যশোর জেলা প্রতিনিধি, মনিরুজ্জামান মনির :
ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস কৃষকদের কোন কাজে আসে না। অনেক কৃষক জানেই না ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবহাওয়া পূর্বাভাস জানা যায়। আবহাওয়া পূর্বাভাসের বোডের পয়েন্ট গুলো সম্পর্কে ধারণা নেই কৃষকদের। খামাকা এ পূবাভাস ঝুলানো রয়েছে। প্রতিটা ইউনিয়নে রয়েছে আবহাওয়া পরিমাপ করার যন্ত্রপাতি। আবহাওয়া সম্পর্কে জানার জন্য কোন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি কৃষকদের। আবার অধিকাংশ কৃষকদের দাবি এ আবহাওয়া সংকেত সম্পর্কে কোন ধারনা নেই তাদের। কৃষকদের বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে হয়। বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি ইউনিয়নের আবহাওয়া সংকেত। কৃষকদের দাবি সবজি চাষের জন্য আবহাওয়া সম্পর্কে প্রতিনিয়ত খবর রাখা খুবই প্রয়োজন। কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট হতে কৃষকরা নিয়মিত আবহাওয়া সম্পর্কে জানতে চাই। অনেক সময় মোবাইল থেকে জানলেও সঠিক হয় না এমনটাই দাবি কৃষকদের। কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট হতে জানলে কৃষকদের মনে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
সরে জমিনে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের যে আবহাওয়ার বোর্ড ঝুলানো আছে তার সাথে আবহাওয়া কোন মিল নেই। আবার এ বোর্ড দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন হাত পড়ে না এ বোর্ডে। ধুলা বালিতে পরিপুর্ণ হয়ে আছে। এদিকে হৈবতপুর, লেবুতলা এবং কাশিমপুর ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি নিয়মিত না হলেও আবহাওয়া পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু দেখা যায় তিন ইউনিয়নের আবহাওয়া বোর্ডের কোন মিল নেই। এমন কি কৃষি কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বরও পরিবর্তন করা হয়নি। নতুন করে কৃষি কর্মকতাদের মোবাইল নম্বর দেওয়া নেই। পরিবর্তন হয়ে গেছে এমন কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে এখনো।
লেবুতলা গ্রামের কৃষক আ. আজিজ জানান, ১ বিঘা ১২ কাটা জমিতে আগাম বাধা কপির চাষ করেছি। কিন্তু কোন দিন কৃষি অফিসারদের দেখা পাইনি। তাদের সব কিটনাশকের দোকানে দেখা যায়। তারা আবার মাঠে আসবে কখন। আবহাওয়া সম্পর্কে কৃষি স্যারদের কাছ থেকে কোন তথ্য আমরা পাই না। ইউনিয়ন পরিষদে যে আবহাওয়ার বিষয় দেওয়া আছে তা আমরা বুঝিও না। আবহাওয়া সম্পর্কে জানালে খুব ভালো হয়। আসপাশ থেকে আবহাওয়া সম্পর্কে যা জানি অনেক সময় তা সঠিক হয় না।
আব্দুল পুর গ্রামের কৃষক সেলিম হোসেন জানান, আবহাওয়া সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তা আমাদের কিছু বলে না। আমরা এখন মোবাইল থেকে দেখি। তবে আবহাওয়া সম্পর্কে জানা সবজির জন্য খুব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। এবছর বাঁধাকপি এবং ফুলকপির চারা তৈরি করেছি কিন্তু তাদের দেখা পাইনি। ভালো মন্দ পরামর্শ তো দুরের কথা।
কাশিমপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, আবহাওয়া বোর্ড পরিবর্তন নিয়মিত হয় না। মাঝে মধ্যে করা হয়। আজ করেছেন কিনা ১২ টার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বিজয়নগর মাঠে আছি। আজকে এখনো অফিসে আসতে পারিনি।
হৈবতপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসান আক্তার জানান, আহাওয়া বোর্ড নিয়মিত করার চেষ্টা করি। তবে মাঝে মধ্যে করা হয় না। অনেক সময় আমরা অনেক কৃষকদেরকে মোবাইল ফোনে কথা বলে আবহাওয়া সম্পর্কে জানানো হয়। আমরা সর্ব সময় কৃষকদের পাশে থাকার চেষ্ট করি। তবে সব কৃষকের মন জয় করা সম্ভব হয় না। এজন্য আমাদের বিষয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলে। আমরা তো ইউনিয়নের কৃষকদের জন্যই আছি।
লেবুতলা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামিম হোসেন বলেন, আবহাওয়া বার্তার চার্টটা নিয়মিত করা হয় না। তবে বৃষ্টির সময় করা হয়।
কয়েক দিনের মধ্যে পরিবর্তন করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে পরিবর্তন করা হয়নি। কৃষকদের আবহাওয়া সম্পার্কে কোন সতর্ক করেন কিনা এবং মোবাইল অ্যাপস’র মাধ্যমে বার্তা দেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, মাঝে মাঝে জানানো হয়। কিন্তু মোবাইল অ্যাপস’র মাধমে বা ফোন করে সতর্ক করা হয় না। ইউনিয়ন পরিষদের আবহাওয়া চার্ট কৃষকেরা বোঝে কিনা বা কোন দিন বুঝিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, কৃষকেরা এটা বোঝে না।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের আবহাওয়া বোর্ডে নিয়মিত আপডেট করা হয়। কিন্তু লেবুতলা, কাশিমপুর এবং হৈবতপুর ইউনিয়নের আবহাওয়া একই হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু খুব বেশি দুরত্ব না সেহেতু ৩ স্থানের আবহাওয়া একই হবে। আমরা সর্ব সময় নির্দেশ দিয়ে থাকি এটা নিয়মিত করার জন্য। তাহলে লেবুতলা, কাশিমপুর এবং হৈবতপুর আবহাওয়া একই হবে। আবহাওয়া পরিবর্তন যে করে না এ বিষয়ে আমার জানা ছিলো না। তবে কৃষকদের আবহাওয়া সম্পর্কে জানানো আমাদেরই দায়িত্ব। এবার নিয়মিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে।
যশোর জেলার কৃষি উপপরিচালক মঞ্জরুল হক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ হলো জনবহুল জায়গা। এখানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনেক মানুষ দেখতে পারে। আমাদের নির্দেশনা আছে প্রতিদিন আপডেট করা। তবে এটা দেখা শুনা করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। ইউনিয়নের কৃষকদের আবহাওয়া সম্পর্কে জানানো ইউনিয়ন ভিত্তিক কৃষি কর্মকর্তাদের নৈতিক দায়িত্ব। ইউনিয়নের আবহাওয়া বার্তার সাথে কোন মিল থাকার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউনিয়নে যদি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন না হয় তা হলে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post