মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকঞ্জি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবিড়িয়া সরাইল উপজেলায় কুট্রাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে হওয়ায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা। ব্যস্ততম এই সড়কে বিরামহীনভাবে চলাচল করে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলার বাস, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, কাভার্ড ভ্যানসহ ভারী যানবাহন। এসব যানবাহনের বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে নানা সময়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তা পারাপারের জন্য নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজ। ফলে অনেক ঝুঁকি নিয়ে পারাপার ও রাস্তায় চলতে হয় সবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের রাস্তার পশ্চিম পাশে কুট্টাপাড়া গ্রামসহ এর আস পাশের এলাকা থেকে অধ্যয়নরত প্রায় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীরা অধিকাংশই এই ঝুকিপূর্ণ মহাসড়কের আশে পাশের গ্রাম থেকে আসে।তারা প্রতিদিন স্কুলে প্রবেশ করছেন দুর্ঘটনার ভয় নিয়ে। শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকদের দীর্ঘ দিনের দাবি এই রাস্তার উপর একটি ফুটওভার ব্রিজের। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কিন্তু এখনো প্রতিশ্রুতির মাঝেই রয়েছে। ” হবে বলে স্বপ্ন দেখছে শিক্ষার্থীরা “? আরফিন শিপন বলেন,আমি এইসব দেখে ছোট বেলা থেকে বড় হয়েছি, এখন পর্যন্ত এইটার সমাধান দেখলাম না ! নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কথা শুনিলে মনে হয় তারা সরাইলডারে ইউরোপ বানিয়ে ফেলবে কিন্ত নির্বাচনের পরে এই সবের পাঅই পরে না সরাইলে।
আবুল কাশেম বলেন, আছিয়া কয় বইনপুত ব্রীজ অইব তবে একটা বড় অঘটনের পরে, কারো মায়ের বুক খালি হইলে মায়েরবুক খালি হওয়ার আগে ব্রিজ হওয়া দরকার। নিশাত মৃর্ধা বলেন, কোমলমতি শিশুদের জন্য এখানে একটা ওভারব্রীজ দরকার। সরাইল প্রশাসন পাড়ার নজরে যেন আসে সেই আশা রাখি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এমন পরিস্থিতি আর কোথাও আছে বলে আমার মনে হয়না। সরাইল প্রশাসনসহ, সংশ্লিষ্ট সকলে সুদৃষ্টি কামনা করছি। এমন একটা ঝুঁকি পূর্ণ জায়গায়,কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক থেকে বাঁচতে দিন। ওরা বাঁচলেই কেবল জাতি বাঁচবে, দেশ বাঁচবে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী তামিম বলেন, ‘প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়ার জন্য এই সড়ক পারাপার হতে হয়। এ ছাড়াও, কোনো ফুটপাত না থাকায় রাস্তার ওপর দিয়েই চলাচল করতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এই মহাসড়কে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা উচিৎ।
’ তরিকুর রহমান মুবিন নামের এক জন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ বিদ্যালয়ের সামনেই (ঢাকা- সিলেট) মহাসড়ক বাস ট্রাক স্লো তো করেই না, কোনো স্টুডেন্ট রাস্তা পার হচ্ছে দেখে গাড়ির স্পিড আরও বেড়ে যায় মনে হয়। যেকোনো মুহূর্তে এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে। এ মহাসড়কে উপর একটি ফুটওভার ব্রিজ দেওয়া সময়ের দাবী।শিক্ষার্থী তামান্না বলেন, ‘ বিদ্যালয়ের সামনে এমন মহাসড়ক থাকা আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ। কারণ আমি যখন এই রাস্তা পারাপার হই, তখন অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে কখন কোন দিক থেকে গাড়ি চলে আসে, খুব সাবধানে দেখতে হয়।’
এ ব্যাপারে কুট্রাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘প্রশ্নটা যখন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার, তখন ন্যূনতম সময় নষ্ট না করে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি অনেক দপ্তরের চিঠিও দিয়েছি। এজন্য যা যা করা দরকার স্কুল প্রশাসন তা করেছে। এই পর্যন্ত এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন,বিদ্যালয় আসা-যাওয়া সময় কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে প্রাণের দাবি এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে হলে শিক্ষার্থীরা তারা স্বাচ্ছন্দ স্কুলে আসা যাওয়া করতে পারবে।
সরাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহিদ খালেদ জামিল খান বলেন,কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এখানে অতি দ্রুত একটি ফুটওভার ব্রিজের দরকার। হাইওয়ের রাস্তার উপর একটি ব্রিজ হলে অনেক ভালো হয়। তবে সেতু মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দিবেন বলে অনুরোধ করছি ।
তিনি আরও বলেন, যাতে কোন দুর্ঘটনার শিকার না হয় শিক্ষার্থীরা তাই আমরা বলেছি স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন স্কুল ছুটির সময় দুইজন শিক্ষক রাস্তা পারাপারের জন্য যেন সহযোগিতা করেন।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূইঁয়া বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আসা- যাওয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে যৌক্তিক দাবিটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো.রফিক উদ্দিন ঠাকুর এ প্রতিবেদকে বলেন, আমি সেতু মন্ত্রী মহোদয় সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি উনি বলেছেন, রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে।রাস্তার কাজ শেষ হলে এখানে ফুটওভার ব্রিজ করা হবে শিক্ষার্থীদের জন্য।
তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর আগে এই স্কুলের অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির কাজী মামুনুর রশীদ এসেছিলেন। তিনি তার বক্তব্য বলেছিলেন, এই রাস্তার উপর স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে ফুটওভার ব্রিজ করতে ৫ লক্ষ টাকা দিবেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, আমরা চেষ্টায় আছি এখানে কিভাবে অতি দ্রুত সময় একটি ফুটওভার ব্রিজ করা যায়। মহাসড়কের পাশে রাস্তার উপর ব্রিজ না থাকার কারণে। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তবে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
Discussion about this post