হামলা-মামলা, ভূমিদস্যু, মৃত্যুর হুমকি, ভয়-ভীতি, ভিটামাটি ছাড়া, নানারকম হুমকি-ধমকি ও অবৈধ পন্থায় ব্যবসা। দুর্ধর্ষের পরিচয় দেওয়ার জন্য আর কি বাকি থাকলো! যেখানে ব্যবসা মানেই জনসেবা ও মুনাফা অর্জন। যার যত বড় ব্যবসা তার মন মানসিকতা ঠিক ততো বড় হওয়া উচিত, সেখানে উল্টোপথে ধারালো ডানায় দাবড়িয়ে বেড়ানো এক রহস্যের নাম আল মোস্তফা গ্রুপ।
দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজ অবধি আমরা সকলেই জীবন পাল্টানোর চেষ্টায় ব্যস্ত, উন্নত জীবন যাপনের আশায় সবাই দৌড়িয়ে বেড়াচ্ছি। এরই মাঝে একদল মানুষ রয়েছে তারা নিজেরাই জানেনা কবে কখন তাদের জমিজমা, কষ্টে গড়া বসতবাড়ি সহ সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নিঃস্ব হয়ে যাবে সারা জীবনের জন্য। সেই ভূমিহীন নিঃস্ব হওয়া অশ্রুসিক্ত একদল জনপদ মিলে প্রতিষ্ঠিত করে “গুচ্ছগ্রাম”। এরশাদের শাসন আমলে বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ইসলামপুরে সরকারি জায়গায় অবস্থিত গুচ্ছগ্রাম। সর্বমোট ১২০ টি পরিবার মিলে গঠিত হয় গ্রামটি। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, ও গড়ে তোলে একটি সমাজ। খুবই নিম্নমানের জীবনযাপন করে আসছে তারা। এভাবে কেটে গেল ৩০ বছর। তারই মধ্যে হঠাৎ আল মোস্তফা গ্রুপ আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে রক্তাক্ত চোখে নজর দিলো সেই গুচ্ছগ্রামে। এই প্রতিষ্ঠানটি সর্বসময়ে ওই গ্রামের চারপাশ দখল নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মৌখিকভাবে বাধা দিতে গেলে গ্রামবাসীদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য প্রচন্ড হুমকি দিচ্ছে, অন্যথায় গ্রামবাসীদের গুম বা খুন করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বিডিআর সহ আরো কিছু অর্থলোভী প্রভাবশালী মানুষের সহযোগিতায় তাদের সাহস এখন তুঙ্গে। এর সাথে জড়িত কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কিছু সাংবাদিক ও আরও উপরমহল। জানা যায় ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বাদী হয়ে ঐ গুচ্ছগ্রামের ২০ এর অধিক লোকের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এবং হুমকি দিচ্ছে যে, এখান থেকে অন্যত্র না গেলে ভূমিহীন গ্রামবাসীদের নামে একের পর এক মামলা-মোকদ্দমা হতে থাকবে। তাতেও কাজ না হলে জ্বালাও-পোড়াও সহ সকল প্রকার সন্ত্রাসী মূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তবুও ওই গুচ্ছগ্রামের লোভ তারা ছাড়বে না। এখানেই শেষ নয়, এই প্রতিষ্ঠানটি মানুষের চলাচলের রাস্তা, সরকারি হালট, খাল, নদী, নামে চিহ্নিত খাস জমিগুলো ভরাট করে নিজস্ব কাজে ব্যবহার করছে। এসব ছাড়াও আরো নানা অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
এই সমস্ত দুর্বিষহ কার্যক্রম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গুচ্ছগ্রামের দিশেহারা লোকেরা একত্রিত হয়ে ‘ভূমি মন্ত্রীর’ দপ্তরে স্মারকলিপি জমা করে। এছাড়াও স্মারকলিপি আরও কয়েকটি দপ্তরে জমা দেয়া হয়, যেমন- মাননীয় সচিব-ভূমি মন্ত্রণালয়, মাননীয় সংসদ সদস্য নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ, জেলা প্রশাসক নারায়ণগঞ্জ, পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ, চেয়ারম্যান সোনারগাঁ উপজেলা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনারগাঁ, সহকারি কমিশনার ভূমি-সোনারগাঁ, অফিসার ইনচার্জ সোনারগাঁ থানা, চেয়ারম্যান পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও মেম্বার ৯ নং ওয়ার্ড পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ।
খেলা এখানেই শেষ নয়, স্মারকলিপি জমা দেওয়া ১১ টি দপ্তর থেকে কার কেমন ভূমিকা, কে এসে গুচ্ছগ্রামের লোকেদের পাশে দাঁড়ায়, আর প্রশাসনই বা কি ভূমিকা রাখে, সেটাই এখন আলোচ্য বিষয়। যদিও এর আগে কয়েকবার পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি উঠে এসেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য।
Discussion about this post