মোঃ সাইদুর রহমান,বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামে মোঃ শানু মিয়ার ছেলে মিজান। তার অন্যতম প্রতিভার মধ্যে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নাম মাত্র ২২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয় যার মাধ্যমে তার নাম হয় ভাইরাল মিজান। বর্তমানে দেখা গেছে ইউটিউব, টিকটক, ফেইসবুক সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এমনকি তিনি বর্তমানে টিভিতেও তাকে দেখা যাচ্ছে।
ছোট পর্দায় হাসিমাখা-মজাদার, দুষ্টুমি চরিত্রে অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু হয় মিজানের। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল টেলিভিশন কিংবা চলচ্চিত্র জগতে কাজ করার। এই ছোট স্বপ্নটি তখন থেকেই তাড়া করতে থাকে তাকে।
কিন্তু পারিবারিক অভাব-অনটন তার স্বপ্নের মাঝে অন্ধকার বয়ে আনছিল তখন আর মাত্র ছয় বছর বয়সে মাকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন মিজান। তবুও তিনি দমে যাননি, নিজের ছোট্ট এই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে পথ চলতে থাকেন। পারিবারিক অভাব-অনটন আর অল্প বয়সেই মাকে হারানোয় খুব একটা পড়াশোনা করতে পারেননি মিজান।
২০০৯ সালে মিজানের কর্মস্থল গার্মেন্টস পানাম গ্রুপ একটি শ্রমিক উৎসবের আয়োজন করে এবং সেই অনুষ্ঠানে জীবনের প্রথম মঞ্চে একটি নাটকের অভিনয় করেন তিনি। মঞ্চ নাটকে তার অসাধারণ অভিনয় অনুষ্ঠানে থাকা সকল মানুষের দৃষ্টি কাড়ে এবং তিনি সেরা নাট্য অভিনেতা হিসেবে পানাম গ্রুপ কর্তৃক পুরস্কার পেয়েছিলেন।
তারপর থেকে পানাম গ্রুপের সকল অনুষ্ঠানে অভিনয় এবং মঞ্চ মাতানোর সুযোগ হয় তার। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অভিনয় দিয়ে পারফর্ম করতে থাকেন মিজান। এভাবেই তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে।
এসবের পরও মিজানের একটাই ইচ্ছে ‘যদি টেলিভিশন নাটকে কাজ করতে পারতাম বড় বড় অভিনেতাদের সাথে’। এই ইচ্ছে নিয়ে অনেক পরিচালকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে তিনি এবং অনুরোধ করেন তাকে যেন টিভি নাটকে সুযোগ দেয়া হয়। কে শোনে কার কথা? তাকে তুচ্ছ ভেবে এড়িয়ে চলেন অনেক পরিচালক, টেলিভিশন কর্মীরা।
কিন্তু হঠাৎ একদিন পরিচালক ও প্রযোজক আজিম উদ্দিন আজিম খান একুশে টিভির বিশেষ ধারাবাহিক নাটক ‘হট্টগোলের সমাধান’ নাটকে অভিনয় করার সুযোগ করে দেন তাকে। এই নাটকটির মাধ্যমেই মিজানের টেলিভিশন নাটকে অভিনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। এর পর আর মিজানকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, একে একে একাধিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের আস্থা জায়গা গড়ে তুলেন তিনি।
মিজানের অভিনীত টেলিভিশন নাটকের সংখ্যা প্রায় ১৫টি। এর মধ্যে তার অভিনীত নাটক ‘হট্টগোলের সমাধান’, ‘আজব রঙ্গের মানুষ’, ‘ফাইস্যা গেছি মাইনকার চিপায়’, ‘নায়িকা’, ‘প্রবাসীর জীবন’, ‘ডিস্টার্ব হাসবেন্ড’, ‘সাধু সাবধান’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘আবির ভাই এর মাথা গরম’, ‘লায়েকের বউ’ অন্যতম। এই নাটকগুলোতে তার অভিনয় ছিল দারুণ।
অভিনয় জগতে আসা প্রসঙ্গে মিজান বলেন, ‘আজিম ভাই আমাকে তার শর্টফিল্ম এবং টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ করে দেন, এ জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি না হলে হয়তো আমার টিভি নাটকে অভিনয় করার স্বপ্নটা পূরণ হতো না’।
‘পরিচালক জুয়েল হাসান ভাই এবং জয় সরকার ভাইয়ের একাধিক নাটকে অভিনয় করে আমি দর্শকদের মাঝে ভালোবাসার জায়গা পেয়েছি, তারা সবসময় আমাকে যেকোন নাটকে অভিনয় করার জন্য বলেন, এছাড়া আমার অভিনয় জগতে পথচলার অন্যতম অবদান রয়েছে এ দু’জন মানুষের’।
ভাইরাল মিজান বলেন, অভিনেতা ইমরান হোসেন আজান ভাই আমাকে আসলে নিজের ছোট ভাইয়ের মতোই আদর করে এবং বিভিন্ন কাজে রেফার করে আমাকে আসলে তার অবদান আমার ক্যারিয়ার জীবনে অনেক তার ঋণ আসলে আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না বিভিন্ন সময় আমাকে ফোন দিয়ে ক্যারেক্টার সম্বন্ধে অনেক কিছুই আমাকে শেখায় এবং অভিনয় করার জন্য যে জিনিস গুলো দরকার সেই জিনিস গুলো আমাকে সবসময়ই সাপোর্ট করে এবং শিখিয়ে দেয় তাই ভাইয়ের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ তার ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি টিভি নাটকে অভিনয়ের প্রথম থেকেই ভক্তদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি এবং আমার কর্মস্থল পানাম গ্রুপের এমডি স্যার, আমার বন্ধুবান্ধব, পরিচালক, সহকর্মীরা আমাকে অনেক ভালোবাসেন এবং তারা সবসময় আমাকে সামনে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা জোগান। আর এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া, আমি আগামীর দিনগুলোতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা আর মেধা দিয়ে প্রতিটি কাজকে আপন করে নিতে চাই এবং আমার সকলের কাছে একটিই চাওয়া আমার জন্য দোয়া করবেন’।
Discussion about this post