শাহারুখ আহমেদঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের আলমদি দক্ষিণপাড়া এলাকার মৃত ঈমান উদ্দিনের(৬০) পরিবারের সাথে ঘটে যায় অপ্রিতিকর ঘটনা। গত ০২’ই জানুয়ারি ২০২১ তারিখে একই উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের কাঁচপুর পুরান বাজার এলকার একটি কার্টুন ও মাসকিন টেপ গোডাউন সংলগ্ন মহল্লার ড্রেনে পাওয়া যায় ঈমান উদ্দিনের মৃতদেহ।
এব্যাপারে মৃত ঈমান উদ্দিনের স্ত্রী মমতাজ আক্তার বলেন, বারদীতে শ্বশুর বাড়ী হলেও কাঁচপুর এলাকায় আমরা বহু বছর যাবত ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছি। বারদী ইউনিয়নের আলমদি দক্ষিণপাড়া এলাকায় ক্রয়কৃত ১৮ শতাংশ জমি নিয়ে বিগত কয়েক বছর যাবত একই এলাকার লিয়াকত আলী(৫০) ও তার ভাই হযরত আলী(৫২) আরেক ভাই মোঃ রমা(৫০) ছেলে নাজমুল(২২) সহ দুই ভাতিজা আশ্রাফুল(২২) ও মোঃ সুমন(২৭), মাদক ব্যাবসায়ি শাহ্ আলম(৪৭) ও তার ভাই আদম আলী(৩০), তাছাড়া একই এলাকার মোঃ আলমগীর(৪২) ও মোঃ নাসির(৩৬), দের সাথে আমার স্বামীর বিরোধ চলছে। জমি ক্রয়ের পর যতবারই আমরা ভরাট বা কোনো কাজ করতে গিয়েছি ততবারই আমাদের জোর পূর্বক বাধা দেয়া হয় এমনকি ছুরি, রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমার স্বামী, সন্তান ও আমার উপর হামলা করে আহত করে। যদিও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে একাধিক বার সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যার্থ হই। অন্যদিকে তাদের আক্রমনাত্মক ও আগ্রাসী আচরণ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই সূত্র ধরে আমার স্বামীর লাশ পাওয়ার আনুমানিক ১৫ দিন পূর্বে শাহ্ আলম, মোঃ নাসির, লিয়াকত আলী ও তার পুত্র নাজমুল আমাদের সাথে তীব্র বাক-বিতন্ডা সৃষ্টি করে অবশেষে আমাদেরকে পরবর্তীতে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। তারই কিছু দিন পর বন্দর থানাধীন কেওডালা এলাকায় আমাদের ভাঙ্গারী দোকোন হইতে ৩১’সে ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে বিকাল ৩ টায় আমার স্বামী নিখোঁজ হয় এবং নিখোঁজের দুই দিন পর আমাদের বসবাসরত বাড়ির সামান্য দূরত্বে উল্লেখ্য স্থানে আমার স্বামীর লাশের সন্ধান পাই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে পুলিশি হেফাজতে নিলে সোনারগাঁ থানায় অপমৃত্যু মামলা নং ০১/২০২১, তাং- ০২/০১/২০২১ রুজু হয়। তবে আমাদের আইনি বিষয়ে সঠিক ধারনা না থাকায় তাৎক্ষণিক কোনো ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারিনি। পরবর্তীতে আত্মীয় স্বজনদের পরামর্শে ১৩’ই জুলাই ২০২১ তারিখ উক্ত থানায় কার্টুন ও মাসকিন টেপ গোডাউন মালিক মোঃ শফিকুল(৩৬) কে ১নং আসামি ও পূর্বে উল্লেখ্য দশ জনকে পরবর্তী আসামির তালিকাভুক্ত করে আমি বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করি, যাহার নং-২১ ও ধারা সমূহ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।
তবে প্রধান আসামি শফিকুলকে নিয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতাজ আক্তার বলেন, শফিকুল ও তার পরিবারের সাথে পূর্বে থেকে আমাদের কোনো পারিবারিক আত্মীয়তা, যোগসাজশ বা কোনো শত্রুতা অথবা কোনো ব্যাবসায়িক লেনদেন বা সম্পর্ক ছিলো না। এবং আমার স্বামী বেচে থাকা কালিনও শফিকুল গং দের সাথে কোনো প্রকার ব্যাবসয়িক বা অব্যাবসায়িক লেনদেন ছিলো বলেও আমাদের অবিহিত করেননি বা আমাদের দৃষ্টিতেও পরেনি। তবে যেহেতু শফিকুলের গোডাউনের পিছনের ড্রেনে লাশটি পাওয়া গিয়েছে তাই বিষয়টি আত্মীয় স্বজনদের পরামর্শক্রমে তাকে সন্দেহাতিত ভাবে আসামি দিয়েছি।
এবিষয়ে শফিকুলের বড় ভাই মতিউর রহমান বলেন, আমার ভাই একজন ভদ্র মানুষ ও ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আজও পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সে একজন নিরীহ ও পরিশ্রমিক মানুষ। তাছাড়া যেখানে লাশটি পাওয়া যায় সেখানে আসা-যাওয়া করার মত তিনটি পথ রয়েছে, তার মধ্যে দুটি পথ সর্বদা খোলামেলা থাকতো। স্থানটি অপরিচ্ছন্ন ও জনসমাগম হীন হওযায় কে বা কারা এসে লাশটি ফেলে গিয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। অযথা হয়রানি মূলক ভাবে আমার ভাইকে মামলার আসামি করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। হয়তোবা এর পিছনে কারো কোন ষড়যন্ত্রের হাত থাকতে পারে। তবে আমার ভাইকে আসামি কলঙ্কও হতে মুক্ত করার জন্য সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ ডিবি কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘খ’ এর কার্যালয় ও সোনারগাঁ থানায় দরখাস্ত জমা দিয়েছি। আমার বিশ্বাস আইন সকলের জন্য সমান তাই সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে আমার ভাই মুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য স্থানীয় বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী মতিউর রহমানের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করে বলেন, শফিকুল ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় ছেলে হিসেবে একজন শান্ত শিষ্ট ও ভদ্র ছেলে। আমাদের জানামতে মৃত ঈমান উদ্দিন এর পরিবারের সাথে শফিকুলের পরিবারের কোনো সম্পর্ক বা যোগসাজশ নেই। তাছাড়া আমাদের ধারণা শফিকুল এতটা বোকা নয় যে, সে তার সাজানো ব্যবসাকে এত বড় জঘন্যতম অপরাধ করে ধ্বংস করে ফেলবে।
সোনারগাঁও থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে দ্বিতীয় আসামি নাসিরকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বাকি আসামিদেরকে পাকড়াও করবো। তবে লকডাউন এর জন্য কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও কোনো আসামি পার পাবে না। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে সর্বদা প্রস্তুত আছি।
Discussion about this post