে- বর্তমান বিশ্ব প্রতিযোগিতার বিশ্ব। সবাই আমরা এখন প্রতিযোগিতায় নেমেছি। প্রতিযোগিতায় যারা সফল হচ্ছি, তারাও যেমন দুশ্চিন্তায় আছি। আবার সফল যারা হইনি তারা তো দুশ্চিন্তার মহাসাগরে বাস করছি। সফল ব্যক্তিরা দুশ্চিন্তা করছে এই ভেবে যে, পেছন থেকে কে যেন এসে তাদের সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে নেয়। আর অসফল মানুষগুলো দুশ্চিন্তায় আছে এই ভেবে যে, তাদের জীবন, জন্ম সব বৃথা গেল; ওরা সফল হলো আমরা কেন সফল হতে পারলাম না ইত্যাদি। ঠিক এমনি করে বস্তুবাদকে সামনে রেখে বাস্তবিক পক্ষে আমরা ইট-পাথরের দুনিয়ায় সবাই দুশ্চিন্তায় আছি। কী হবে, কী করতে হবে ইত্যাদি।
বাংলাদেশ ও ভারত এখন উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নের মহাসড়কে হনহন করে চলছে এই সোনার বাংলা। এই উন্নয়নের ফলে দুটি শ্রেণির সৃষ্টি হচ্ছে। এক শিক্ষিত চাকরিজীবী শ্রেণি, দুই শিক্ষিত বেকার শ্রেণি। চাকরিজীবী (উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী) শ্রেণি আছে কীভাবে আরও সফলকাম হওয়া যায়। কীভাবে অন্যকে পেছনে ফেলা যায়। কীভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখা যায় ইত্যাদি দুশ্চিন্তায়। আর বেকার শ্রেণি এখন নৌকাবিহীন প্রবল স্রোতের সঙ্গে প্রবাহিত পদ্মা নদীর মাঝে। তারা বাঁচবে কী করে, এ দুশ্চিন্তাই সবসময় মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। এ দুশ্চিন্তার ফলে নানা ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি আমরা, তার হিসাব বাংলাদেশ ও ভারতের হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলোতে গেলে বোঝা যায়। বর্তমানে মানুষ যেসব রোগে বেশি বেশি ভুগছে তার বেশিরভাগ অংশ হলো দুশ্চিন্তার কারণে। বর্তমান সময়ে ৭০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটছে এই দুশ্চিন্তাজনিত রোগে। সুতরাং দুশ্চিন্তাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ধোঁকাবাজি। মানুষের মধ্যে কোনো নৈতিক মূল্যবোধ কাজ করে না। ধর্মীয় অনুশাসন নিম্নপর্যায়ের চলে যায়। ফলে সবাই সবসময় একজন অন্যজনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে। এজন্য আমাদের কীভাবে দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়, সে পথে হাঁটতে হবে। ফলে আমাদের শরীর ও মন ভালো থাকবে। দুশ্চিন্তাবিহীন পরিশ্রম করতে হবে। তাতেই সাফল্যের শীর্ষে উঠতে পারব। এজন্য ধর্মীয় অনুশাসনসহ মূল্যবোধ ঠিক রাখার উপায় সংবলিত বই, সিনেমা ইত্যাদি দেখব।
Discussion about this post