যশোর জেলা প্রতিনিধি, মনিরুজ্জামান মনির:
যশোর জেলায় অতিরিক্ত তাপে সবজি জাতিয় ফসলের ক্ষতির আশংকায় রয়েছে কৃষক। আম, কাঠাল, লিচু এবং ড্রগন ফলের ফুল-ফল ঝরে পড়ছে। গত কয়েকদিন ধরে তাপে পুড়ছে যশোর জেলার মানুষ। বৈশাখের শুরু থেকে টানা তাপদাহ শুরু হয়েছে।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, আরো ৪ দিন তাপদাহ বাড়তে পারে। তাপের কারণে সবজির উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কারণ গাছের ফল-ফুলসহ পানির অভাবে গাছ শুকিয়ে যেতে পারে। এভাবে তাপ চলতে থাকলে সবজি এবং ফল জাতীয় ফসলে আরো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষকের অভিযোগ এ তাপমাত্রার কারণেই লতা জাতিয় সবজি বাড়াতে সময় লাগছে বলেও জানান কৃষক। যার ফলে গাছের ফুল-ফল ঝরে পড়ছে। কৃষকরা জানান এ তাপে লতা জাতীয় সবজির বাড়ন ক্ষমতাও কমে গেছে। ফুল-ফলসহ সবজির ফলন কমে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর জেলার লেবুতলা ইউনিয়নের মাঠে উচ্ছে, পটল গাছ লাল বর্ণের হয়ে যাচ্ছে। অনেক গাছ মচড়ে গেছে। ঘন ঘন সবজি ক্ষেতে সেচ দিয়েও পানি ধরে রাখতে পারছে না। আবার আম এবং লিচু ঝরে পড়ছে। যশোর আবহাওয়া অফিস তথ্য মতে, যশোর জেলায় (২০ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপ মাত্র ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি।
যশোর কৃষি অধিদপ্তারের তথ্য মতে, যশোর জেলায় সবজি চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৮’শ হেক্টর জমিতে। সবজি চাষের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। এদিকে যশোরে মোট ফলের চাষ রয়েছে ১৩ হাজার ৩’শ ৩০ হেক্টর। এর মধ্যে আম চাষ হচ্ছে ৩ হাজার ৯’শ ২৩ হেক্টর, লিচুর চাষ ৬’শ ২৫ হেক্টর, পেয়ারা ৯’শ ৯৯ হেক্টর, কাঠালের চাষ ৭’শ ৫০ হেক্টর, ড্রাগন ফ্রটের চাষ হচ্ছে ২’শ ৭ হেক্টর এবং এছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের ফল চাষ হচ্ছে ৬ হাজার ৮’শ ২৬ হেক্টর।
বীরনারায়নপুর গ্রামের কৃষক ইমন হোসেন জানান, এই তাপে সবজি হবে না। কয়েক দিন ধরে দেখছি তাপের কারণে উচ্ছে গাছ যেমন দেখছি তেমনই আছে। মাঠের অনেক গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে তাপ পড়লে উচ্ছে বাজারে বিক্রি করা লাগবে না। গাছের আগা মোটা হয়ে কোকড়ায়ে যাবে।
বাঘার পাড়া উপজেলার কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, ১ বিঘা উচ্ছের চাষ করছি। এ গরমে জমিতে পানি দেওয়ার পরের দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চললে পানি দিয়ে পারা যাবে না। আবার মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। দুপুরে উচ্ছে গাছ মনে হচ্ছে সব মরে গেছে।
ফুলবাড়ী গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন জানান, এ গরমে মাঠে দাড়ানো যাচ্ছে না। সকাল ১০ টার পরে মনে হচ্ছে আগুনে তাপ ধেয়ে আসছে। লতা জাতিয় সবজি এমন তাপে হয় না। পটলে এখন যেমন ফলন হওয়ার কথা তেমন হচ্ছে না। কারণ ফুল-ফল শুকিয়ে যাচ্ছে। এই গরমে আবার পোকার আক্রমনও বেশি। যে ভাবে রোদের তাপ এমন ভাবে আর কয়েকদিন হলে চাষের মজা সব শেষ।
সালতা গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, অতিরিক্ত তাপে লিচু ঝরবে। কোন ভাবে ঝরা ঠেকানো যায় না। তবে এমন তাপ থাকলে লিচু ফাটার সম্ভাবনা আছে। আর লিচু ফাটলে বিক্রি করা মত থাকে না। আমার সাড়ে ৩ বিঘা লিচু রয়েছে। এ গরমে সব দিকে ভয়। কারণ পানি দিলেও ঝরার সম্ভবনা থাকে আবার না দিয়েও ফাঁটার সম্ভবনা থাকে। আমাদের বিপদের শেষ নেই।
সিতারামপুর গ্রামের ফল চাষী আব্দুস সাত্তার জানান, দেড় বিঘা জমিতে লিচুর চাষ রয়েছে। এ বছর মোটামোটি ভালোই ফুল এবং ফল দেখা যায়। কিন্তু এ কয়েক দিন ধরে দেখছি লিচু প্রচুর পরিমাণ ঝরে যাচ্ছে। কয়েকবার স্প্র করে দেখছি কিন্তু ঝরে পড়া বন্ধ হচ্ছে না। এ তাপে কোন ফল গাছে থাকবে না। আম ও কাঁঠালও ঝরে পড়া শুরু করেছে।
যশোর কৃষি অধিদপ্তারের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, সাধারণত অতিরিক্ত তাপে মাঠিতে পানির অভাব দেখা দেয়। আর বর্তমানে যশোর জেলায় যে পরিমাণ তাপ তাতে লতা জাতীয় সবজি মুচড়ে যাচ্ছে। আর এভাবে তাপ চলতে থাকলে সবজি এবং ফল জাতীয় ফসলে আরো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আম, লিচু , কাঁঠাল ঝরে পড়ছে এবং সবজি জাতীয় ফসলে ফুল-ফল কম এবং শুকিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকের করনিও ঘন ঘন সেচ দেওয়া এবং জমিতে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা। ফল জাতীয় গাছ গুলোতে খড় বা আবর্জনা দিয়ে মালচিংয়ের ব্যবস্থা করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা।
তিনি আরো জানান, আবহাওয়া এমন ভাবে আরো ৪ দিন চলতে পারে। তবে আবহাওয়ার তথ্য অনুযায়ী এবার আগে থেকে তাপ শুরু হয়েছে। এদিকে কৃষকদের সচেতন থাকতে হবে।
Discussion about this post