বাধন রায়, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠির নৌ- দূর্ঘটনায় সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪০ জন নিহত হয়েছে এবং দেড় শতাধিক যাত্রী আহত হয়ে ঝালকাঠি- বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর দিয়াকুল নামক স্থানে ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচলকারী ৫ শতাধিক যাত্রীবাহি লঞ্চ এমভি অভিযান-১০য়ে আগুন লাগে দিবাগত শুক্রুবার ভোর রাত সাড়ে ৩টায় মেশিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং মূহর্তে লঞ্চটির সকল তলায় আগুন লেগে যায়। লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিল। এই ঘটনার পরপর ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ শুরু করে এবং আহতদের জেলার সকল স্থান থেকে মাইক্রোবাস সংগ্রহ করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী ১৪৩ জনকে বরিশাল সেবাচিন এবং ৭ জনকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এই ঘটনার পরপরই মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল আহম্মেদকে আহবায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ছে এবং তারা ৩কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন। খবর পেয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঝালকাঠি আসেন এবং ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। তিনি অগ্নিকান্ডের তদন্ত করে দায়ি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। এছাড়া এই ঘটনায় নিহত পরিবারকে দেড় লক্ষটাকা ক্ষতিপূরণ ও নিহতদের দাফনের জন্য আরও ২৫ হাজার টাকা প্রদানের ঘোষনা দেন। আহত পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করার কথা বলেন। এদিকে বিআই ডব্লিউ টি এর উদ্ধারকারী জাহাজ নিভর্ীক ঘটনাস্থলে বিকাল ৪টায় এসে পৌছেছে।
ঝালকাঠির ২ আসনের সংসদ সদস্য জননেতা আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির খোজ খবর নিচ্ছেন এবং এই ঘটনায় তিনি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি দলীয় নেতা কমর্ীদের এই ঘটনায় সহযোগীতা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং নেতা কমর্ীরা বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও খোঁজ খবর নিতে আত্বীয় স্বজনদের শুকনো খাবার ও রাতে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কোস্টগার্ডের সহায়তায় নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। লঞ্চে আগুন লাগার পরে লঞ্চটি ঝালকাঠির লঞ্চঘাট সংলগ্ন দিয়াকুলের অংশে নদীর পাড়ে লাগিয়ে দেয়। এর পূর্বেই অনেক যাত্রী জীবন বাঁচানোর জন্য নদীতে ঝাঁপ দেয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাতার কেটে পারে উঠতে পারলেও বেশ কিছু যাত্রী নিখোঁজ থাকেন। ফায়ার সার্ভিস ৩৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করে ঝালকাঠি পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেন এবং বিকাল পর্যন্ত ঝালকাঠিল পৌর মিনি পার্কে মৃতদেহ সনাক্ত করার জন্য রাখা হয়। ঝালকাঠি পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, তারা ৪জনকে আত্বিয়স্বজন পরিচয় সনাক্ত করতে পেরেছে এবং অবিশিষ্ট মৃতদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত আত্বীয়স্বজনের উপস্থিতিতে সেখানে স্বজন হারানো মানুষের আর্তনাদে স্থানটি ভারী হয়ে যায়। দূর থেকে ছুটে এসেও অনেক পরিবার তাদের স্বজনকে খুজে পায়নি। আত্বীয় স্বজনরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের, ঘটনা স্থল, হাসপাতাল মর্গে ও বরিশালে ছুটাছুটি করছে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী জানান, এই ঘটনাটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসন ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে উদ্ধারের সহযোগিতা করেছে। সর্বশেষ ঝালকাঠিতে ৩৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং বরিশাল থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে আরো ২জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন।
ঝালকাঠিল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল হক জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ লাশ উদ্ধার ও তাদের চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে এবং সর্বশেষ মৃতদেহ সনাক্ত করার জন্য পৌর মিনিপার্কে রাখা হয়েছে।
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডাঃ রতন কুমার ঢালী জানান, লাশ মর্গে রাখা আছে এবং সনাক্ত করার পরে ময়না তদন্ত করে পরিবারে কাছে হস্তান্তরের জন্য তার বিভাগের চিকিৎসকরা কাজ করছে।
লঞ্চ দূর্ঘটনায় বরগুনার বামনা উপজেলার বোকাবুনিয়া গ্রামের সঞ্জিব হাওলাদার জানান তার পুত্র স্বপনীল এই লঞ্চ দূর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে। ঝালকাঠিতে সহপরিবারের ৯জনের সাথে ঢাকা থেকে বরগুনায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল প্রতিবন্ধি রবিন। সে জানায় রাত সাড়ে ৩টায় লঞ্চটিতে আগুন লাগার পরে তাকিয়ে দেখেন লঞ্চের মাঝখান থেকে আগুন দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। নিচে তার স্বজনদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে আগুনের কারণে নামতে না পেরে নদীতে ঝাঁপ দেন। তার একটি হাত নেই এক হাত দিয়ে সাঁতরে এক সময় সে নদীর পারে এসে যায়। এরপূর্বে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দেওয়া আরও কয়েকজন তাকে বাঁচার আশায় জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন কিন্তু সে সৌভাগ্য ক্রমে পাড়ে আসলে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে। তার সাথে আসা পারিবারে ৯জন সদস্যর মধ্যে ৫জন নিখোঁজ রয়েছে ও ৪জন বেঁচে গেছে।
Discussion about this post