দেলোয়ার হোসেন রাজিবঃ
আজ ১২ই রবিউল আউয়াল ”পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)” । প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের আজকের দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শুভ আগম ঘটে । দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাঃ) নামে পরিচিত ।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল । ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে পৌত্তলিকতায় নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল । আরব উপদ্বীপের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা । এ যুগকে বলা হয় “আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগ” বা “অন্ধকারের যুগ” ।
মানব জাতীকে এই অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতেই বিশ্ব নবীর আগমন হয় ।
বাল্যকালে নবী(সাঃ) আল আমিন উপাধি লাভ করেন । যখন মানুষ একজন আরেকজনকে ঠকানোতে মত্ত ছিল,ঠিক তখনই নবীজি আমানত রক্ষা ও বিশ্বস্থতার প্রতীক হিসেবে স্বগোত্র সহ আশে পাশের মানুষদের কাছে আল আমিন বা বিশ্বাসী বলে পরিচিতি লাভ করেন । বর্তমানে আমরা এমন একটা ক্রান্তিলগ্ন পার করছি যে সমাজে মহানবীর এই গুণটা তরুণ,যুবক,বৃদ্ধদের চরিত্রে ধারণ করা অতিব জরুরী ।
যুবক মুহাম্মদ (সাঃ) উনার চাচা আবু তালিব এর সাথে ব্যবসা করেছেন,মেষ চড়িয়েছেন । বিবি খাদিজার চাকুরী করেছেন । অথচ বর্তমান প্রজন্ম কৃষিকাজ ও ব্যবসাকে পেশা হিসেবে ছোট মনে করে আসছে । আল্লাহ পবিত্র কুরআনেও কৃষি কাজ ও ব্যবসাকে হালার পেশা হিসেবে উল্লেখ করে সম্মানীত করেছেন ।
মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স যখন ২৫ বছর তখন তিনি বিবি খাদিজার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । নবীর বিবাহ থেকেও আমাদের জীবনে কিছু শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি !
বর্তমান সমাজের পুরুষেরা আর্থিক সচ্ছলতার নিশ্চয়তাই মাথার চুল পকিয়ে ফেলছে তবু বিবাহ করছে না,অথচ নবীর বিবাহের সময় বয়স ছিল ২৫ বছর । আমাদের পুরুষেরা বিধবা বিবাহে অনিচ্ছুক । অথচ নবীজি বিধবা বিবাহ করে বিধবাদের প্রতি সদাচারণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন । আমাদের পুরুষ সমাজ বয়সে বড় মহিলা বিবাহ করতে ইচ্ছুক নয়,কিন্তু নবীজি বিবি খাদিজাকে বিবাহের মাধ্যমে এই ট্যাবু দূর করার শিক্ষা দিয়ে গেছেন । তিনি অসহায় নারীকে বিবাহের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা দিয়েছেন ।
৪০ বছরে মুহাম্মদ (সাঃ) যখন নবুয়াত লাভ করেন,তখন মহিলাদের মধ্যে সর্ব প্রথম উনার স্ত্রী বিবি খাদিজা ইসলাম গ্রহণ করেন । নবীজির স্ত্রী আম্মাজান খাদিজা (রাঃ) থেকে স্বামীর প্রতি আস্থাশীল হওয়ার শিক্ষা আমাদের মা বোনদের গ্রহণ করতে হবে ।
নবীজি ও উনার বন্ধু আবু বকর থেকে বন্ধুত্বের তাৎপর্যের শিক্ষা আমরা পেতে পারি । বন্ধুত্ব মানে ঠকানো নয়,আনন্দের সাথি নয় । বন্ধুত্ব মানে বিশ্বাস,আস্থা ও ভালোবাসা । বন্ধু আবু বকরের ভালোবাসাই খুশি হয়ে নবীজি আবু বকরকে খোলাফায়ে রাশিদার প্রথম খলিফা হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে গিছেন ।
নবুয়াত লাভের পর নবী (সাঃ) ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে কাফেরদের থেকে অত্যাচারিত হয়ে মক্কা থেকে মদিনাতে হিজরত করেন । তিনি ইসলামের আলো প্রচারে চুপ হয়ে যান নি । আখেরি জামানায় এসে আমরা সময়ের দূষ দিয়ে কত পাপ করে যাচ্ছি । সময়ের দোহাই ও সঙ্গ দূষে নিজেদের পাপ থেকে বিরত রাখতে অপারগতা দেখাচ্ছি । নবীর শিক্ষা কিন্তু এটা ছিল না ।
তিনি কালিমার দাওয়াত দেয়ার দ্বায়িত্ব তার উম্মতদের উপর অর্পণ করে গেছেন । পাপ থেকে বিরত থাকতে বলে গেছেন । নামাজকে বেহেস্তের চাবি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন । রমজানের রোজার ফজিলত শিখিয়েছেন । সামর্থ থাকলে হজ্ব ও যাকাত আদায় করতে বলেছেন ।
নারী কিংবা সস্পদের মধ্যে সুখ নয় । নবীর শিক্ষা মান্য করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ । আজকের দিনে আমাদের অঙ্গিকার হোক কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে আমাদের জীবন পরিচালনা করার । বিশ্ব নবীর শিক্ষা সমাজে প্রতিষ্ঠা করার । হালাল রিজিকের সন্ধ্যান করার । বিবির প্রতি সদাচারণ করার । সমাজ থেকে হিংসা বিদ্বেষ দূর করে সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করার ।
সালাম ইয়া নাবী ।
শুভ জন্মদিন উম্মতের কান্ডারী নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) ।
Discussion about this post