শাহারুখ আহমেদ-
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ৮নং ওয়ার্ডের জয়রামপুর এলাকায় ৩য় শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তা মোঃ মিজান (৫৫) এর নিজ বাড়িতে ৭ই জুন রবিবার ভোরে ঘটে যাওয়া রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের মা “শ্রী বানু রানী (৫৩)” ও সন্তান “শ্রী অপূর্ব (১৭)” মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
যদিও নানা পক্রিয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি সুনিশ্চিত ভাবে মোবাইল বিস্ফোরণ থেকে সূত্রপাত হওয়ার প্রচার চালানো হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে দুর্ঘটনাটি হত্যাকান্ডের দিকে ঈঙ্গিত দিচ্ছে। নানা সমালোচনার প্রেক্ষিতে সরেজমিনে পর্যবেক্ষন কালে বেড়িয়ে আসে সন্দেহের শিকর বাকর।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে দেখা যায় শোয়ার ঘরের সকল আসবাবপত্র কিছু অংশ হলেও পোড়ে গেছে। কিন্তু অক্ষত রয়েছে প্রতিটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে মোবাইল, লেপটপ বা কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্র বিস্ফোরণের দ্বারা অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত হয়নি। তবে সুত্রপাতের সঠিক কারন তাদের অজানা অথবা গোপন রাখার প্রচেষ্টা। তারা আরো জানায়, ঘটনার দিন সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের খবর দেয়া হলে তারা উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সোনারগাঁ থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা এসে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে জানিয়ে যায়।
পরক্ষণে সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের অফিসার সুজন কুমার হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে বেড়িয়ে আসে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য, তিনি বলেন আমাদের কোনো সদস্য ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো না। এমনকি থানায়ও কোনো রিপোর্ট দেয়া হয়নি। তবে ঘটনার দিন অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলে অগ্নিকাণ্ডের কথা বলে ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য বলা হয়, তার কিছুক্ষণ পরেই পুনরায় একই নাম্বার থেকে ফোন করে বলা হয় ইতিমধ্যে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তাই ফায়ার সার্ভিস টিমও ঘটনাস্থলে না গিয়ে পুনরায় ফায়ার স্টেশনে চলে আসে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের মতে, একই ঘরে পূর্বেও একাধিক বার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, তাদের মতে ঐ ঘরের গ্যাসের চুলার সাথে গ্যাস সংযোগের লুস কানেকশন ছিলো তাই সর্বদা গ্যাস লিক হতো, স্বভাবতই রাতে ঘুমানোর সময় দরজা জানালা সব কিছু বন্ধ থাকে তাই সারা রাত গ্যাস নির্গমন হয়ে পুরো ঘরে গ্যাস বিরাজমান থাকে। যেহেতু দুজনই হিন্দু ধর্মাবলম্বি ছিলো তাই প্রতিদিনই কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে আগর বাতি ও ধুপ পোড়িয়ে পূজা করতো। আর সেই পূজার আগুন থেকেই একাধিক বার অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ৭ই জুন এর পূর্বে ঘূর্ণিঝড় আম্পান চলা কালেও অগ্নিকাণ্ড ঘটে তখন আশেপাশের প্রতিবেশী সকলেই বাড়ির মালিক মিজানকে গ্যাস লাইনের লিক সারানোর জন্য বলে কিন্তু মিজান কোনো সমাধান করেনি। তার কিছুদিন পর একই পক্রিয়াতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে তখন মৃত বানুর দেহের নিচের অর্ধাংশ পোড়ে যায়, তাতেও বাড়িওয়ালা মিজান কোনো সমাধান করেননি। শেষ বারে তীব্র আকারে অগ্নিকাণ্ড ঘটায় মা ও সন্তান দুজনেই প্রান হারায় অথবা পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়। প্রতিবেশীদের মতে, কোনো মানুষ একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের পর সমস্যা সমাধান না করে চুপচাপ বসে থাকবে না। তাই সকলের সন্দেহ বাড়িওয়ালা মিজান ও তার পরিবারের দিকে।
পরবর্তীতে ১৩ ই জুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে ঘরের ভিতর গ্যাস লাইনের যেই অংশে লিক ছিলো সেই অংশ সারানোর আলামত পাওয়া যায়। অনেকটা যেন প্রমান লুকোনোর চেষ্টা। সব মিলিয়ে জনমনে তীব্র সন্দেহ তৈরী হয়েছে
অন্যদিকে বাড়িওয়ালা মিজান সরকারি কর্মচারী হিসেবে প্রায় দুই (২) যুগ সোনারগাঁ উপজেলায় অবস্থান করছে। তাছাড়া সোনারগাঁ পৌরসভার উন্নত এরিয়াতে জমিজমা ক্রয় করে বসত বাড়ি স্থাপন করে নিয়েছে। তার সন্তানাদী ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করলে মনে হয়না তিনি একজন ৩য় শ্রেনীর সরকারি কর্মচারী।
দুজন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যুর পরও ঘটনাটি বেশ গোলমেলে অবস্থা। এই ব্যপারে সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন,
ঘটনার দিন থানা থেকে ফোর্স পাঠানো হয়েছিলো এবং তারা পরিদর্শন করে দুর্ঘটনা বলে ধারনা করে। বর্তমানে বিষয়টি সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে, তারা পর্যবেক্ষন করে রিপোর্ট জানালে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করব।
কিন্তু ৭ দিন পর এখনো পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষনের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি তারাও সাধারণ দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।




































Discussion about this post