নিলয়, স্পোর্টস ডেস্ক:
আসন্ন আইসিসি বিশ্বকাপে খেলবেন বলেই এশিয়া কাপের ঝুঁকি নেননি তামিম ইকবাল। ইচ্ছে ছিলো সতীর্থ সাকিব-মুশফিকের মতোই পঞ্চম বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। ব্যাট হাতে দলকে উজ্জীবিত করে রাঙ্গাতে চেয়েছেন ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। আরও একবার বিশ্বমঞ্চে লাল সবুজের প্রতিনিধি হতে চেয়েছেন। ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক রান উপহার দেওয়া তামিম চেয়েছেন দেশকে আরও বেশি কিছু উপহার দিতে। তবে ভাগ্যের নিয়তি সবাইকে মেনে নিতে হয় তামিমও তার ব্যতিক্রম নয়। নিয়তির কাছে হার মেনে গত চার বছরের বাঁধা স্বপ্নগুলো পূরণ হচ্ছে না দেশ সেরা এ ওপেনারের। সাকিব-মুশফিকের পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণ হলেও অধরাই থেকে গেলো তামিমের স্বপ্ন। লাখো কোটি তামিম ভক্তদের প্রশ্ন এখন একটায় যদি বিশ্বকাপেই না খেলবে তাহলে অবসর ভেঙ্গে কেনো ফিরলেন তামিম?
চলতি বছরের জুলাইতে দেশের মাটিতে চলমান আফগানিস্তান সিরিজের মাঝেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তামিম ইকবাল। সেদিন তামিমের অবসরকাণ্ডে সরগরম হয়ে উঠেছিলো দেশের ক্রিকেট। অবসরের পরের দিন বড় ভাই মাশরাফির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে আবারও ক্রিকেটে ফিরেছিলেন চট্টলার খান সাহেব। এরপর নিজের চোটের ইনজুরি সারাতে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেন বাঁহাতি এ ব্যাটার। লক্ষ্য ছিল দ্রুতই সুস্থ হয়ে বিশ্বকাপে খেলা। নিজের উপর চাপ কমাতে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ও ছেড়েছেন তামিম। এতসবের পরও বিশ্বকাপ দলে জায়গা হলোনা দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা তামিম ইকবালের। ফলে এই প্রথম বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কোনো ক্রিকেটার ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
নানা নাটকীয়তার পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঘোষণা করা হয় বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল। যেখানে জায়গা হয়নি তামিমের। তামিমের বিশ্বকাপ দলে জায়গা না হওয়ার পেছনে আরো একবার সাকিব–তামিম দ্বন্দ্বকে দায়ী করা হচ্ছে। পিঠের ইনজুরি থেকে ফিরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। প্রত্যবর্তনের সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টির কারণে ব্যাট করতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছিলেন ৫৮ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। কিন্তু এই ইনিংস খেলার পর সংবাদ সম্মেলনে জানান ইনজুরি নিয়ে তার অস্বস্তির কথা। আর সেটাই যেন কাল হলো তামিমের জন্য। এই সংবাদেই নাকি বেজায় চটেছেন সাকিব। এক পর্যায়ে অধিনায়কত্বও ছাড়তে চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তামিমকে বাদ দিয়েই ঘোষণা করা হলো বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দল। যেখানে তার বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে তানজিদ হাসান তামিমকে।
সতীর্থ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম নিজের পঞ্চম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায়। ২০০৭ সালে তাদের তিনজনের বিশ্বকাপের সফর শুরু হয়েছিল। এরপর ২০১১, ২০১৫, ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন দু’জন। এবার খেলতে যাচ্ছে ২০২৩ বিশ্বকাপ যেখানে সাকিব মুশফিক থাকলেও নেই তামিম। তাদের সঙ্গে থাকতে পারতেন তামিমও।ইংল্যান্ডের ফার্স্ট বোলার জোপরা আর্চার ইনজুরির জন্য স্কোয়াডে জায়গা পাননি। তবে দলের সঙ্গে ভারত এসেছেন। জানা যায় কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনও শতভাগ ফিট নন এরপরেও ভারত বিশ্বকাপে আছেন দলের মধ্যেমণি হয়ে। বাংলাদেশ দলের সফরসঙ্গী করেও কি দলের সঙ্গে রাখা যেতো আন তামিমকে?
গণমাধ্যমে গুঞ্জন রয়েছে কোচ হাথুরুসিংহে ও টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কোন আনফিট খেলোয়াড়কে দলের সঙ্গে রাখতে চান নাই। তাদের চাওয়াতেই নাকি স্কোয়াডে যুক্ত করা হয়নি দেশসেরা ওপেনারকে। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে তামিমের ৪৪ রানের ইনিংস বলে দেয় বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত ছিলেন তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর পূর্ণাঙ্গভাবে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় তামিমকে। ২০২৩ বিশ্বকাপের এক বছর আগে অধিনায়কত্ব দেওয়া মানে তামিমকে ঘিরেই ভারত বিশ্বকাপের পরিকল্পনা ছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবিরও। তবে এর মাঝেই চোটের ইনজুরিতে পড়ে যেনো সব শেষ হয়ে যায় দেশ সেরা এ ওপেনারের। আবারও একই প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়, তবে অবসর ভেঙ্গে কেনো ফিরলেন তামিম?
Discussion about this post