মনিরুজ্জামান মনির, যশোর সদর উপজেলা প্রতিনিধিঃ
যশোরে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে শহরে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষের ঢল নেমেছে।আজ বৃহস্পতিবার যশোর শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য সোনার জন্য গ্রাম মহল্লা এবং জেলা উপজেলা থেকে পায়ে হেটে, বাইসাইকেলে এবং বিভিন্ন যানবহনে শহর মুখি হয়েছে মানুষ। সকাল থেকেই এক রঙ্গের টিশার্ট গায়ে পরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ এবং কৃষকলীগের বহর নিয়ে বাদ্য যন্ত্রের তালে তালে নৌকা এবং শেখ হাসিনা স্লোগানে শহর কানাই কানাই ভরে যায়। দলের নেতা কর্মিরা বিভিন্ন সাজে সেজে এবং শরিরে নৌকা আঁকিয়ে নেচে নেচে মহাসমাবেশে এসেছে। আবার অনেকে মাথার চুলে কাটিংয়ে নৌকা তৈরি করেছে। আবার দেখা যায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত আওলীগের নেতা কর্মীরা পিকআপে সাজিয়েছে নৌকা দিয়ে। তিন চাকার ছোট গাড়িতে নৌকা বানিয়ে এবং মটরসাইকেলেও নৌকা বানিয়ে প্রধান মন্ত্রীর দেখানোর জন্য এসেছে অনেক ভক্তরা। কিন্তু অনেকের মনের আসা পূর্ণ হয়নি। রেজাউল নামের একভক্ত বলেন অনেক দিন ধরে এ নৌকাটি তৈরি করেছি আমার নেত্রীকে দেখানোর জন্য। কিন্তু আজ আমার মনের আসা পূর্ণ করতে পারিনি। যশোর দড়াটানা মোড়ে চারি পাশের রাস্তা থেকে দেখা যায় সকাল থেকে শ্লোগান মুখরিত মিছিল। আবার কোর্ট মোড়েও সকাল থেকে শ্লোগান মুখরিত মিছিল দেখা যায়। বেলা ১১টার মধ্যে স্টেডিয়াম মাঠসহ বিভিন্ন কলেজ স্কুল এবং রাস্তার ওলিগলি মানুষে ভরপুর হয়ে যায়। যে দিকে তাকায় সেদিকেই দেখা যায় নেতাকর্মিদের মিছিল এবং শ্লোগান।
যশোর শহরের চারিদিকে রাস্তার ছায়িডে, খেলার মাঠে, বাস টার্মিনালে স্কুল-কলেজের মাঠে নেত্রীর কথা শোনার জন্য বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মিদের আসা যানবহনের স্তুব পড়ে যায়। যশোর উপশহর খেলার মাঠ, রাস্তার পাশে এবং ঈদগাহ মাঠে বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকারে ভরে যায়।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। কোনো সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। আমরা পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি । রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সামনের দিনেও কোনো সমস্যা হবে না। কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাহীন থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি, তখন থেকে সিদ্ধান্ত নিযে থাকি একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। এবার আমরা ক্ষমতায় এসে ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। ঘর পেয়ে মানুষের জীবন পাল্টে গেছে। জাতির পিতার আশা পূরণ করেছি। তিনি বলেন, ‘কারও জমি যেন অনাবাদি না থাকে। সব জমি আবাদ করতে হবে। যাতে আমাদের খাদ্য ঘাটতি না হয়। কারও কাছে চেয়ে চলতে না হয়। যার কাছে যা আছে তা দিয়ে কিছু উৎপাদন করেন।
যশোরে জনসভা করতে পেরে তিনি আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানকার মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছে। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল যে লাশটা পর্যন্ত টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে দারিদ্র্য বিমোচন ট্রেনিং সেন্টার করা হচ্ছে।
মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি কিছু দিতে পারেনি। বিএনপি কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
তিনি বলেন, বিচার পাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে হারিয়েছি। তারপরও এবাংলায় ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আমার লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। একের পর এক ক্যু (অভ্যুত্থান) হয়েছে। এর সঙ্গে জিয়া-মোশতাক সবাই জড়িত। জিয়া-মোশতাক সবাই খুনি। আমি বিচার চাইতে পারিনি। তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি একটা কারণে, জাতির পিতা, আমার পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। সেজন্য আমার লক্ষ্য ছিল, এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। বারবার ক্ষমতায় এসেছি বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। বিএনপি দিয়েছে অস্ত্র, খুন, হত্যা। শুধু হত্যা আর খুন ছাড়া কিছু দিতে পারেনি বিএনপি। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। জিয়া যখন মারা যান, কিছু রেখে যাননি। ভাঙ্গা বাক্স আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সেজন্য তার সাজা হয়েছে। অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্রসহ ধরা খেয়েছে, সেখানেও তার সাজা হয়েছে। ২১ই আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমিসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছে। আর খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে আজ সাজাপ্রাপ্ত। আর সাজাপ্রাপ্ত নেতা জনগণকে কী দিতে পারে? তারা কিছুই দিতে পারে না, শুধু রক্ত চুষে খেতে পারে। ‘যশোরে বিএনপি উন্নয়নের কিছুই করেনি। পঁচাত্তরের পর এদেশে আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু থেকে যেন যশোর আসতে পারে সেই রেললাইনের কাজ চলছে।’
নির্বাচনে যশোরের সবকটি আসন থেকে নির্বাচিত করায় যশোরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। সেখানে যুবকদের অনেক কর্মসংস্থান হবে। যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সেখান থেকে বিনা জামানতে তিন লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যায়। এটা নিয়ে নিজেরাই ব্যবসা করতে পারবে। এখনকার যুগে কেউ বেকার থাকবে না। সেই সুযোগটা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশ করোনা ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়নি। আমিই দিয়েছি। এই করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ বিমান পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সামগ্রী এনেছি। যে গম ২০০ ডলারে কিনতাম, তা এখন ৬০০ ডলার। যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে। তারপরও আমরা কিনে এনেছি, যাতে খাদ্য ঘাটতি না দেখা দেয়। এজন্য আমি জমি অনাবাদি না রেখে উৎপাদন করার কথা বলেছি।
তিনি বলেন, যশোরে ভবদহ জলাবদ্ধতা দূর করার প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার আমরা দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ফলে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর হবে। ৮২ কিলোমিটার নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে কাজ হাতে নিয়েছি। কপোতাক্ষের মতো ভবদহে জলাবদ্ধতা যেন না থাকে, সে বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নেবো।
আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যশোর সদরের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহম্মেদ, স্থানিয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভোট্টচার্য, চৌগাছা ঝিকরগাছা সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন, সে¦চ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভোট্টচার্য, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামিম, শার্শার সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, নড়াইল আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান শিলু, ঝিনাইদাহ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল করিম মিন্টু, কুষ্টিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য পারভিন জামান, ব্যারেষ্টার বিপ্লব কুমার বড়ুয়া, ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন , শরিয়তপুর এক আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হাসান অপু, বাঘেরহাট ৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বাঘেরহাট ১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বাঘেরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, কেন্দীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুবুল আলম হানিফ, কেন্দীয় আওয়ামীলীগের সংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খুলনা ২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, পীযুষ কান্তি ভোট্টচার্য, জাহাঙ্গির কবির নানক, প্রমুখ।
সর্বশেষ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষেও জনগনের ফিরতি মূখি শহরের বিভিন্ন রাস্তায় কয়েক ঘন্টা নেতাকর্মিদের এক রঙ্গের টিশার্ট পরা মানুষের ভিড়।
Discussion about this post