মোঃ আমিনুর রহমান ,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
সারা দেশে ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ফলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবারসহ প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নদীর পাড়ের হাজার হাজর মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য চাল বরাদ্দ করা হলেও এখনও অধিকাংশ পানিবন্দি পরিবার ত্রাণ সহায়তা পায়নি বলে জানা গেছে।
গত রবিবার বিকাল ৪টায় তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫৩ সেন্টিমিটার) মাত্র ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২.৬০ সেন্টিমামিটার)। এর আগে শনিবার রাতে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
জানা যায়, ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ৬ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী ও সদরের ১০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষ কাজকর্ম করতে না পারায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। স্কুল-কলেজ ডুবে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও পোষাপ্রাণী গরু, ছাগল, হাস মুরগী নিয়েও অসহায় অবস্থায় রয়েছেন তিস্তা পাড়ের লোকজন।
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবারসহ নগদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। নদীভাঙ্গনে জিও ব্যাগ ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ দিকে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ, সিঙ্গীমারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউনিয়ন, পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছা, রাজপুরসহ তিস্তা নদীর তীরবর্তীতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, গত কয়েকদিনে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পরেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোক দিনমজুর ও মৎস্যজীবী হওয়ায় অনেকেই খাদ্য সংকটে ভুগছে। এখন পর্যন্ত কোন ত্রান-সাহায্য পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাইদুল ইসলামে সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার তা বিতরণও শেষ হয়েছে। বন্যা কবলিত যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, গতকালের চেয়ে আজ তিস্তা ও ধরলার পানি বেড়ে বিপৎসীমার লেবেলে উঠা-নামার মধ্যে রয়েছে। নদীভাঙ্গন রোধে বিভিন্ন যায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post