নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ে নাম করে মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় নামধারী আওয়ামীলীগ নেতারা সেনাবাহিনীর নাম করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের করায় ওই এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের ফসলী জমি ভেঙ্গে নদে চলে যাচ্ছে। কেউ অবৈধ এ বালু কাটার প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর ও হত্যার হুমকি দেয় বালু উত্তোলনকারীরা। এ বিষয়ে এলাকাবাসী জরুরী ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করছে, নতুবা এলাকাবাসী কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা দেবেন বলে জানান।
জানা গেছে, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মুকিমপুর, ঝালুকান্দি ও গোবিন্দপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ে নামে মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলন করায় কৃষকের কৃষি জমি ভেঙ্গে নদে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নামধারী নেতা মহজুমপুর কাজীপাড়া এলাকার তোফাজ্জলের ছেলে মো: মহসিন, বশিরগাঁও গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে মোমেন মিয়া ও ওই এলাকার শহিদুল্লাহ’র ছেলে মামুনের নেতৃত্বে ১৮ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে দেদারছে এ বালু উত্তোলন করছে। তারা জামপুর ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের মিরেরবাগ,বশিরগাঁও, ঝালুকান্দি, মুকিমপুর, গোবিন্দপুর, চরপাড়া, মহজমপুর,বুরুমদী গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে কোল ঘেঁষে সেনাবাহিনীর নাম করে মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলনের করায় ওই এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের ফসলী জমি ভেঙ্গে নদে চলে যাচ্ছে।
কৃষকরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে রাতে দিনে ব্রহ্মপুত্র নদে সেনাবাহিনীর দেওয়া সীমানা অতিক্রম করে একই স্থানে থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে মহসিন, মোমেন ও মামুনের নেতৃত্বে ১৮ জনের একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার ৩ একর ফসলী জমি নদে গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ওই এলাকার হাজী আ: মজিদ ভূইঁয়া মাদ্রাসা, মিরেরবাগ ঈদগাহ, মুকিমপুর, মিরেরবাগ কবরস্থানের জায়গা ভেঙ্গে নদীতে চলে যাওয়া যাবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ সিন্ডিকেট সেনাবাহিনীর নাম করে বিভিন্ন কৃষককে মামলা ও হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। ড্রেজার বসানোর সময় মহজমপুর কাজীপাড়া এলাকার জহিরুলের ছেলে স্কুল ছাত্র তাওসিদ ড্রেজারে উঠে কেন এলাকায় অবৈধ ড্রেজার বসানোর কথা বললে তাকে মহসিন ও তার লোকজনেরা মারধর করে। এতে করে ওই এলাকার সাধারণ কৃষক নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। তাই কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তবে এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছে জরুরি।
মিরেরবাগ গ্রামের বিল্লাল হোসেন প্রধান, লতিফ ভূঁইয়া জানান, নদী ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন আছে। সেনাবাহিনী ১০-১৫ ফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন। এ সিন্ডিকেট নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করে প্রায় ৬০-৬৫ ফুট গভীর করে বালু উত্তোলন করায় কৃষি জমি ভেঙ্গে নদীতে চলে যাচ্ছে। কৃষি জমি রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি জরুরি,নতুবা কঠোর আন্দোলনে নামবে এলাকাবাসী।
মুকিমপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন ও বকুল মিয়া জানান, এ সিন্ডিকেট দিনে ও রাতে ব্রহ্মপুত্র নদে আমাদের গ্রাম ঘেঁষে ৩/৪টি ড্রেজার দিয়ে বালু ডেজিংয়ের নাম করে এ অবৈধ বালু উত্তোলন করছে। বালু কাটার সাথে যারা জািড়ত তারা এলাকার ভূমিদুস্য, মাদক ব্যবসায়ী, বখাটে, কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে। তারা এলাকা অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। তাই কেউ বালু কাটার প্রতিবাদ করতে পারে না। ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার সময় ওই এলাকায় বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা দেখা যায়। তারা এলাকায় মাদক সেবন, জুয়ার আসর বসিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। ওই সময়ে কেউ ওখানে গিয়ে বালু কাটার প্রতিবাদ করলে সেনাবাহিনী কথা বলে তারা মামলা হামলা, ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক অনেক গ্রামবাসীরা জানান, বশিরগাঁও গ্রামে মামুন এলাকায় সন্ত্রাসী,কিশোর গ্যাং ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে। সে এ বালু কাটার সিন্ডিকেটের একজন। সে বিভিন্ন মামলা আসামীও। সে-ই বালু কাটার সময় বহিরাগতদের নিয়ে এসে এলাকায় সন্ত্রাসী মহড়া দেয়। আর মহসিন সিন্ডিকেটের টাকা পয়সার হিসাবের সাথে জড়িত।
অভিযুক্ত মো: মহসিন জানান, বালু উত্তোলনের সঙ্গে আমি জড়িত না। তবে বুরুমদী এলাকার নীরব নামে এক ছেলে লোকজন নিয়ে সিন্ডিকেট করে এ কাজ করছে। অন্য এলাকা কে করছে আমি জানি না।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আতিকুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে কৃষকের ক্ষতি হবে এমন কাজ করতে দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে আগেও উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে কথা বলেছি। বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
Discussion about this post