মনিরুজ্জামান মনির, যশোর প্রতিনিধি:
পরিবেশের ভ্রুক্ষেপ না করেই কালো ধোয়া ও দুগন্ধ ছড়াচ্ছে শিল্প মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত এ.এফ.আই রিনিউএ্যাবল এনার্জি ইন্ডাস্ট্রিজ। যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কনেচপুর গ্রামে এ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এর আধা কিলোমিটার দুরে বৈদ্যানাথতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাফেজি মাদ্রাসা, ৩টি মসজিদ, একটি মন্দির এবং পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিস। কারখানাটির পেছনে মাত্র ৫০ গজ দূরে রয়েছে বসতবাড়ি ও কয়েকটি দোকান। এই কারখানায় কী পোড়ানো হয় তা জানে না এলাকাবাসী, দেখে কালো ধোয়া, পায় দুর্গন্ধ।
এলাকাবসীর অভিযোগ, এখানে যা হয় সবই মানুষের চোখের আড়ালেই। কয়েকমাস আগে রাতে দাউদাউ করে আগুন জলেছিল। ধারণা করা হয় পুরাতর টায়ার এবং পলিথিন পুড়িয়ে তেল জাতীয় কিছু তৈরি করা হয়। এ কারখানার দরজা সারা দিনই বন্ধ থাকে। রাতে মালামাল ঢোকে বের হয়।
সম্প্রতি কারখানার কলিং বেল চাপলে আড়াই ঘন্টা পর ২জন ভেতর থেকে বের হয়ে জানায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ আছে।
পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কামাল হোসেন জানান, ‘এ কারখানার আসপাশের কৃষি জমি প্রায় শেষ। এ জন্য কোন ক্ষেতে ভালো ফসল হয় না। এ ধোয়ায় সব গাছে কালো ধরণের ছত্রাক পড়েছে। দেখেন সব গাছের পাতায় কালো হয়ে গেছে। কালো ধোয়া এবং গন্ধে গাছের ফুলে ভলো পরাগায়ন হচ্ছে না। গাছে আছে কিন্তু ফুল-ফল নেই। বেশি সমস্যা হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষের। একবার গন্ধে অতিষ্ট হয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোনও দিয়েছি। কিন্তু তারা আসেনি। আমরা গ্রামে একটা স্বাস্থকর পরিবেশ চাই।’
পাঁচবাড়িয়া গ্রামের শামিমা খাতুন জানান, গন্ধে রাতে ঘুমানো যায় না। আমাদের পরিবারের সবাই শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছি।’
পাঁচবাড়িয়া গ্রামের ওসমান গণি জানান, বয়েস হয়েছে। এখন মনে হয় বাড়িঘর ছেড়ে দূরে চলে যায়।
পাঁচবাড়িয়া গ্রামের আবু তালেব জানান, আমাদের এখানে ৩টি মসজিদ আছে এবং একটি মাদ্রাসা। স্বস্তিতে ইবাদত করতে পারি না।
কাশিমপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য ইকবাল হোসেন জানান, এলাকার মানুষ টায়ার পোঁড়া গন্ধ আর সহ্য করে পারছে না। যখন ধোয়া বের হয় তখন খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে যায়। আমার এলাকার মানুষের অভিযোগের কারণে আমি ট্রেড লাইসেন্সও দেয়নি।
বৈদ্যানাথতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঐ কারখানায় কি তৈরি করে আমরা জানি না। কিন্তু কারখানার ধোঁয়ায় আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যখন ধোঁয়া আসে তখন তো স্কুলে বসা যায় না।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তারের উপ-পরিচালক নুর ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার তেমন কোন ধারণা ছিলো না। এমন ইন্ডাস্ট্রিজের অনুমোদন হেড অফিস থেকে হয়। আমার নজরে যেহেতু আসছে আমি তদন্ত করে দেখবো। তবে এটা অবশ্যই পরিবেশ দুষণ। আমাদের আইনের আওতায় পড়লেই আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমরা দেখার পরে হেড অফিসে রিপোর্ট করবো।’
Discussion about this post