যশোর জেলা প্রতিনিধি, মনিরুজ্জামান মনির:
ভোজ্য তেল হিসেবে বহুল ব্যবহৃত সোয়াবিনের বিকল্প হয়ে আবারো ফিরছে একসময়ের জনপ্রিয় সরিষা। চলতি বাজারে বোতলজাত সোয়াবিনের চেয়ে সরিষা তেল কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে আবাদও। কৃষি বিভাগ বলছে, যশোরে ৩শ হেক্টর পতিত জমিতে সরিষা চাষ করে কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছেন।
সরিষা তেলের চেয়ে দামে সস্তা সোয়াবিন ও পামওয়েল ক্রমান্বয়ে দেশের বাজার দখল করে। সোয়াবিন তেলের নিজস্ব কোনো গন্ধ না থাকায় গৃহিণীদের পছন্দের শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে সরিষা তেলের দাপট। বিগত কয়েক বছরে আমদানি নির্ভর সোয়াবিনের দাম হুহু করে বাড়তে থাকে। সোয়াবিনের দাম বৃদ্ধিতে হোঁচট খায় ভোক্তারা। আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি
বিভাগ ও কৃষকরা আবারো নজর দেয় সরিষার দিকে। সরিষার উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান বাজারে কমেছে দাম। মঙ্গলবার যশোরের বড়বাজারে
এক কেজি সরিষার তেল বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা। পাশাপাশি বোতলজাত সোয়াবিন ৫ লিটার (৪.৫ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৮৪০ টাকা। প্রতিকেজি হিসাব করলে ১৮৬ টাকা। যা সরিষার চেয়েও বেশি। বড়বাজারের মেসার্স শ্যামল ট্রেডার্সের মালিক শ্যামল কুন্ডু জানান, দাম বাড়ার কারণে সোয়াবিন তেলের বিক্রি কমেছে। আবার পূর্বের তুলনায় সরিষা তেলের বিক্রিও বেড়েছে। এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, আমন ধান উঠানোর পর বোরো চাষ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত তিন মাসে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষার চাষ করেছেন যশোরের কৃষকরা। সরকারিভাবেও এবছর ৩৭ হাজার
কৃষককে সরিষা চাষের জন্য সার ও বীজ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। যা ফলে বেড়েছে আবাদ।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ তথ্যমতে, এবছর যশোর জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৯ হাজার ৯শ হেক্টর। ব যেখানে আবাদ হয় ৩১ হাজার ৫৮০ হেক্টর। এরমধ্যে শুধু পতিত জমিতেই ত আবাদ হয়েছে ৩শ হেক্টর। এবছর সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪১ হাজার ২৬২ মেট্রিকটন। ইতোমধ্যে কর্তন হয়েছে ৭০ শতাংশ। উৎপাদনের পরিমাণ ৩০ হাজার ২৮৫ মেট্রিকটন। এর মধ্যে আমন ধানের পতিত জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষি নি বিভাগের আশা আগামী বছর স যশোরের পতিত জমি পড়ে থাকবেি না, সবই প্রায় সরিষা চাষ হবে।
যশোর সদর উপজেলার কৃষক শুকুর আলী জানান, আমার জমিতে যে সরিষা হয়েছে তাতে সারা মাস রান্নার তেল কেনা লাগবে না, বরং কিছু বিক্রি করতে পারবো। আগামীতে সরিষা চাষ বাড়ানোর চিন্তা করেছি।
চৌগাছা উপজেলার আশরাফ হোসেন, রিপন হোসেন, কনেচপুর গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া জানান, প্রতি বিঘায় ৫-৬ মণ সরিষা পাওয়া গেছে। আমন ধান জমিতে থাকা অবস্থায় ধানের মধ্যে সরিষার বীজ ছিটানো হয়। এখন আবার বোরো ধান লাগাবো। অল্প খরচে বাড়তি আয়। আবার তেলও পাচ্ছি।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার উ তরফদার বলেন, কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে বীজ, সারসহ নানামুখী প্রণোদনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকতে শুরু করেছে। গত বছর ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিলো। এ বছর ৩১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
তিনি জানান, কৃষি বিভাগের লক্ষ্য আগামী মৌসুমে জেলার চাহিদা ৪০ শতাংশ ভোজ্য তেল সরিষা থেকে জোগান দেয়ার। সরিষা চাষের র মাধ্যমে কৃষকরা নিজেদের খাবার স্ত্র তেল নিজেরাই তৈরি করতে পারছে। আবার বছরে ধানের জমিতে ৩টি ফসল চাষও হচ্ছে। দু’দিক লাভবান অ হচ্ছে কৃষক। এ বছর ৩শ হেক্টর র পতিত জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ব আগামী বছর পতিত জমি পড়ে এ থাকবে না।
Discussion about this post