বাধন রায়, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে তৃতীয় দিনের মত অভিযান শুরু হয়েছে। এখনো নিখোজদের সন্ধানে মানুষ লঞ্চঘাট, সুগন্ধা নদী সংলগ্ন পৌর মিনি পার্কে অবস্থান করছে। কিন্তু এখনও নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া যায়নি এবং কোন মৃতদেহ নদীতে ভেসে উঠতে দেখা যায় নি। নদীতে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের দ্রুতযান ও ডুবুরি নিয়ে খোজাখুজি করছে।
স্বজনদের দাবী অনুযায়ী কমপক্ষে ৫৪ জন নিখোজ মানুষের তালিকা সংরক্ষন করছে যুব রেড ক্রিসেন্ট এর সেচ্ছাসেবক দলে ইমরান জানায়, এই সকল ব্যাক্তিরা মানুষ প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাপ দিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। রবিবার সকাল থেকেই দুর্ঘটনা কবলিত সুগন্ধা নদীর দিয়াকুলসহ আশপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের উদ্ধার তৎপরতা চলেছে। এদিকে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশের পক্ষ থেকে লঞ্চঘাট এলাকায় একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে জানান এসআই মোঃ সালাউদ্দিন। সেখানে স্বজনরা এসে তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন ।
সদর থানা পুলিশ এ কন্ট্রোল রুমে নিখেঁাজের স্বজনদের দেয়া তথ্যে ৪৭ জনের নাম তালিকা প্রস্তুত করেছে। এছাড়া ঝালকাঠি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ৫১ নিখেঁাজ ব্যাক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করেছে। লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে রোববার দুপুরে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে রাখা পোড়া লঞ্চ অভিযান-১০ পরিদর্শনে আসেন বরিশাল বিআইডব্লিটিএর মো: বাহারুল আমিন এর নেতৃত্বে একটি পরিদর্শন দল। সাংবাকিদের প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, লঞ্চটিতে পযার্প্ত অগ্নিনিবার্পক ব্যবস্থা ছিলোনা। ঢাকা বরিশাল রুটের সব লঞ্চেই ওপরে বিলাশবহুল ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু ইঞ্জিন রুমে নিরাপত্বা জন্য কিছুই থাকেনা।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিসেন্সের পরিচালক লেফটেন্ট্যাট কর্নেল জিল্লর রহমান ঘটনা স্থান পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, লঞ্চটি যদি ঘটনার সাথে সাথে নদীর যে কোন এক পাড়ে ভিড়ত তাহলে এতো প্রানহানী হতো না। কিন্ত চালকরা সেটা করেনি বলে মন্তব্য করেছেন এই কর্মকর্তা।
ঝালকাঠিতে এই লঞ্চট্রাজেডির ঘটনায় সর্বস্তরের মানুষ হতবাক হয়েছেন এবং সবার মধ্যেই বেদনা ও কষ্টের ছাপ রয়েছে। রবিবার ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো: জোহর আলীর সভাপতিত্বে জেলা রাজস্ব সম্মেলনের শুরুতেই লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। আরও জানা গেছে নৌ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরির ক্ষতিপুরনের ঘোষনার পরও ত্রান ও পুর্নবাসন মন্ত্রনালয় এই ঘটনায় প্রত্যেক নিহত ব্যাক্তির জন্য ২৫ হাজার ও আহতদের জন্য ১৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষনার অর্থ ইতিমধ্যেই বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত ও আহতদের মধ্যে ঝালকাঠির কেউ ছিল না তারা প্রধানত বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা ছিল। এই লঞ্চটি ঢাকা বরগুনা রুটে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিশখালির নদীর মধ্যে দিয়ে চলাচল করলেও ঝালকাঠিতে প্রায় দশ বছর যাবত লঞ্চটি ঘাট দিত না। সে কারনেই এই লঞ্চটি ঝালকাঠি জেলার কোন বাসিন্দা যাত্রী হয় না।
Discussion about this post