মেহেদী হাসান ,জামালপুর প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের মাদারগঞ্জের উপজেলায় একই জমি একাধিকবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ভূমি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। একই জমি বিভিন্ন সময় একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করায় প্রতারিত এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন জমি ক্রয়কারী নিরীহ মানুষ। ওই চক্রের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার চেয়ে জামালপুর আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের রুকনাই গ্রামের মৃত নজর আলী ছেলে অছিম উদ্দিন, ইদ্রিস আলী এবং আকবর আলী ৩১.১০.১৯৮২ তারিখে ৫৬৫০ নম্বর দলিলে পার্শ্ববর্তী মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর মৌজার ১৮ নম্বর খতিয়ানে এবং ৭৪৬৯ নম্বর হাল দাগে ৯৪ শতাংশ জমির মধ্যে থেকে ৮০ শতাংশ জমি স্ব-স্ব স্ত্রীগণকে মেলান্দহ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে মাত্র ৫ শত টাকা মূল্যে দলিল করে দেন।
৯৪ শতাংশ জমির মধ্যে থেকে ৮০ শতাংশ জমি বিক্রি করলেও পরবর্তীতে তথ্য গোপন রেখে ইদ্রিস আলী একই জমি ০৩.১১.১৯৮২ তারিখে ২৮৪৮ নম্বর দলিলে সোয়া ৩০ শতাংশ জমি মাত্র ৬ হাজার টাকার মূল্য উল্লেখ করে মাদারগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে মাদারগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মমিন সরকারের ছেলে মোজাম্মেল হককে সাব কবলা করে দেয়।
অপরদিকে, আকবর সেক একইদিন ২৮৪৯ নম্বর দলিলে পোনে ৩১ শতাংশ জমি ৬ হাজার টাকা মূল্য উল্লেখ করে মমিন সরকারের ছেলে আব্দুল মজিদকে সাব কবলা লিখে দেন।
অছিম উদ্দিন ১৯.১২.১৯৮২ তারিখে ৩৫৬৭ নম্বর দলিলে সাড়ে ১৫ শতাংশ জমি মমিন সরকারের ছেলে মো. আব্দুল মজিদ এবং মোজাম্মেল হককে লিখে দেন। এছাড়া একইদিন সাড়ে ১৫ শতাংশ জমি ৩৫৬৬ নম্বর দলিলে লিখে দেন রুকনাই গ্রামের মৃত মহিউদ্দিন সরকারের ছেলে মোতাহার আলীকে।
অপরদিকে, ২৩.০৭.২০০৩ তারিখে আব্দুল মজিদ ৫২২৫ নম্বর দলিলে মেলান্দহ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে নিশ্চিতপুর গ্রামের মৃত ভোলা মণ্ডলের ছেলে মিয়ার উদ্দিন এবং মিয়ার উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা বেগমের নামে সাড়ে ৩৮ শতাংশ জমি সাব কবলা লিখে দেন। এরপর ধীরে ধীরে ভূমি প্রতারদের বিরুদ্ধে একই জমি একাধিকবার বিক্রির তথ্য বেরিয়ে আসে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। জমি মিয়ার উদ্দিনের দখলে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আপেল মিয়া, সবুজ আলী, রুস্তম, বেলাল, জানান, ‘ইতিমধ্যে অছিম উদ্দিন এবং আকবর আলী মৃত্যুবরণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে মিয়ার উদ্দিন জমি ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু জমির পূর্ব মালিকগণ বিভিন্ন সময় একাধিকবার জমি বিক্রি করায় জমির বর্তমান মালিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
ছোরহাব মিয়া নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ওই ভূমি চক্রদের খপ্পরে আমিও পড়েছি। তারা একই জমি বিক্রির পরেও আমাদের নিকট পুনরায় দলিল করে দিয়েছে। পরে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘জমি আমাদের দখলে। তবে, তথ্য গোপন করে একাধিকবার জমি বিক্রি করায় সরল বিশ্বাসে ওই জমি ক্রয় করে আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আইনি প্রতিকার চেয়ে আদালতের দারস্থ হয়েছি।
একই জমি একাধিকবার বিক্রির বিষয়ে অছিম উদ্দিনের ছেলে আনছার আলী, আফছার আলী এবং মোসা মিয়া জানান, ‘বাবা মারা গেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে আসল কথা বলতে পারতেন। তবে, একই জমি একাধিকবার বিক্রির বিষয়ে আমরা পরে জানতে পেরেছি।’
একই জমি একাধিকবার বিক্রির বিষয়ে আকবর আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। জমি বিষয়ে কোনো কথাও বলতে চাই না।
Discussion about this post