মাও: রেজাউল করীমঃ
ইসলামের স্তম্ভ হলো পাঁচটি। তার মাঝে রোজা হলো মহান আল্লাহ তায়ালার অন্যতম হুকুম।
মহান আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজার ব্যাপারে এরশাদ করেন,”হে ঈমানদারগণ!তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর,যাতে তোমরা মুওাকী হতে পারো।”(বাকার-১৮৩)
রাসুলে কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রাখার গুরুত্ব নিয়ে এরশাদ করেন,”অনেক রোজাদার ব্যক্তি এমন আছে,যাহাদের রোযার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ব্যতীত আর কিছুই লাভ হয়না।আবার অনেক রাএি জাগরণকারী এমন আছে,যাহাদের রাএি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয়না।”(ইবনে মাজাহ,নাসাঈ,হাকিম)
অএ হাদিসে রাসুল (সা) এই কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে,যারা রোজা রেখে গিবত-শেকায়েত এবং গুনাহে লিপ্ত থাকে তাদের রোজা কোন কাজে আসবেনা।তাদের রোজা রাখা অনাহারে থাকা ছাড়া আর কিছুই না।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন,”রোযা মানুষের জন্য ঢালস্বরুপ,যতক্ষণ উহাকে ফাড়িয়া না ফেলে।”(নাসাঈ,ইবনে মাজাহ)নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,”যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে শরীয়তসম্মত কোন কারন ব্যতীত রমযানের একটি রোযাও ভঙ্গ করিবে,সে রমযানের বাহিরে সারাজীবন রোযা রাখিলেও উহার বদলা হইবে না।”(আহমদ ,তিরমীজি,আবু দাউদ)
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের ফজিলতের ব্যাপারে বলেন,”হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
রাইয়্যান নামে জন্নাতে একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এই দরজা দিয়ে শুধুমাএ রোযাদাররা প্রবেশ করবে।রোযাদার ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা। বলা হবে, রোযাদাররা কোথায়? তখন রোযাদার দাঁড়িয়ে যাবে।সেই দরজা দিয়ে তারা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবেনা। যখন তারা সবাই ভেতরে প্রবেশ করবে তখন দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে এবং এই দরজা দিয়ে আর কেহ প্রবেশ করতে পারবেনা ।”(বুখারী-মুসলিম)
হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মাএ একটি রোযা রাখে,তার এই একটি দিনের বদৌলাতে আল্লাহ তাকে (জাহান্নমে)আগুন থেকে সওর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন।”(বুখারী-মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,নবীজি (সা)বলেছেন:”যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান সহকারে ও সাওয়াবের প্রত্যাশায় রমযানের রোযা রাখে তার অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।”(বুখারী-মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) আরো বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুল (সা) বলেছেন:”যখন রমযান মাস আসে তখন জাহান্নামের দরজাগুলো বন্দ করে দেয়া হয় আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃংখলিত করে রাখা হয়।”(বুখারী-মুসলিম)
ইহা ছাড়া আরো অনেক হাদিসে রমযানের গুরুত্ব প্রমাণিত আছে।মাশায়েখগণ রোযার ছয়টি আদব লিখিয়াছেন।
রোযাদার ব্যক্তির জন্য এই বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি ।
তা হলো -১/দৃষ্টির হেফাজত করা। ২/জবানের হেফাজত করা। ৩/কানের হেফাজত করা। ৪/হাতকে নাজায়েজ বস্তু ধরা হইতে,পা কে নাজায়েজ বস্তুর দিকে যাওয়া হইতে বিরত রাখা। ৫/রোযার দ্বারা উদ্দেশ্য হইল,কামপ্রবৃত্তি ও পশু শক্তিকে দুর্বল করা এবং নুরানি ও ফেরেশতাসুলভ শক্তিকে বৃদ্ধি করা। ৬/রোযা রাখার পর এই ভয়ে ভীত হওয়া যে,নাজানি এই রোজা কবুল হইতেছে কিনা।
অতএব, আসুন আমরা সবাই মহান আল্লাহ তায়ার সমীপে আরজু পেশ করি যে, হে মাবুদ আমাদের রোযাগুলো কবুল করে নিন এবং আপনার রহমত,মাগফিরাত এবং নাজাত নসীব করেন।(আমিন)
Discussion about this post