মেহেদী হাসান ,জামালপুর প্রতিনিধি:
একমাত্র ছেলে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন সাংবাদিক নাদিমের মা। পরিবারের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠেছে এলাকার আকাশ-বাতাস। শোকে কাতর এলাকাবাসী ও সহকর্মীরা।
জামালপুরে প্রথম সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বকশীগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক গোলাম রাব্বানি নাদিম ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নাদিমের বৃদ্ধ বাবা আলহাজ আব্দুল করিম বিডিআরে চাকরি করতেন, এখন অবসরে। মা আলেয়া বেগমও বয়সের ভারে ন্যুজ। পরিবারের সবার দেখাশোনা করতেন নাদিম। নাদিমরা একভাই ও দুইবোন। তিনি ছিলেন সবার বড় ও একমাত্র ছেলে।
নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, তাঁদের দাম্পত্য জীবনে দুইছেলে ও একমেয়ে রয়েছে। বড়ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত ডিগ্রিতে পড়াশোনা করছেন। বড়মেয়ে রাবিলাতুজ জান্নাত পড়াশোনা করছেন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে অনার্সে। সবার ছোট ছেলে পাপ্পু দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকালে দাফনের আগমুহূর্তে বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বাজার (গরুহাটি) সংলগ্ন নাদিমের বাসায় গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সাংবাদিক নাদিমকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছে পরিবার। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা-বোন, স্ত্রী ও সন্তানরা।
নাদিমের মা আলেয়া বেগম বারবার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, “নাদিম আমার সোনা মানিক। আমার নারী ছেঁড়া ধন। আমার পোলাডা কথা কয় না ক্যা! আমার বাবাডারে কেউ আইনা দেও।”
এসময় সাংবাদিকদের দেখে তিনি বলেন, “আমার পোলাডারে বাবু চেয়ারম্যান মাইরা ফালাইছে। তোমরা ওই খুনি চেয়ারম্যানের ফাঁসির ব্যবস্থা করো।”
নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম অভিযোগ করেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবু সাংবাদিক নাদিমের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এবং বুধবার (১৪ জুন) এ মামলা খারিজ হয়ে যায়। এতে বাবু চেয়ারম্যান আরও ক্ষিপ্ত হন এবং সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নাদিমকে হত্যা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দৈনিক জবাবদিহী পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি আল মোজাহিদ বাবু জানান, ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে তারা পৃথক দুটি মোটরসাইকেলে বকশীগঞ্জ বাজার থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এসময় পাটহাটি এলাকায় পৌঁছলে বাবু চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তার সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায় এবং মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে নাদিমকে পাশের অন্ধকার গলিতে নিয় ইট দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে।
দৈনিক জনকণ্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি এমদাদুল হক লালন জানান, হামলার সময় মোজাহিদ বাবুর মুঠোফোনে সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি সাংবাদিক নাদিম অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। হামলাকারীরা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে চলে যায়। পরে তাঁকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এদিকে শনিবার দুপুর পৌনে ১টায় বকশীগঞ্জ থানায় নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে বাবু চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করেছে।
প্রধান আসামি বাবুকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার এক নম্বর চিলাহাটি ইউনিয়নের চর তিস্তাপাড়া গ্রামের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আজ ভোরে আটক করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
অপরদিকে শুক্রবার রাতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাবু চেয়ারম্যানকে সাময়িক বহিস্কার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি এবং একাত্তর টিভি ও দৈনিক মানবজমিনের বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এছাড়া তিনি জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
Discussion about this post