বাধন রায়, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়িয়া ইউনিয়নে ডহরশংকর গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা বাক প্রতিবন্ধি রিতা রানী শীল (২৮) সদ্য একটি কণ্যা সন্তান প্রসাব করেছে। গত ১১ অক্টবর ২০২১ তারিখ এই সন্তান জন্মের পরে এলাকার মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃস্টি করেছে এবং রিতার পরিবার এই সন্তানের জন্মের জন্য আকার ইঙ্গিতে সন্তানের জন্মদাতা প্রতিবেশি নগেন্দ্রনাথ শীলের পুত্র উত্তম শীলতে (২৯) দায়ী করেছে। সে এই পরিবারে অহরহর যাতায়াত করতো। রিতার পরিবার থানায় যাবার কাথা শুনে উত্তম কুমার শীল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে। এতদিন ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি সুরহা করবেন এই প্রত্যাশায় ছিল।
রিতার পরিবারে ৫ ভাই বোনের মধ্যে রিতাসহ ৪ জন ই বাক প্রতিবন্ধি। গরীব ও অসহায় পরিবারকে এই অবস্থায় দিক শূন্য হয়ে মানুষিক যন্ত্রনা নিয়ে প্রতিকারের প্রতিক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। তবে উত্তম শীলের বাবা নগেন্দ্রনাথ শীল দাবি করেছে তার পুত্র চরিত্রহীন নয় ও এলাকার মানুষের বিপদ আপদে এগিয়ে এসে সহযোগিতা করে। তাদের সাথে রিতার পরিবার সহ আশেপাশের কয়েকটি পরিবারের সাথে জমিজামা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এই মহলের উস্কানিতেই রিতার পরিবার তার পুত্রের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন। এলাকার মানুষের দাবি এই ঘটনার সাথে জড়িত যেই থাকুক তার বিচার তারা দেখতে চায় সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে এই তথ্য সংগ্রহকালে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
বাক প্রতিবন্ধী রিতা রানীর সাথে ১০ বছর পূর্বে বড়গুনা জেলার বাসিন্দা রিপন শীলের সাথে বিবাহ হয়। সে একই ইউনিয়নে বাদুরতলা বাজারে সেলুনে কাজ করতো এবং রিতাকে দেখে পছন্দ করে বিয়ের পরে রিপন শীল স্ত্রীকে নিয়েই তার পিত্রালয় অবস্থান করে ও কোনদিনই শশুর বাড়ি যায়নি। তাদের দামপত্র জীবনে তৃপ্তি (৮), রুদ্র (৬) ও তৃষনা (৩) নামের সন্তানের জন্মের পরে রিপন শীল প্রায় ৩ বছর যাবৎ স্ত্রী ও কন্যা সন্তান রেখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
নবজাতক এই শিশুর বিতর্কিত অবস্থায় জন্ম হওয়ায় তার এখনও নাম রাখা হয়নি। ডহর সংকর গ্রামের গৌরঙ্গ শীলের ৫ সন্তানের মধ্যে রিতা, অনিতা ও শুচিত্রা এবং পুত্র সন্তানের মধ্যে গোবিন্দ ও সৌরভ। এদরে মধ্যে একমাত্র শুচিত্র ব্যতিত অন্য কোন সন্তান কথা বলতে পারে না। পুত্র সন্তান বাক প্রতিবন্ধী গোবিন্দ নরসুন্দরের কাজ করে স্বল্প আয়ের উপরে এই অসহায় পরিবারটি নির্ভর করছে। এদের পিতা গৌরঙ্গ শীল (৭২) বয়সের ভাড়ে এখন আর কোন কাজ করতে পারে না। এই পরিবার টি পরিচালনা কারি উত্তম গৌরঙ্গ শীলের স্ত্রী উষা রানি শীলের উপরে এবং তিনি এই অবস্থায় অর্থ সম্বল না থাকায় প্রতিবন্ধী সন্তানদের বোঝা সামলাতে এই অবস্থায় প্রতিকারের পথ খুজে পাচ্ছে না। রিতার মা উষা রানী শীল জানায়, শিশু জন্মের তিন মাস পূর্বে রিতা অসুস্থ হয়। এবং তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে প্রথমে তার পেটে টিউমার রয়েছে বলে ডাক্তার সন্দেহ করেন। পরবর্তিতে আলট্রাসোনোগ্রাম করার পরে তার পেটে বাচ্চা জন্মের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। রিতার বাবা গৌরঙ্গ শীল জানায়, সে থানায় গেলে রাজাপুর উপজেলাার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ তাদের উপজেলা পরিষদে ডেকে নিয়ে যায় এবং তৃতীয় এক ব্যক্তি ৫০০০০ হাজার টাকা নিয়ে এউ ঘটনা নিষ্পত্তি করার জন্য প্রস্তাব দেয়। কিন্তু গৌরঙ্গ শীল এই সন্তানের পিতৃত্ব শিকার না করলে কোন সালিশ তিনি মেনে নিবেন না বলে চলে আসে। উত্তম শীলের পিতা নগেন্দ্রনাথ শীল জানায় তার পুত্র নিদোর্ষ এবং কারো উস্কানিতে তার ছেলেকে এই ঘটনার সাথে জড়ানোর চেষ্টা করছে। তার ছেলে পলাতক কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন রিতার পরিবারের কয়েকজন এলাকার ইউপি সদস্য ডেকেছে এই কথা বলে নিয়ে যায় এবং এর পর থেকে তার কোন খবর পাওয়া যায়নি।
এই ব্যপারে একই এলাকার বাসিন্দা রুনা লায়লা ও সাবিত্রী রানি এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন। ইউপি চেয়ারম্যান জালাল হোসেন ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান চন্দ্র শেখর মুঠোফোনে জানান তারা এই ঘটনায় কোন সালিশের পদক্ষেন নেয় নি কারণ উত্তম কে না পাওয়া গেলে এবং তার কথা শোনা না পর্যন্ত এই বিষয় কোন ধারণা নেওয়া যাচ্ছে না। মুঠোফোনে রাজাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম জানান তিনি এই ঘটনাটি জানেন। কিছুদিন পূর্বে রিতার বাবা গৌরঙ্গ শীল থানায় এসেছিল। তিনি পরে লিখিত নিয়ে আসবেন বলে চলে যায় এবং তারপর থেকে তিনি আর কখনই থানায় আসেনি। আমরা কোন অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
Discussion about this post