নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার টিকা নিতে গিয়ে টিকা গ্রহণকারী সাধারণ জনগণের উপর হামলা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষের দালাল চক্রের বিরুদ্ধে।
বুধবার দুপুরে টিকা নিতে এসে হেনস্তার শিকার হয়ে উত্তেজিত সাধারণ মানুষ হাসপাতালের পশ্চিম পাশের একটি ভবনের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। এঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকরা তথ্যসংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদেরও লাঞ্চিত করে হাসপাতালে কর্মরত চতুর্থশ্রেণি কর্মচারী ও দালাল চক্রের সদস্যরা।
করোনা টিকা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষের অভিযোগ, হাসপাতালের দালালরা ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত টাকা নিয়ে লাইনে থাকা পিছনের লোকদের আগে টিকা দিতে সহায়তা করায় এ ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, লাইন সোঁজা করতে গেলে সাধারণ মানুষ উত্তেজিত হয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় এক হামলাকারীকে আটক করে কক্ষে আটকে রেখে পুলিশে খবর দিলে টিকা নিতে যাওয়া জনতা হাসপাতালের জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ “গণমাধ্যম কর্মী (সাংবাদিকদের) হাতে আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশের ভবন থেকে সড়ক পর্যন্ত টিকা নিতে যাওয়া শত শত মানুষ অপেক্ষমান। এ সময় সামনে থেকে হট্টগোল শুরু হয়। টিকা নিতে আসা একজন মহিলা কান্না কন্ঠে তার ছেলে ও স্বামীকে ভেতরে আটকে রেখে হাসপাতালের লোকজন মারধর করছে বলেও জানা গেছে।
জানা যায়, দালালদের দাবিকৃত ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দিচ্ছে তাদেরই কেবল আগে টিকা দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। আর যারা ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে পুড়ে দাড়িয়ে থাকছে তাদের টিকা দেয়ার কোন খবরই নেই। এমন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় হাসপাতালের পক্ষে কাজ করা স্থানীয় দালাল চক্র তার ছেলেকে ঘরে আটকে রেখে মারধর করছে। এক পর্যায় আটককৃত ব্যক্তিও ক্যামেরার সামনে এসে তাকে আটকে রেখে মারধরের কথা স্বীকার করেন। এ সময় ভেতরে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরা ওই ব্যক্তিকে জোর করে পূণরায় ভিতরে নিয়ে গেলে সাধারণ মানুষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। একপর্যায় হাসপাতালের ওই কক্ষের ভিতর থেকে দুই-একজন ব্যক্তি সাধারণ জনগণকে গালাগাল করলে বাহিরে থাকা সাধারণ মানুষ আবারও উত্তেজিত হয়ে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে ওই কক্ষের জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। এঘটনাকে কেন্দ্রকরে সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার টিকা নিতে আসা সাধারণ জনগণকে দুষ্কৃতকারী আক্ষা দিয়ে মানববন্ধন করেছে। উদ্ধোবগঞ্জ সোনালি ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কতৃপক্ষের লোকজন। এসময় সোনারগাঁ বেসরকারি ক্লিনিক সংগঠনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সোনারগাঁ স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার সাহা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন , হাজার হাজার মানুষ টিকা নিতে আসেন। সেখানে লাইনে দাড়ানো নিয়ে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হতেই পারে। আমাদের হাসপাতালের লোকজনসহ আমি নিজে লাইন সোঁজা করতে গেলে একজন যুবক ঘুঁসি মেরে আমার চশমা ভেঙে ফেলে। এ সময় আমার সাথে থাকা লোকজন ওই যুবককে আটক করে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। তবে নির্যাতন করা হয়নি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, জেলা পুলিশ সুপার ও আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়। হাসপাতালের পশ্চিম পাশের একটি জানালার কাঁচ ইট দিয়ে ঢিল মেরে উত্তেজিত জনতা ভেঙে ফেলেছে বলে জানতে পেরেছি। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Discussion about this post