নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গুলিবিদ্ধের নাটক সাজিয়ে নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ যুবক। শুক্রবার বিকেলে জামপুর ইউনিয়নের আমবাগ এলাকায় বিয়ে বাড়িতে দাওয়াত খেতে এসে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তানসেন নামের এক যুবক। গুলিবিদ্ধ ওই যুবক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই রাতেই বাড়ি ফিরেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এএসএম ইকবাল হোসেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক আসল অপরাধীর নাম প্রকাশ করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এঘটনায় তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক(এসআই) মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে গতকাল শনিবার সকালে তাওলাদ হোসেন ও তার সহযোগী তন্ময় তানভীরকে আসামী করে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর পুলিশ তন্ময় তানভীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র ও তিনটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ওই যুবক তানসেন রূপগঞ্জের মাছিমপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের আমবাগ গ্রামের ইয়াসিন মিয়ার ছেলে মাসুদের মেয়ের বিয়েতে বরযাত্রী হয়ে আসেন তানসেন, তাওলাদ ও তন্ময় তানভীর। খাওয়া দাওয়া শেষে তানসেনের সঙ্গে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তানসেনের হাটুতে গুলি করে তন্ময় তানভীর। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আশপাশের লোকজন ডাকাত বলে চিৎকার দিলে তাওলাদ ও তন্ময় তানভীর একটি দেশীয় তৈরি পিস্তল ও তিনটি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়ে বাড়ির পাশ্ববর্তী আবু তাহেরের বাড়িতে ফেলে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করে।
তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এএসএম ইকবাল হোসেন বলেন, রূপগঞ্জের গত ৬ নভেম্বর রাতে বিচার শালিসে অভিযুক্ত তাওলাদের শ্যালক আব্দুর রশিদ শটগানের গুলিতে নিহত হন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে প্রতিপক্ষকে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ গুলির নাটক সাজানো হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাহসেন নিজেই রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না নিয়েই মামলা করার জন্য কাগজপত্র দাবি করেন। ওই সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সে ঢামেকে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। পুলিশের তদন্তে এ বিষয়গুলো উঠে আসে।
পুলিশের তদন্তকালে ওই যুবক যাদের নাম বলেছেন এ বিয়ে বাড়িতে তাদের কাউকেই দেখা যায়নি বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
এএসএম ইকবাল হোসেন আরো বলেন, এ ঘটনার আরো অধিকতর তদন্ত হচ্ছে। এটা ঘটনার মোড় নিলে গুলিবিদ্ধ যুবক ফেঁসে যেতে পারেন।
উল্লেখ্য-,গত ৬ নভেম্বর রাতে মিরকুটিরছের এলাকায় একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে শালিস বৈঠক বসে। শালিসে বৈঠকে রূপগঞ্জের ভাইস চেয়ারম্যান শাহারিয়ার পান্না সোহেলসহ তার লোকজন ও তাওলাদ হোসেন, রশিদসহ তাদের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। শালিসের এক পর্যায়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে রশিদ নামের এক যুবক নিহত হন। নিহত হওয়ার ঘটনায় একে অপর পক্ষকে দোষারোপ করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১ টার দিকে আব্দুর রশিদ মারা যান।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁয়ে বিয়ে বাড়িতে এসে গুলিবিদ্ধের নাটক সাজিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া পুলিশের তদন্তে ফাঁস হয়ে যায়।
Discussion about this post