এস.এম আরিফুল ইসলাম আরিফ,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের সদর উপজেলার চাকলাপাড়ার মহিষাকুন্ডু আদিবাসী সরদার পূজা মন্দিরসহ কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর করেছে এলাকার মাদক ব্যবসায়ি ও সন্ত্রাসীরা । এসময় মন্দিরের ভিতরে থাকা পূজা অর্চণার জিনিসপত্র,আসবাবপত্র ও কালীপ্রতিমার গায়ে থাকা দুই ভরি স্বর্ণের গহনা লুটের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেলা পুজা উদযাপন হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় লোকজন। এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতংক দেখা গেছে। ভাংচুরের ব্যাপারে চাকলাপাড় মন্দিরের তত্বাবধায়ক শ্রী চান্দু কর্মকার বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি এজাহার দাখিলের পর আসামীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
এজাহার ভুক্ত আসামীরা হচ্ছে চাকলাপাড়া এলাকার মৃত শহিদুল মাষ্টারের ছেলে মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ সোহেল ওরফে পলতে সোহেল (২৯), হাসেম আলীর পুত্র হাসিব (২৬), মহিষাকুন্ডুর নুরুল আমিনের ছেলে মারুফ (২৭) , দেলোয়ার তালুকদারের ছেলে রতন তালুকদার (২৫), চাকলাপাড়ার আজাদের ছেলে সজিব (৩২), রকেট-আরিফ (২৮), মহিষাকুন্ডর তোতার ছেলে লতা (২৮), চাকলাপাড়া আঃ গফুরের ছেলে ডরপন( ২৪) সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
মহিষাকুন্ডু আদিবাসী সরদার পূজা মন্দির কমিটির সদস্য বাদী শ্রী চান্দু কর্মকার এজাহারে উল্লেখ করেন যে তিনি কালী মন্দিরটি দেখা-শুনা করেন। আসামীরা সকলেই মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক সেবী, ধর্ষণ সহ একাধিক মামলার আসামি তারা। আসামীরা প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার পরে মন্দিরের সামনে মাদক ক্রয়-বিক্রয় করে এবং মাদক সেবন করে মাতলামী করে।
গত ১৫/০৫/২০২১ইং তারিখে সন্ধ্যার পরে আসামীগণ আমাদের পাড়ার পূজা মন্দিরের সামনে পুকুরপাড়ে মাদক ক্রয়-বিক্রয় করার সময় মহিষাকুন্ডু গ্রামের প্রশান্ত সরকারের ছেলে অমিত সরকার(১৯) আসামীদের নিষেধ করিলে আসামীরা অমিতকে মারধর করে। পরে আমি সহ এলাকার স্থানীয় লোকজন এবং সাবেক কমিশনার আওয়ামীলীগনেতা তরিকুল ইসলাম তারিকের নিকট বিচার দিলে তিনি স্থানীয়ভাবে শালিস করে বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। আমি বিচার চাওয়ায় আসামীরা আমাকে প্রানে মেরে ফেলাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়।
গত ১৬/০৫/২০২১ ইং তারিখে রাত অনুমান সাড়ে আটটার সময় আমি মন্দিরের সামনে বসে থাকাবস্থায় পূর্বের আক্রোশে উল্লেখিত আসামীগণ সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৮/১০জন আসামীগণ দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূজা মন্দিরে এসে আমার উপর অর্তকিতভাবে হামলা করে এলোপাতাড়ীভাবে পিটিয়ে ফোলা ও দেবনাযুক্ত যখম করে। আমি দৌড় দিয়ে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করি। এরপর আসামীরা পূজা মন্দিরসহ মন্দিরের ভিতর থাকা একটি মা কালী প্রতিমা ভাংচুর করে অনুমান ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা ক্ষতি সাধন করে ও মা কালী প্রতিমার গায়ে থাকা অনুমান ২ভরি স্বর্ণের গহনা মূল্য ১,৪০,০০০/-টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসলে আসামীরা খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায়।
ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির ও ভাংচুরকৃত কালী প্রতিমা সকালে পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদের জেলার হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ সুবীর সমাদ্দার বাবু, সদর থানা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম গাঙ্গুলী, ঐক্য পরিষদের নেতা সুশান্ত সরকার, সাধন সরকার, প্রসেনজিৎ ঘোষ সিপন প্রমুখ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর সমাদ্দার এবং মন্দির পরিদর্শনকারী নেতৃবৃন্দ বলেন, বহু বছর ধরে এ মন্দিরে পূজা অর্চনা করে আসছে। অতীতে কখনও এখানে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত।আমি এবং আমরা এ ন্যাক্কার জনক ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা এবং জড়িত মাদক ব্যবসায়ি,সন্ত্রাসী দৃর্বৃত্তদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন নেতৃবৃন্দ।
Discussion about this post