দেলোয়ার হোসেন রাজিব,ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহে চাঞ্চল্যকর সৌরভ হত্যার রহস্য উন্মোচন, হত্যাকারী গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ ও ডিবি। সুতিয়াখালী নদীর ব্রিজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় একটি লাগেজ ও পাশেই স্থলভাগে একটি মানুষের মাথা দেখতে পেয়ে স্থানীয় জনতা থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ উপস্থিত হয়। খালে মানুষের মাথা ও পাশেই পানিতে ভাসমান লাগেজ উদ্ধার করে লাগেজ খুলে চার টুকরা পুরুষের খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন : ময়মনসিংহে যুবকের খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার
থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশে অন্যান্য ইউনিট পিবিআই, সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেন। তবে তাৎক্ষণিক লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য বিভিন্ন ইলেট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ জেলা পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুকে সংবাদ পোস্ট করা হয়। ঘটনাস্থলে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে লাশের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহের নিমিত্তে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ভিকটিমের আত্মীয় স্বজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম এর মুখমণ্ডল, পড়নের কাপড়চোপড় এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন। নাম ওমর ফারুক সৌরভ (২৪), পিতা-মোঃ ইউসুফ আলী, মাতা-মাহমুদা আক্তার পারুল, গ্রাম তারাটি, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।
বর্তমান পোস্টার কলোনি, থানা-মতিঝিল, ডিএমপি ঢাকা। পরে সৌরভের পিতা বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মামলা দায়ের পর ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশের একটি টিম উক্ত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও আসামি গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামেন।
তথ্য প্রযুক্তি ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে উক্ত হত্যাকাণ্ডের মূল হত্যাকারী ইলিয়াছ আলী বর্তমানে গোহাইলকান্দি (প্রাইমারি স্কুল সংলগ্ন), ময়মনসিংহ, আহাদুজ্জামান ফারুক(৩০), চর হোসেনপুর, ময়মনসিংহ এবং লাশ বহনকারী গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল হান্নান আকন্দ (৬৫), চান্দুরা (স্বর্গীয় বিরাজ প্রফেসরের বাড়ির পাশে), নান্দাইল, ময়মনসিংহ, বর্তমান বলাশপুর, হাক্কানী পশ্চিম মসজিদের মোড় (আব্দুল হান্নান এর বাসার ভাড়াটিয়া) ঢাকা ও ময়মনসিংহ ধোবাউড়া থানা এলাকা থেকে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেন।
আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যায়, আসামি ইলিয়াছ ও ওমর ফারুক সৌরভ আপন চাচা ভাতিজা। আসামি ইলিয়াছ এর মেয়ে ইভা আক্তারকে ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) গোপনে বিবাহ করে। ইভার ডিসিষ্ট ওমর ফারুক সৌরভ এর সাথে বিবাহের পূর্বে অন্যত্র বিবাহ হয়েছিল। বিষয়টি পরবর্তীতে ইভার বাবা মা জানলে তাহার চরম ক্ষেপে যায় এবং এই বিবাহ কোনোভাবেই মেনে নিবে না বলে জানায়।
এই ঘটনা নিয়ে ইলিয়াছ এর আপন ভাই ইউসুফ (ডিসিষ্ট এর বাবা) এর সাথে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। দুইজনের মধ্যে বাক তর্ক হয় এবং ওমর ফারুক সৌরভকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আসামি ইলিয়াছ তার মেয়ে ইভাকে গত মে মাসের মাঝামাঝি পড়াশুনার জন্য কানাডা পাঠায়।
ডিসিষ্ট ওমর ফারুক সৌরভ ময়মনসিংহ আসে এবং চাচাতো ভাই মৃদুল (১৭) (আসামি ইলিয়াছ এর ছেলে) কে ফোন দিলে, মৃদুল সৌরভকে কোতোয়ালি মডেল থানাধীন গোহাইলকান্দি (প্রাইমার স্কুল সংলগ্ন) বাসায় আসতে বলে। সৌরভ বাসায় গেলে চাচা ইলিয়াছ বাসার নিচ তলায় একটি ভাড়া করা কক্ষে নিয়ে হাত পা বাঁধে। আগে থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ইলিয়াছ এর শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) কে ফোন করে ময়মনসিংহ বাসায় ডেকে নিয়ে আসে এবং এক পর্যায়ে দুজন মিলে সৌরভকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মাথায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে লাশ বাথরুমে রাখে।
লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করে ময়মনসিংহ গাঙ্গীনারপাড় হতে ট্রলি ব্যাগ (লাগেজ), পলিথিন ও হ্যান্ড গ্লাস কিনে বাসায় নিয়ে যায়। বাথরুমে রাখা সৌরভ এর মৃত দেহের শরীর হতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা এবং দুই পায়ের ঊরু বিচ্ছিন্ন করে পলিথিনে প্যাকেট করে লাগেজের মধ্যে ভরে। মাথাটি স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে একটি শপিং ব্যাগে রাখে। লাগেজ ও শপিং ব্যাগে রাখা মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে আসামি ইলিয়াছ আলী ও আহাদুজ্জামান ফারুক একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে প্রাইভেটকারের ব্যাগ ডালার ভিতরে নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানাধীন মনতলা ব্রিজের উপর হতে সুতিয়াখালী নদীতে ফেলে দেয়। মামলাটি কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করছে ।

































Discussion about this post