রাকিব হোসেন, জয়পুরহাটঃ জয়পুরহাটে গণসৌচাগার নির্মাণের আড়ালে প্রভাবশালীদের রেলওয়ের ঐতিহ্যবাহী মাঠ দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এতে একদিকে স্থানীয়দের জাতীয় দিবস পালন, খেলাধুলা, সাপ্তাহিক হাট-বাজার, বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ নানা অনুষ্ঠান পালনে বিঘœ ঘটবে। অন্য দিকে ঐ প্রভাবশালীরা মাঠটি দখল করে বাণিজ্যিক ভাবে ঘর ও মার্কেট নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে ও এলাকার ঐতিহ্য হারানোর আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানালেন রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কাজ করায়, বন্ধ রয়েছে নির্মাণ কাজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের, জাতীয় সেনিটেশন প্রকল্পের আওতায়, জয়পুরহাটের তিলকপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের মাঠে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে গণসৌচাগার নির্মাণের কাজ শুরু করে আক্কেলপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রায় ২ একর এ মাঠে জাতীয় দিবসসহ নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় অন্য স্থানে গণসৌচাগার নির্মাণের প্রয়োজন থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমি দখলদাররা সুকৌশলে ঐতিহ্যবাহী এ মাঠে গণসৌচাগার নির্মান করে মাঠটি দখলের ষড়যন্ত্র করছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। ঐতিহ্যবাহী মাঠ দখলমুক্ত ও সুরক্ষার দাবী জানান তারা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল সোবহান, তোজাম্মেল হোসেন, হারুন-অর-রশীদ, জাকির হোসেন, মাদ্রাসার পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসার সামনে আমাদের মার্কেট আছে। মার্কেটের সামনে রেলওয়ের মাঠে জাতীয় বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মে দিবস, সাপ্তাহিক হাট-বাজার, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের খেলাধুলা, বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানান অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এখনে যে টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে তা এই জায়গাতে প্রয়োজন নেই। কারণ গণসৌচাগার হিসাবে মাঠের সাথেই মাদ্রাসার টয়লেট, গোসল খানা ব্যবহার করে আসছে সাধারণ মানুষ এতে কোন সমস্যা নাই। সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজ অবশ্যই হবে। কিন্তু যেখানে প্রয়োজন সেখানে হওয়া দরকার এই সৌচাগারটি হাটের মধ্যে প্রয়োজন। হাটের মধ্যে না করে রেলওয়ের সম্পত্তি দখল করার ষড়যন্ত্র করে এলাকার কিছু কুচক্রি মহল ভূমি দখলদাররা এই রেলওয়ের মাঠটিতে রেলওয়ের অনুমতি ছাড়া গণসৌচাগার নির্মাণ শুরু করেছিল। এই নির্মাণের আড়ালে প্রায় শত বছরের এই ঐতিহ্যবাহী মাঠটি দখল করে বানিজ্যিক ভাবে দোকান ও মার্কেট নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই মাঠে গণসৌচাগার নির্মাণ করছে। ইতি পূর্বে একইভাবে স্টেশনের পূর্বপার্শ্বে দখলদাররা বড় বড় মার্কেট করেছে। অবিলম্বে অন্য স্থানে এই গণসৌচাগার নির্মাণ করার দাবী জানান তারা।
তিলকপুর স্টেশন পোর্টাল শারমিন আক্তার বলেন, শুধুমাত্র প্লাট ফর্ম রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। রেলওয়ের স্টেট বিভাগ ভূমির বিষয়গুলো দেখেন। তারা এসে ঐ সৌচাগারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।
তিলকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও হাট কমিটির সভাপতি সেলিম মাহবুব সজলের নিকট মাঠ দখলের ব্যাপারে বক্তব্য নিতে চাইলে, বহুত কষ্টে আছি বলে বক্তব্য না দিয়ে এরিয়ে যান।
আক্কেলপুর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনজুরুল হাসান বলেন, আগের ইউএনও ও উপজেলা কমিটি মৌখিক ভাবে ঐ মাঠে কাজ করতে বলেছিলেন এজন্য কাজ শুরু করা হয়েছিল। রেলওয়ের লোকজন এসে নির্মান কাজ স্থগিত করতে বলায়, কাজ বন্ধ আছে।
আক্কেলপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এস.এম হাবিবুল হাসান বলেন, উপজেলা মিটিংয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ঐ এলাকায় একটি গণসৌচাগার জরুরি প্রয়োজন। এ কারণে গণসৌচাগারটির কাজ শুরু করা হয় কিন্তু যেহেতু রেলওয়ের সম্পত্তি তাদের কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফির্কেট নেওয়া ছিলো না এজন্য কাজ বন্ধ আছে। রেলওয়ের উর্দ্ধতনকে এব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও জন স্বার্থের কোন সমস্যা হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post