ডামুড্যা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি:
বয়স একশ ছুঁইছুঁই। ছেলে থেকেও নেই তার। থাকেন মেয়ের কাছে। বিছানায় পড়ে গেছেন। হাটতে পারেন না। স্বামী হারিয়েছে অনেক আগেই। পান না কোন সরকারি সুবিধা। এক বছর বয়স্ক ভাতা পেলেও জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় এখন পাচ্ছেন না সেই ভাতাও।
খাতুন নেছা ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বামী মৃত আলী আহমেদ মাল। তার এক ছেলে এক মেয়ে।
স্থানীয়রা বলেন, স্বামীহারা খাতুন নেছা স্বামী মারা যাওয়ার পর পাগল হয়ে যায়। তাকে ঘরে আটকে রাখা হত। সুযোগ পেলেই ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায়। আবার ফিরে আসত। এর আগে দীর্ঘ ১৪ বছর পর পটুয়াখালীর রাঙাবালীর থেকে তাকে সাংবাদিকরা উদ্ধার করে এনে পরিবারের কাছে দিয়ে যায়। তখন সরকারি একটি বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করে দিলেও এখন তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছেলে আছে না থাকার মত পাকিস্তান চলে গেছে ত্রিশ বছর আগে। মায়ের কোন খোঁজ খবর রাখে না। মেয়ের ছোট ঘরে গাদাগাদি করে ছেলের বউরা থাকে। আর খাতুন নেছাকে নিয়ে তার মেয়ে সাহার বানু লাড়কি রাখার ঘরে থাকে। বৃষ্টি হলে ঘর দিয়ে পানি পরে। তখন আর ঘুম আসতে পারে না তারা। বসে থাকতে হয়।
প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় খাতুন নেছার মেয়ে সাহার বানুর সাথে। তিনি বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মায়ের মাথায় সমস্যা হয়। বিভিন্ন সময় তাকে ঘরে আটকে রাখতাম। হঠাৎ একদিন ঘর থেকে বের হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু পাইনি। গত তিন বছর আগে সাংবাদিকের মাধ্যমে মাকে ফিরে পাই। এর পর থেকে মা আমার কাছে থাকে। সাংবাদিকরা যখন এনে দেয় তখন সরকারি ভাবে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার কিছু দিন পরে স্থানীয় মেম্বার তা নিয়ে যায়। এখন আর কিছু পায় না। জাতীয় পরিচয় পত্র করার জন্য চেষ্টা করছি বয়স্ক বিধায় আঙ্গুলের ছাপ ওঠছে না। তাই করতে পারিনি জাতীয় পরিচয়পত্র।
তিনি আরোও বলেন, গরিব মানুষ আমরা। আমার স্বামী কাজ করতে পারেনা। ছেলেরা যা দেয় তা দিয়ে সংসার চলে । সরকারি ভাবে কোন ধরণের সহযোগিতা পাই না। আমার স্বামীর একটা ভাতা কার্ড করে দিয়েছে। কিন্তু মারটাই হয় না। মা অনেক সময় অসুস্থ হয় পড়ে। টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারি না। ঘরে রাখতে পারি না বারবার প্রস্রাব পায়খানা করে। তাই এই ছোট ঘরে রাখি। মাঝেমধ্যে আমি রাতে ঘুমাই আবার ঘুমাই না। আমার বয়স এখন ৭২ এর ওপরে চলে। আর মায়ের তো এর থেকে বেশি। ইউনিয়ন পরিষদের পরিচয় পত্র রয়েছে কিন্তু তাতে নাকি ভাতা হবেনা। জাতীয় পরিচয় পত্র লাগবে।
সাহার বানু বলেন, মাকে নিয়ে অনেকটা অসহায় ভাবে জীবন যাপন করছি। এই মায়ের জন্য এই বাড়ি থেকে ওই বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে এনে খাওয়াইছি। ওর থেকে ওর থেকে চাইয়া কাপড় আনছি। সেই কাপড় আমার মা’কে পড়াইছি। এখনও দুইটা কাপড় দিয়েই জীবনটা পাড় করে যাচ্ছে। এখন আর যাইও না চাইও না। সরকারি কোন কিছুই পাইনা এক মুঠো চাউলও কেউ দেয় না।
পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা আগে জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা দিয়ে থাকতাম। এখন জন্মনিবন্ধনে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা দেওয়া যায় না। খাতুন নেছাকে তিন বছর আগে যখন বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়েছিল তখন জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে দেওয়া যেত। এখন সেটা করা যায় না।
সাহার বানু প্রতিবেশী ময়না বেগম বলেন, খাতুন নেছার শুধু এই মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। কষ্ট করে থাকে। ছেলে বহু বছর আগে পাকিস্তান চলে যায়। অনেক জায়গা জমিন ছিল খাতুন নেছার স্বামী আলী আহমেদ মালের। কিন্তু ছেলে সব সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়। এখন আর কিছু নেই তার। এই ঝুপড়ি ঘরে থাকে খাতুন নেছা।
ডামুড্যা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার ওবাদুর রহমান বলেন, সরকারি বয়স্ক ও বিধবা ভাতা নিতে হলে অবশ্যই তার জাতীয় পরিচয় পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। এটা না হলে এখন আর অনলাইন করা সম্ভব না। এতে করে তাকে আমরা কোন ধরনের সুযোগ প্রদান করতে পারিনা।
Discussion about this post