কাঁঠালিয়া উপজেলা সংবাদদাতা:
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় সরকারের কৃষি প্রণোদনা বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি জাহিদুল ইসলাম বসির উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিরুদ্ধে। বরিশাল খামার বাড়ি -পরিচালকের কাছে মুঠোফোনের মাধ্যমে অভিযোগ করেন কৃষি প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত কাঠালিয়া বটতলা বাজারে অনেকে।
ইউনিয়নের বটতলা বাজারে ঐ গ্রামের কৃষক’রা লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, আমি (নাসির) সহ আমার গ্রামের প্রকৃত কৃষকরা কাঠালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষি ও কৃষক সমাজের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিনামূল্যে দেয়া বিভিন্ন কৃষি উপকরণের কৃষি প্রদর্শনী চাষসহ প্রণোদনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমরা কোনো প্রকার বরাদ্দ ও সুযোগ-সুবিধা পাই না। এতে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন-কল্যাণে সরকারের মহতী উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে আমি কৃষক হিসেবে বুঝতে পেরেছি। আমি ছাড়াও কাঠালিয়া সদর ইউনিয়নের বেশিরভাগ প্রাপ্তিক কৃষক সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
মুঠোফোনে মাধ্যমে অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, কাঠালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের জাহিদের স্ত্রীর নামে তার নিকটাত্মীয়দের সরকারের বরাদ্দকৃত কৃষি উপকরণ, প্রণোদনা ও প্রদর্শনী প্লটের বরাদ্দসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণে ব্যাপক অনিয়ম করে আসছেন। যা মাঠপর্যায়ে তদন্ত করলে প্রদর্শনী প্লটে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়বে। কৃষি খাতের উন্নয়েনে সরকারের মহতী কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা এ ধরনের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অনিয়মের কারণে ব্যাহত হচ্ছে।
এ এলাকার সরকারি সুবিধাবঞ্চিত কৃষকদের জোর দাবি, কাঠালিয়া সদর ইউনিয়নে কৃষি অফিসের মাধ্যমে বাস্তবায়িত কৃষি প্রকল্পসমূহ সরজমিন তদন্ত ও প্রকৃত কৃষকরা যাতে সরকারি কৃষি সুবিধা পায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এছাড়াও, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের জন্য তারা হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
সরেজমিনে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পকেটে, সার অর্থাৎ সরকারি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশও কৃষকেরা পাননি। বেশির ভাগ কৃষকই জানেন না, তাদের জন্য সরকার কী পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে এবং কৃষকেরা পাচ্ছেন কতটুকু। তারা বলছেন, ‘আমরা তো এত কিছু জানিও না, আর বুঝিও না। কৃষি অফিসে বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে পরে আর কিছুই দেয় না।’কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরিষা, খেসারি, মসুর, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে এবং কৃষকদের সব বরাদ্দ পূর্ণভাবে বন্টন করা হয়েছে।
কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই অফিসের একটি সূত্র বলছে, উন্নত মানের ধান, গম, পাট ও ভুট্টার বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে ৫ বছরের একটি প্রকল্প রয়েছে। যে প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ জন কৃষককে ৫ একরের একটি করে প্রদর্শনী প্লট দেওয়ার কথা। প্রতিটি গ্রুপ ১৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। হেক্টরপ্রতি কৃষকের জন্য যে পরিমাণ বীজ, সার, কীটনাশক, টাকাসহ যেসব উপকরণ দেওয়ার কথা, তা-ও দেওয়া হয়েছে নামমাত্র।
এ ছাড়া জিকেবিএসপি, কন্দাল ফসল, এনএটিপি-২, তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের মাধ্যমে রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। প্রতিটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন কৃষক। ওই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কৃষকের জন্য খাবার বাবদ বরাদ্দ ৪০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ৬৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০০ টাকা দামের ১ প্যাকেট বিরিয়ানি আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকার একটি ব্যাগ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম বসির উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষক বরাদ্দের কোনো কপি আমাদের দেওয়া হয় না। অফিস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, আমরা ডায়েরিতে নোট করে নিই।’তিনি আরো বলেন, আমি কোনো সরকারি মালামাল বিক্রি করিনি, সঠিক তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে কারা সরকারি মালামাল বিক্রি করে দেয়
এ বিষয়ে কাঠালিয়া উপজেলা কৃষি কমর্কর্তা তানজিলা বলেন, এখনো আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
Discussion about this post