গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি:
বীমার ফাঁদে ফেলে বাড়িসহ আড়াই কাঠা জমির দলিল কূটকৌশলে সম্পাদন করার অভিযোগ উঠেছে এক মহিলার বিরুদ্ধে।গাজীপুর মহানগরের ১৪ নং ওয়ার্ডের বাসন থানাধীন চান্দ পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি কাফরুল থানাধীন ইব্রাহিমপুরের বর্তমান ভাড়া বাসায় অবস্থানরত মোঃ হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী মোসা: পারভীন আক্তার ( ৩৪)।
জানা যায়, পারভীনের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। এই ঘটনার অভিযোগকারী কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানাধীন আহতিয়া গ্রামের মোঃ মজিবুর রহমান সরকারের স্ত্রী মোসা: ফেরদৌসী বেগম (৫০)।যার বর্তমান ঠিকানা,গাজীপুর মহানগরের চান্দ পাড়া এলাকায়।
অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগী ফেরদৌসী জানায়, আমি গ্রাম থেকে এসে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে টাকা জমিয়ে দীর্ঘদিন বিদেশে থাকি এবং সেখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা জমিয়ে ২০১১ সালে গাজীপুর মহানগরের চান্দপাড়া এলাকায় আড়াই কাঠা জমি কিনে বাড়ী করি।এবং এই বাড়ীতেই ছেলে এবং ছেলের বউসহ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি। পারভিন আক্তারের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২০১১ সালে।
সে গ্লোবাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করে।একদিন সে আমাকে বীমার গ্রাহক বানানোর প্রস্তাব দেয় এবং আমাকে বীমার গ্রাহক বানানো হয়।১২ বছর মেয়াদী বীমাঅঙ্ক এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।প্রতি ৬ মাস পরপর কিস্তি দেই তার কাছে। সেই সূত্র ধরে সে বীমার কিস্তি নিতে আসে এবং আমার পরিবারের সকলের সাথে মিশতে শুরু করে। আমাকে বোন বানিয়ে আপা বলে ডাকে।আমার ছেলের বউয়ের সাথেও সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে পারভীন আমার ছেলের বউ এবং আমার মাঝে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেয়।তখন ছেলের বউ তার পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে আড়াই কাঠা জমি বাড়িসহ আমার ছেলের বউয়ের নামে লেখে দেয়ার জন্য আমাকে চাপ সৃষ্টি করে। আমি তা দিতে অস্বীকার করলে তার বাবার মাধ্যমে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।এই সময়ে পারভীন আমাকে বলে যদি জমিসহ বাড়ি আমার নামে লিখে দাও আমি তোমাকে ৩০ লক্ষ টাকা দিবো। তুমি যদি আমাকে না দাও তাহলে তোমার ছেলের বউয়ের বাবা তার মেয়ের নামে জোরপূর্বক জমিসহ বাড়ি লিখে নিবে।তোমার সম্পদ রক্ষার জন্য বাড়িসহ জমি আমার কাছে বিক্রি করো।কিন্তু এ প্রস্তাবে আমি রাজি হইনি।
হঠাৎ একদিন আমাকে বলে বীমার একটি কাগজে তোমার স্বাক্ষর লাগবে এই কথা বলে সে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়। গাজীপুর মহানগরের চান্দপাড়ার এই জমি ২০১১ সালে কিনার পর থেকে এইখানে বাড়ি করে ছেলে ও ছেলের বউসহ বসবাস করে আসতে ছিলাম ;
কিন্তু কিছুদিন পূর্ব থেকে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে বলছে তুমি তোমার জমিসহ এই বাড়ি আমার নামে দলিল করে দিয়েছো।এখন এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। এবং হুমকি দিচ্ছে বের না হলে তোমাদের মা ছেলে দু’জনকেই মেরে ফেলবো। ফেরদৌসী বলে,ভাই,আমি গ্রাম থেকে এসে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে টাকা টাকা জমিয়ে বিদেশে যাই এবং সেখানেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অতিকষ্টে এই জমি কিনি এবং বাড়ি করে বসবাস করে আসছি। ভাই আমি পারভীনের কাছে বা অন্য কারো কাছে বাড়ি বা জমি কোনটাই বিক্রি করি নাই।জমির কথা বলে কারো কাছ থেকে টাকাও নেয়নি। পারভিন আমার সাথে প্রতারণা করেছে।আর এখন পারভিন জোর করে আমার বাড়ি দখল করতে চাচ্ছে। প্রতিদিন আমাকে ও আমার ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। অতি কষ্টের টাকায় কেনা আমার এই বাড়ির জমি; এই জমিসহ বাড়ি হারালে ছেলেসহ আমি অসহায় হয়ে পড়বো! আমি সরকার এবং সবার সহযোগিতা চাই, যেন আমার জমি ও বাড়ি আমারি বহাল থাকে, এই কথা বলে ফেরদৌসী কান্না করতে থাকে!
এ ব্যাপারে ফেরদৌসী বাসন থানায় অভিযোগ দিলে বাসন থানা অফিসার ইনচার্জ কামরুল ফারুক পারভীনকে বাড়ি দখল থেকে বিরত থাকতে বলে এবং তিনি বলেন তুমি যা করেছ তা প্রতারণার শামিল,তুমি যদি জমি কিনে থাকো তাহলে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে বাড়ীতে এসো।তা না হলে বাড়ী দখল করার চেষ্টা করোনা। তিনি মৌখিকভাবে এই কথা বললেও তার কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।ফলে এখনো সেই বাড়িতে থেকে ফেরদৌসী ও তার ছেলের আতঙ্কে কাটছে তাদের প্রতিটি দিন এবং রাত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুর মহানগরের চান্দপাড়া এলাকায় আরো কয়েকজন লোক বলে যে পারভিন আমাদের কাছ থেকেও বীমার কথা বলে টাকা নিয়েছে,সে এখন আর কিস্তি নিতে আসে না; আমাদের টাকাগুলোও ফেরত দেয় না।এ ব্যাপারে আমরাও সহযোগিতা চাই আমাদের টাকা গুলো উঠানোর জন্য।
Discussion about this post