সফিকুল ইসলাম শিল্পী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী হাট হতে পাড়িয়া হাট গামী সড়কটি বিগত ৩০ বছর আগে নির্মিত হলেও প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের অভাবে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আর ৬ কি:মি: রাস্তা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। নিত্যদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। রাস্তার বেহাল দশার কারণে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও পথচারীরা প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার কবলে পরছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা এলজিইডির কর্মকর্তাকে রাস্তার বিষয়ে অনেক বার অবগত করলেও এখন পর্যন্ত এর কোন সুরাহা মিলেনি। ঠাকুরগাঁও জেলার ঐতিহ্য ও সম্ভাবনার জনপদ হলেও ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী ধান হাটি থেকে পাড়িয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা হয়ে পড়েছে বেহাল। সড়কে যানবাহন বাড়লেও সেই তুলনায় সড়কটি খুবই চিকন হয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় একটি ছোট ট্রাক বা অটো ক্রশিং করতে পারেনা। একটি গাড়িকে দাড় করে রেখে আরেকটি গাড়িকে যেতে হয়। এর ফলে ১৫ মিনিটের রাস্তা যেতে ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায়। খাল খন্দে ভরা সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে আশে পাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষকে।
এই অঞ্চলটি মূলতকৃষি প্রধান হওয়ায় পণ্যসামগ্রী বাজারে নিয়ে যেতেও বিপাকে পরেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এমনকি কেউ অসুস্থ হলেও রোগীকে এই রাস্তা দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয়দের।
মনির নামে এক অটো গাড়ি চালক বলেন, রাস্তাটি যেখানে সেখানে ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে ও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে আমাদের।
বামুনিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, রাস্তাটি সরু, যেখানে সেখানে ভাঙ্গা ও খাল খন্দে ভরা। যখন তখন গাড়ি পাল্টি খেয়ে পরে যায়। খুব দ্রুত এই রাস্তাটি প্রশস্ত ও মেরামত করার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আব্দুর রহমান নামে একজন বলেন, অন্যান্য এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও আমাদের এই রাস্তায় কারো চোখ পড়ছে না। তাই রাস্তাটি দ্রুত প্রশস্ত করা প্রয়োজন।
পাড়িয়া এলাকার এক গৃহিণী বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আখের গাড়ি, ভূট্টার গাড়ি, ধানের গাড়ি চলাচল রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি খালে, পুকুরে ও ডোবাতে পড়ে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছে। এমনকি গ্রামের কেউ অসুস্থ হলেও দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই আমি সরকারকে বিনীত অনুরোধ করছি রাস্তাটিকে বড় ও ঠিক করার জন্য।
বামুনিয়া গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান বুলবুল, ও ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার তোজাম্মেল হক বলেন, আগে আমাদের এলাকায় জনসংখ্যা কম ছিল। আগের তুলনায় এখন জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। তাই রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। আমাদের পাড়িয়া থেকে লাহিড়ী ধান হাটি পর্যন্ত সড়কটির দশা এখন বেহাল ও খুব ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তটির বেহাল দশার কারণে চরম ভোগান্তিতে পরেছি আমরা। আমাদের এলাকা মূলত–কৃষি প্রধান এলাকা। রাস্তাটির দশা খারপ হওয়ায় এলাকার মানুষ ঠিকভাবে কৃষি পণ্য বাজারে সরবরাহ করতে পারছে না। এখন কৃষি পণ্য আনা নেওয়া করতে হলে অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি আনতে হয় ও অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এতে রাইস মিল থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ী ও কৃষকের খচর অনেক বেশি পরে যায়। রাস্তার কারণে এলাকায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ পাইকাররাও আসতে চায়না কোন কিছু কিনতে। তাই আমাদেরকে এখন দ্বিগুণ ভাড়ায় অন্য রাস্তা দিয়ে ধান,চাল,গম, আলু, ভূট্টা সহ অন্যান্য কৃষি পন্য আনা নেওয়া করতে হয়।
১ নং– পাড়িয়া ইউপি’র নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী রুবেল জানান, চেয়ারম্যান হওয়ার বিগত ৫ বছর আগ থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলীকে রাস্তার বিষয়ে অবগত করলেও আজ পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। রাস্তাটি সংস্কার করা খুবই জরুরী। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাইনুল ইসলাম জানান, ঐ রাস্তায় জনদুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরে সেটি সংস্কারে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে আসলে দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।
Discussion about this post